চট্টগ্রামে বেশিরভাগ কন্টেইনার ডিপোতে নেই অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা
চট্টগ্রামের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে ৫১ জন নিহত হওয়ার পরেও এখন পর্যন্ত বেশির ভাগ ডিপোতে ফায়ার সেইফটি বা অগ্নি নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করেনি ডিপো মালিকরা। মারাত্মক সেই বিস্ফোরণের ৯ মাস পেরিয়েছে ইতোমধ্যেই।
ডিপোগুলোতে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে চলমান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিদর্শনের ফলাফলে উঠে এসেছে এ তথ্য।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মালেক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রামের সকল কন্টেইনার ডিপোতে ফায়ার সেইফটির বিষয়টি সরেজমিনে পরিদর্শন চলছে। গত ১ সপ্তাহে আমি ১০টি ডিপো সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। এরমধ্যে ১টি ডিপো সেইফটি প্ল্যান শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে। একটি ডিপোর শতভাগ প্ল্যান বাস্তবায়ন শেষ পর্যায়ে। বাকি ৮টি ডিপোতে সেইফটি প্ল্যান থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।"
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক মোঃ আব্দুল হালিম জানান, "বেসরকারি ডিপোগুলোতে ফয়ার সেইফটি সিকিউরিটির সার্বিক পরিস্থিতি নিরূপণে তিনটি টিম কাজ করছে। আগামী সপ্তাহে এর প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।"
এর আগে, গত বছরের ৪ জুন বিএম ডিপোতে দুর্ঘটনার পর, একই মাসে সবকটি কন্টেইনার ডিপো পরিদর্শন করেছিল ফায়ার সার্ভিস। পরিদর্শনের সময় ফায়ার সেইফটি প্ল্যান অনুমোদন, ফায়ার সেইফটি নিশ্চিত করা, অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা জোরদার করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনার ৯ মাসেও বেশিরভাগ ডিপো কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানায় ফায়ার সার্ভিস।
চট্টগ্রামে ১৯টি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপো (আইসিডি) রয়েছে। এগুলোর মাধ্যমে প্রায় রপ্তানি চালানের প্রায় ৯৫ শতাংশ এবং ৩৮ ধরনের পণ্য আমদানি পরিচালনা করা হয়।
বেসরকারি ডিপোতে পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা না থাকায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন সম্প্রতি তিনটি কন্টেইনার ডিপোতে অভিযান চালিয়ে প্রতিটিকে ২ লাখ টাকা করে জরিমানা করেছে।
অভিযানকালে লাইসেন্স ছাড়া পেট্রোল পাম্প পরিচালনা,পর্যাপ্ত অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা না থাকা, ফায়ার সেইফটি প্ল্যান এবং ফায়ার হাইড্রেন্ট, ফায়ার সেইফটি প্ল্যান অনুমোদন বা বাস্তবায়ন না করাসহ বিভিন্ন অনিয়ম পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রতীক দত্ত বলেন, "অগ্নি দুর্ঘটনা কমাতে বেসরকারি কন্টেইনার ডিপোগুলোতে অভিযান চলছে। অভিযানে ডিপো কর্তৃপক্ষদের ফায়ার সেইফটি প্ল্যান বাস্তবায়নে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।"
আইসিডি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোটস (বিআইসিডিএ) সেক্রেটারি জেনারেল রুহুল আমিন শিকদার টিবিএসকে বলেন, "বিএম ডিপোর দুর্ঘটনার পর ডিপোগুলো সার্বিক অগ্নি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিতে কাজ করছে। যেসব ডিপোতে ফায়ার রিজার্ভার নেই, সেসব ডিপোগুলো আগামী আট থেকে নয় মাসের মধ্যে রিজার্ভার স্থাপন করবে।"
"এদিকে, যেসব ডিপো হাইড্রোজেন পার অক্সাইডসহ বিপজ্জনক কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে আইএমডিজি কোড অনুসরণ করছে না, সেসব ডিপোর লাইসেন্স বাতিলসহ আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে কাস্টমস। চট্টগ্রামের ১৯টি বেসরকারি ডিপোতে এ সংক্রান্ত চিঠি দিয়েছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে ডিপোগুলো রপ্তানির জন্য আসা হাইড্রোজেন পার অক্সাইড স্টাফিং কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে সমুদ্রপথে রাসায়নিক জাতীয় পণ্য রপ্তানি কার্যক্রম," যোগ করেন তিনি।