দেশের সংস্কার উদ্যোগ ব্যাহত করে প্রভাবশালী মহল: সানেম
ক্ষমতাধর মহলের অযৌক্তিক প্রভাবের কারণে বাংলাদেশের পক্ষে অর্থনৈতিক খাতে সংস্কার সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদেরা।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণের সঙ্গে পাওয়া সংস্কারের শর্তগুলো এবারও বাংলাদেশ আদৌ বাস্তবায়ন করতে পারবে কি-না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন তারা।
শনিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকার ব্রাক সেন্টার ইন-এ সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)-এর ৬ষ্ঠ অর্থনৈতিক কনফারেন্সে এ পর্যবক্ষণের কথা জানান অর্থনীতিবিদেরা।
নতুন কর্মসংস্থান না হওয়া ও বৈষম্য হ্রাস না পাওয়ায় দেশের প্রবৃদ্ধির মান নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তারা।
সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হানের এক গবেষণাপত্র উপস্থাপনের পর এ আলোচনা করেন অর্থনীতিবিদেরা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলো তৈরি হয়েছে কাঠামোগত দুর্বলতা, দশকের পর দশক ধরে সংস্কার বিষয়ে অজ্ঞতা ও আগ্রহের অভাব থেকে।
সেলিম রায়হান বলেন, এসব সংস্কারের উদ্দেশ্য নিয়ে দেশের সরকার ও জনগণের কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। কিছু বিশেষ মহল সংস্কার বাস্তবায়নের বিরুদ্ধে।
'আমাদের এখানে অনেকেই আছেন যারা সংস্কার বিষয়ে ভীষণ আগ্রহী, কিন্তু তারা অতটা প্রভাবশালী নন। অন্যদিকে, কিছু অ্যাক্টর আছেন যারা তুমুল প্রভাবশালী কিন্তু সংস্কার নিয়ে তাদের আগ্রহ খুবই কম,' বলেন তিনি।
ব্রাক ও পিপিআরসি'র চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমানও মনে করেন প্রভাবশালী লোকেরা সংস্কারের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
'বাংলাদেশের সমস্যা হলো, এখানকার প্রভাবশালী মানুষদের ব্যক্তিগত স্বার্থবোধটা বেশি। সে কারণে সংস্কার নিয়ে তাদের কোনো আগ্রহ নেই,' জিল্লুর বলেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক কাঠামোগত সমস্যা রয়েছে এবং এসব বিষয়ে তারা অনেক আলোচনা করেছেন। কিন্তু নীতিনির্ধারকেরা এসব সমস্যার সমাধানে খুব একটা আগ্রহ প্রকাশ করেননি,' তিনি বলেন।
বিশ্ব ব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, 'অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তির মূল উদ্দেশ্য হলো সম্পদের পাহাড় গড়া। তারা কোনো উৎপাদনশীল কাজে অংশ নেন না। এর ফলে সংস্কারের উদ্যোগ মন্থর হয়ে পড়ে।'
তিনি বলেন, নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ বাড়াতে চার বছর আগে বিশ্ব ব্যাংক জেন্ডার সংস্কারের প্রস্তাব জানায়। এ সংস্কারের অংশ হিসেবে ২০০৭ সালে মন্ত্রীসভা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র আইনের অনুমোদন দেয়। কিন্তু এ আইনের বাস্তবায়নের কথা সরকার ভুলে গেছে।