খুচরা বিদ্যুতের দাম ১৫.৪৩% বাড়ানোর সুপারিশ বিইআরসি’র
বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কারিগরি কমিটি খুচরা বিদ্যুতের দাম ১৫.৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।
ছয়টি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের শুল্ক প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই সুপারিশ করা হয়।
আজ রোববার (৮ জানুয়ারি) ঢাকার বিয়াম মিলনায়তনে এ বিষয়ে দিনব্যাপী গণশুনানি শুরু হয়েছে।
এদিকে, ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এবং দেশের হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছে।
বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির পর খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর বিষয়ে যে ছয় রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থা তাদের নিজ নিজ প্রস্তাবনা পেশ করেছে- বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি লিমিটেড (ডেস্কো), নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি পিএলএস (নেসকো), ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডব্লিউজেডপিডিসিএল)।
সংস্থাগুলো খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক প্রায় ২০ শতাংশ বাড়ানোর জন্য প্রায় একইরকম প্রস্তাব দিয়েছে।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে কার্যকরীভাবে বাল্ক বিদ্যুতে ১৯.৯২ শতাংশ শুল্ক বাড়ানোর বিইআরসির সিদ্ধান্তের পর, সংস্থাগুলো তাদের প্রস্তাব জমা দেয়।
সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক বছরে দেশের বিদ্যুৎ খাতের প্রধান সংস্থা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ডের (বিপিডিবি) আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ১৮ হাজার ৯৪ কোটি টাকা বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
বিপিডিবির নিজস্ব সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, আর্থিক ক্ষতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ২৯ হাজার ৯১৫ কোটি টাকা থেকে ৬৭ শতাংশ বেড়ে ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৪৮ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।
সূত্র জানায়, বেশি দামে বিদ্যুৎ কিনে কম দামে বিক্রি, পেট্রোলিয়াম জ্বালানির দাম বৃদ্ধি এবং মার্কিন ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বিপিডিবির রাজস্ব ঘাটতি আরও বেড়েছে।
কর্মকর্তারা বলছেন, বাল্ক শুল্কের সাম্প্রতিক ১৯.৯২ শতাংশ বৃদ্ধি বিপিডিবিকে মাত্র ৫ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি কমাতে সাহায্য করতে পারে। এরপরেও থেকে যাবে এক বিশাল রাজস্ব ঘাটতি।
অন্যদিকে, বাল্ক বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ বিতরণকারী সংস্থাগুলো তাদের নিজেদের রাজস্ব ঘাটতি পূরণে খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক বৃদ্ধির করতে প্রস্তাব জমা দিয়েছে বিইআরসির কাছে।
২০২০ সালের মার্চে এক গণশুনানির মাধ্যমে সর্বশেষ খুচরা বিদ্যুতের শুল্ক বাড়িয়েছিল বিইআরসি।
এক ঘোষণায় বিইআরসি ১ মার্চ, ২০২০ থেকে কার্যকরভাবে খুচরা পর্যায়ে গড়ে ৫.৩ শতাংশ বাড়িয়েছিল বিদ্যুতের দাম।
সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, খুচরা বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট (প্রতি কিলোওয়াট-ঘণ্টা) ৬.৭৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭.১৩ টাকা করা হয়।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বিশাল আর্থিক ক্ষতি পূরণে বাল্ক (পাইকারি) এবং খুচরা বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের কাছ থেকে প্রচণ্ড চাপে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ।
এই বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলার ঋণের যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে, মূলত এতেই চাপ বেড়েছে বিদ্যুৎ বিভাগের ওপর। কারণ দাতা সংস্থাটি বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি কমিয়ে লোকসান মেটাতে বিদ্যুতের শুল্ক বাড়ানোর শর্ত দিয়েছে।