'ফেলুদা' চরিত্রে অভিনয়ের জন্য সত্যজিৎ রায়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চন!
বিশ্বনন্দিত লেখক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি তার গোয়েন্দা চরিত্র 'ফেলুদা।' ফেলুদা বাঙালির অতি পরিচিত ও প্রিয় এক নাম। অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে পাঠক-দর্শকদের আনন্দ দিয়ে আসছে ফেলুদাকে নিয়ে লেখা গল্প ও চলচ্চিত্রগুলো। রহস্যরোমাঞ্চ উপন্যাসের প্রতি বাঙালির যে তীব্র আকর্ষণ, তার পেছনে সত্যজিৎ রায়ের অবদান সবচেয়ে বেশি।
ফেলুদা এক বাঙালি প্রাইভেট ডিটেক্টিভ বা গোয়েন্দা। তার নেশা হলো গোয়েন্দাগিরি আর চারমিনার! ছয় ফুট লম্বা-চওড়া, স্বাস্থ্যবান এক যুবক, যার গলার স্বরে ঝরে পড়ছে বুদ্ধির তীক্ষ্ণতা, যার রসবোধ দুর্দান্ত, যিনি ভীষণ সৎ, যুক্তিবাদী এবং অবিশ্বাস্যরকম ভালো স্মৃতিশক্তির অধিকারী- এই হলো প্রাইভেট ডিটেক্টিভ ফেলুদা। ছেলেবুড়ো সকল বয়সের মানুষের কাছে ফেলুদা প্রিয়, সবাই তার অ্যাডভেঞ্চারগুলো পড়তে ও দেখতে ভালোবাসেন। তাদের কাছে ফেলুদা এক রোল মডেল। ফেলুদার বই পড়ে তার মতো অ্যাডভেঞ্চারের নেশায় ছুটতে চায়নি কিংবা একদিনের জন্যেও তার সহকারী হতে চায়নি, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া মুশকিল!
সত্যজিৎ রায় ফেলুদাকে শুধুমাত্র বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ রাখতে চাননি। তিনি নিজে ফেলুদাকে নিয়ে দুটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছিলেন- সোনার কেল্লা এবং জয় বাবা ফেলুনাথ। এরপর তার ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের পরিচালনায়, ফেলুদার গল্পগুলোকে উপজীব্য করে নির্মিত হয়েছে বেশকিছু সিনেমা, সেগুলোও ভক্তদের মধ্যে দারুণ জনপ্রিয়। এযাবত বহু পরিচালকই ফেলুদার মূল গল্প ঠিক রেখে তাকে নিয়ে সিনেমা-সিরিজ নির্মাণ করেছেন। হালে সৃজিত মুখার্জি নির্মাণ করেছেন ফেলুদাকে নিয়ে ওয়েব সিরিজ 'ফেলুদা ফেরত' এবং 'ফেলুদার গোয়েন্দাগিরি।'
সত্যজিৎ রায় তার দুটি ছবিতে ফেলুদা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়কে। অন্যদিকে, দীর্ঘদিন যাবত সন্দ্বীপ রায়ের 'ফেলুদা' ছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। আবার সৃজিত মুখার্জির সিরিজে ফেলুদার চরিত্রে দেখা গেছে টোটা রায়চৌধুরীকে। ফেলুদার চরিত্রে কোন অভিনেতা সবচেয়ে জনপ্রিয় তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে বিস্তর। তবে প্রদোষ চন্দ্র মিত্র ওরফে ফেলুদা'র খ্যাতি ছড়িয়ে গেছে বাংলার বাইরেও।
তবে যে তথ্য অনেকেই জানেন না তা হলো, সত্যজিৎ রায় বলিউডের সেই সময়কার হার্টথ্রব অভিনেতা অমিতাভ বচ্চনকেও ফেলুদার ভূমিকায় অভিনয় করাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু অমিতাভের ব্যক্তিগত শিডিউল না মেলায় অবশেষে তা আর সম্ভব হয়নি।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে সত্যজিৎ রায় ফেলুদার গল্পগুলোর উপর ভিত্তি করে 'সত্যজিৎ রায় প্রেজেন্টস' নামক একটি টিভি সিরিজ নির্মাণ করতে চেয়েছিলেন। আর এই সিরিজেই তিনি 'ফেলুদা'র ভূমিকায় রাখতে চেয়েছিলেন অমিতাভ বচ্চনকে। প্রাথমিকভাবে অমিতাভের সাথে কথাও হয় সত্যজিতের। 'যত কান্ড কাঠমান্ডুতে' অবলম্বনে হিন্দি সিরিজ 'কিসসা কাঠমান্ডু কা'-এর কাজ শুরু করার কথা ছিল তার।
কিন্তু এ সিরিজের অভিনয়ের জন্য নায়ক-কলাকুশলী, পরিচালক সবাইকে শ্যুটিং এর জন্য যেতে হতো নেপালে এবং লম্বা সময় ধরে সেখানের বিভিন্ন লোকেশনে শ্যুটিং করতে হতো। কিন্তু অমিতাভ বচ্চন তখন ছিলেন ক্যারিয়ারের শীর্ষে, অন্যান্য হিন্দি সিনেমার প্রচুর কাজ জমে ছিল তার হাতে। তাই বাধ্য হয়ে সত্যজিৎ রায়কে 'না' বলে দেন অমিতাভ। পরে সেই চরিত্রে অভিনয় করেন শশী কাপুর।
এরপরে আর সত্যজিৎ রায়ের সাথে বড় কোনো ভূমিকায় কাজ করা হয়ে ওঠেনি অমিতাভ বচ্চনের। সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'শতরঞ্জ কি খি্লাড়ি' সিনেমায় শুধুমাত্র কন্ঠ দেওয়ার কাজ করেছিলেন অমিতাভ।
একইভাবে, বাংলা চলচ্চিত্রের মহানায়ক উত্তম কুমারকেও একবার সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে হয়েছিল। 'ঘরে বাইরে' চলচ্চিত্রে 'সন্দ্বীপ' এর চরিত্রে অভিনয়ের জন্য প্রথমে উত্তম কুমারকেই প্রস্তাব দিয়েছিলেন সত্যজিৎ। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে উত্তমের আর সেখানে অভিনয় করা হয়নি। শেষ পর্যন্ত ছবিটিতে নিখিলেশের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন ভিক্টর ব্যানার্জি এবং সন্দ্বীপের ভূমিকায় ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
সূত্র: গেট বেঙ্গল