ইউক্রেন থেকে দেশে পৌঁছালো ৫২ হাজার টন গম
সরকারি উদ্যোগে আমদানি করা ৫২ হাজার ৫০০ টন গম নিয়ে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ 'ম্যাগনাম ফরচুন' চট্টগ্রাম বন্দরে বহির্নােঙ্গরে এসে পৌঁছেছে।
এর মধ্য দিয়ে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে প্রথম কোনো খাদ্যপণ্যের জাহাজ বাংলাদেশে পৌঁছালো।
বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের বলেন, 'বুধবার বিকেলে জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নােঙ্গরে এসে পৌঁছেছে। আজ আমরা নমুনা সংগ্রহ করেছি। যাচাই বাছাই শেষে সব কিছু ঠিক থাকলে গম খালাসের বিশেষায়িত সাইলো জেটিতে ভিড়বে ইউক্রেনের জাহাজ 'ম্যাগনাম ফরচুন'।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন উপকূলের কাছে কৃষ্ণসাগরে রাশিয়া নৌ অবরোধ দিলে ইউক্রেনের খাদ্য রপ্তানি মুখ থুবড়ে পড়ে। এর ফলে বিশ্বজুড়েই খাদ্যসংকট দেখা দিতে শুরু করে; দরিদ্র দেশ বিশেষ রাশিয়া-ইউক্রেন খাদ্য ভাণ্ডারের ওপর নির্ভরশীল দেশগুলো সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে। এতে খাদ্যপণ্যের দাম হু হু বাড়তে শুরু করে। পরে রাশিয়া-ইউক্রেনের সঙ্গে তুরস্ক মধ্যস্থতায় গত আগস্ট মাস থেকে খাদ্য রপ্তানি শুরুর সমঝোতা হয়।
ইউক্রেন অ্যাগ্রো কনসাল্ট ডটকমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২৮ সেপ্টেম্বর আফ্রিকা, এশিয়া এবং ইউরোপের দেশগুলোর জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার টন কৃষিপণ্য নিয়ে চারটি জাহাজ ইউক্রেনের চারনোমরোস্ক ও ইউঝনি বন্দর ছেড়ে আসে। এর মধ্যে চারনোমরোস্ক বন্দর থেকে ম্যাগনা ফরচুন জাহাজটি ৫২ হাজার ৫০০ টন গম নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।
চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুল কাদের দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন থেকে আসা এটি প্রথম খাদ্যবাহী জাহাজ। সরকারি উদ্যোগেই এই গম জিটুজি ভিত্তিতে কেনা হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। এর আগে গত ১৩ অক্টোবর রাশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছয় ৫২ হাজার টন গমবাহী জাহাজ 'সিলাক-২'। ইউক্রেনের জাহাজের পর রাশিয়া থেকেও গমের চালান চট্টগ্রামে পৌঁছবে।'
খাদ্য মজুত নিশ্চিত করতে সরকার দ্রুততার সঙ্গে চাল-গম সরকারি উদ্যোগে আনার পদক্ষেপ নিয়েছে। এর মধ্যে ১১ লাখ টন চাল সরকারি উদ্যোগে আমদানি হচ্ছে। আর বেসরকারি উদ্যোগে ১৩ লাখ টন চাল আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ব্যবসায়িদের।
একইসঙ্গে সরকারিভাবে রাশিয়া থেকে ৫ লাখ টন গম আমদানির অনুমোদন দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সেই অনুমতির প্রথম চালানে ৫২ হাজার টন গম নিয়ে রাশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছায় ১৩ অক্টোবর।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, সরকারি খাদ্য গুদামে গতকাল বুধবার (৯ নভেম্বর) পর্যন্ত দেশে গমের মজুত আছে ২ লাখ ১৩ হাজার ১৬ টন; যা স্বাভাবিকের চাইতে কম।
গম বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। দেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ টন গমের চাহিদা রয়েছে। ১০ লাখ টন গম দেশেই উৎপাদিত হয়। অবশিষ্ট চাহিদা ভারত, রাশিয়া, ইউক্রেন, কানাডা, আর্জেন্টিনা এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করে মেটানো হয়, যার সিংহভাগই বেসরকারি খাতে আমদানি করা হয়।
খাদ্য অধিদপ্তরের হিসাবে সরকার মাত্র পাঁচ লাখ টন গম আমদানি করেই চাহিদা মেটায়। বাকি ৬০ লাখ টন গম বেসরকারি উদ্যোগে আমদানি হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট গম আমদানির ৬৩ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন, ১৮ শতাংশ কানাডা এবং বাকিটা যুক্তরাষ্ট্র, আর্জেন্টিনা, অস্ট্রেলিয়াসহ আটটি দেশ থেকে আমদানি করে। ২০২০-২১ অর্থবছরে বাংলাদেশে আমদানি হওয়া মোট গমের ৪৫ শতাংশ রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে, ২৩ শতাংশ কানাডা থেকে, ১৭ শতাংশ ভারত থেকে এবং বাকিটা অন্য কয়েকটি দেশ থেকে এসেছে।
রাশিয়া গত ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ দিকে ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর দেশ দুটি থেকে বাংলাদেশে গম আমদানি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা ভারত থেকে আমদানি বাড়িয়ে দেন। দেশটি গত মে মাসে গম রপ্তানি বন্ধ ঘোষণা করে। এতে বাংলাদেশের বাজারে গমের দাম বেড়ে যায়।