আমদানি ব্যয় কমাতে অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি করতে চায় বিপিসি
রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ও দেশের একমাত্র জ্বালানি তেল আমদানিকারক– বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) চলমান ডলার সংকটের মধ্যে– জ্বালানি আমদানির ব্যয় কমাতে, অধিক সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি করতে চায়।
বিপিসির একজন শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, সংস্থাটি প্রতিব্যারেল ডিজেল আমদানিতে ৩ ডলার সাশ্রয় করতে, বর্তমানের ৫০ পার্টস পার মিলিয়ন (পিপিএম) এর পরিবর্তে ৫০০ পিপিএম এর বেশি মাত্রার সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানির কথা ভাবছে।
এই পদক্ষেপের মাধ্যমে, দেশের ডিজেলের মোট চাহিদার অন্তত অর্ধেক যদি অধিক সালফারযুক্ত আমদানি করা যায়– তাহলে ভ্যাট ও আমদানি শুল্ক বাদে চলতি বছরে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় করা যাবে বলে নাম না প্রকাশের শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান তিনি।
ডিজেলে বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) নির্ধারিত সালফারের মানমাত্রা (৩৫০ পিপিএম) শিথিল করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করেছে বিপিসি। বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে আলোচনার জন্য সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞদের সাথে একটি সভাও করবে।
তবে এনিয়ে উদ্বেগ দেখা যাচ্ছে, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও পরিবেশবিদদের মধ্যে। তারা বলছেন, এতে করে আরও বেশি বায়ু ও পরিবেশদূষণ হবে।
তাদের মতে, অধিক দূষণকারী জ্বালানি আমদানির বদলে– আমদানি ব্যয় সাশ্রয়ে খুচরা পর্যায়ে ডিজেল, অকটেন ও কেরোসিনের দাম সমন্বয় করতে পারে বিপিসি।
প্রসঙ্গত, বর্তমানে বিপিসি ৫০ পিপিএম সালফারযুক্ত ডিজেল আমদানি করছে।
সাধারণত, ডিজেলে সালফারের মাত্রা যত কম হয়, এটি ততোটা পরিবেশবান্ধব (কম দূষণকারী) হয়, কিন্তু অধিক সালফারযুক্ত ডিজেলের চেয়ে এর দামও বেশি।
বর্তমানে ৫০ পিপিএম সালফারযুক্ত ডিজেলের দাম প্রতিব্যারেলে ১০১.০২ ডলার; যার বিপরীতে ৫০০ পিপিএম সালফারযুক্ত ডিজেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৯৮ ডলার।
সাধারণত প্রতিমাসে ১৫ থেকে ১৬টি চালানে প্রায় ৩০ হাজার টন করে প্রায় আড়াই লাখ ব্যারেল আমদানি করে বিপিসি। সংস্থাটি চলতি বছরে দেশে ৪৮ লাখ ৩০ হাজার ব্যারেল ডিজেল চাহিদার প্রাক্কলন করেছে।
এদিকে বুধবার (১১ জানুয়ারি) সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসের জন্য ২০.৪০ লাখ মেট্রিক টন পরিশোধিত পেট্রোলিয়াম ক্রয়ের অনুমতি দিয়েছে।
বিপিসির ওই কর্মকর্তা জানান, চাহিদার অর্ধেক যদি অধিক সালফারযুক্ত ডিজেলের মাধ্যমে পূরণ করা হয়, তাহলে ৬০০ কোটি টাকা সাশ্রয় হবে, যা অর্থনৈতিক এ সংকটকালে নিত্যপণ্য আমদানিতে ব্যয় করা যাবে।
বিএসটিআই- এর পেট্রোলিয়াম কমিটির সভাপতি ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নবিদ্যার অধ্যাপক তপন কুমার সাহা বলেন, 'বিএসটিআই আন্তর্জাতিক বেস্ট প্র্যাকটিস পর্যালোচনাসহ বিভিন্ন তথ্যউপাত্ত গ্রহণ করে ডিজেলে সালফারের মান নির্ধারণ করে'।
তিনি বলেন, ডিজেলে সালফারের উপস্থিতি যত কম থাকবে– তা পরিবেশ, যানবাহন ও শিল্পের জন্য ততোই ভালো। জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলো ১০-১৫ পিপিএম সালফারযুক্ত ডিজেল ব্যবহার করে।
'তবে চলমান অর্থনৈতিক সংকট এবং আমদানির আরও সস্তা উপায় নিয়ে বৃহস্পতিবারের সভায় বিস্তারিত আলোচনা হবে' বলে বুধবার তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান।
পরিবেশবিদ সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান অবশ্য জোর দিয়েই বলেছেন যে, বাংলাদেশের বাতাস আর দূষণ সহ্য করার মতো অবস্থায় নেই। কারণ এরমধ্যেই তা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অবস্থায় রয়েছে, যেকারণে প্রতিবছর প্রায় ২ লাখ মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
তাই কর্তৃপক্ষের কাছে এই প্রস্তাব বাতিলের আহ্বান জানান তিনি।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব জাকিয়া সুলতানা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেছেন, তারা এই প্রস্তাব পেয়েছেন, তবে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
তিনি বলেন, 'এটা একটা টেকনিক্যাল বিষয়, প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করতে বৃহস্পতিবার বিশেষজ্ঞ ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সাথে একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে'।