ঋণ নিয়ে দেশত্যাগ: যেভাবে ঋণ পরিশোধ করা এড়িয়ে যাচ্ছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা
বড় সংখ্যক ঋণ খেলাপির দেশত্যাগ করে বিদেশে বসবাসের ঘটনায় সংকটের মধ্যে পড়েছে চট্টগ্রামের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
ঋণদাতা ব্যাংকগুলো, শিল্পের অভ্যন্তরীণ, আইনজীবী ও আদালতের কর্মকর্তাদের মতে, গত এক দশকে প্রায় ২০ হাজার কোটি ঋণ নিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন চট্টগ্রামের ২২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ৩৩ কর্ণধার। এসব ব্যবসায়ীর মধ্যে ১১ জন রয়েছেন কানাডায়। ৬ জন লন্ডনে, ৪ জন যুক্তরাষ্ট্রে, ৩ জন মালেশিয়ায়, ৩ তিনজন সংযুক্ত আরব আমিরাতে, ২ জন তুরস্কে এবং ১ জন করে অস্ট্রেলিয়া, মন্টেনিগ্রো ও সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন। ৩৩তম ব্যক্তি কোথায় রয়েছেন তা জানা যায়নি।
এদের সবার বিরুদ্ধে আর্থিক ও চেক প্রত্যাখ্যান আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। ২৬ জনের বিরুদ্ধে রয়েছে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা। তবে নিষেধাজ্ঞার আগেই ১৩ জন এবং নিষেধাজ্ঞার পর অন্য ১৩ জন দেশত্যাগ করেন।
তাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানায়, এদের কেউ কেউ বিদেশে পাঁচ তারকা হোটেল, মানি এক্সচেঞ্জ, আবাসন, সুপার শপ ও পেট্রল পাম্পের মতো বিভিন্ন ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ না করেই দেশত্যাগী ব্যবসায়ীদের কাতারে সাম্প্রতিকতম সংযোজন হচ্ছেন মাহিন এন্টারপ্রাইজের কর্ণধার আশিকুর রহমান লস্কর। চট্টগ্রামের জাহাজভাঙ্গা শিল্পের এই ব্যবসায়ী ১০ ব্যাংকের থেকে ২,০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছেন।
তার আগে চট্টগ্রামের বনেদি ব্যবসায়ী পরিবার হাবিব গ্রুপের পাঁচ কর্ণধার গত বছরের শেষদিকে দেশত্যাগ করেন। ৩০ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে এই গ্রুপের দেনা প্রায় ৪,০০০ কোটি টাকার বেশি।
এসব ব্যবসায়ীদের অনেকেই একাধিক মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা এবং দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হন। যেমন- নূরজাহান গ্রুপের পরিচালক জহির আহমেদ রতন গত বছর তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পর দেশত্যাগ করেন। এক সময় ভোগ্যপণ্য, বিশেষত ভোজ্যতেল আমদানিতে দেশের অন্যতম প্রধান ব্যবসায়িক সত্ত্বা– এই গ্রুপটির কাছে বিভিন্ন ব্যাংকের পাওনা ২,৬০০ কোটি টাকারও বেশি।
জাহাজভাঙ্গা ও আবাসন খাতে ব্যবসা সম্প্রসারণের পর ২০০৮-০৯ সালে কয়েকটি ব্যাংকের থেকে ১,৫০০ কোটি টাকা ঋণ পায় মিশমাক গ্রুপ। তবে গ্রুপের কর্ণধার তিন ভাই ২০১৩ সালেই দেশ ছেড়ে চলে যান বলে জানা গেছে। বর্তমানে মিজানুর রহমান শাহীন এবং হুমায়ুন কবির পরিবার নিয়ে কানাডায় বসবাস করছেন। মুজিবুর রহমান মিলন রয়েছেন সিঙ্গাপুরে।
৫৫টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হওয়ার পরে ২০২০ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে পালিয়ে যান ভোক্তাপণ্য ও পোশাক খাতের ব্যবসায়ী ইমাম গ্রুপের মালিক মুহাম্মদ আলী। বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে প্রায় ৮০০ কোটি টাকা দেনা রয়েছে এই ব্যবসায়ীর।
এই ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ দেশ ছেড়ে চলে গেলেও তাদের কিছু ব্যবসা সচল রয়েছে। যেমন- মোস্তফা গ্রুপের বর্তমান মালিক তৈমুর রহমান জানান, ২০১২-১৫ অর্থবছরে ভোগ্যপণ্য ও জাহাজ ভাঙা খাতে বড় ধরনের লোকসানের কারণে তার প্রতিষ্ঠান সংকটে পড়ে। গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির উদ্দিন ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করে কানাডায় পাড়ি জমান।
তৈমুর বলেন, আমরা ঋণ পুনঃতফসিলের জন্য আদালত এবং পাওনাদার ব্যাংকগুলোর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছি। কিছু সম্পদ বিক্রি করে হলেও ব্যাংকের অর্থ সমন্বয় করে ব্যবসায় ফিরে আসার চেষ্টা করছি।
তৈরি পোশাক ও ফিশিংসহ বিভিন্ন খাতে ব্যবসা করে আসা ক্রিস্টাল গ্রুপের ব্যাংক ঋণের পরিমাণ প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। এই ঋণ শোধ না করে গ্রুপটির কর্ণধার মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিমের স্ত্রী মাহজাবীন মোরশেদ লন্ডনে, রাশেদ মুরাদ ইব্রাহিম এবং তার স্ত্রী কানিজ ফারজানা কানাডায় এবং ফয়সাল মুরাদ ইব্রাহিম এবং তাঁর স্ত্রী হুমাইরা করিম তুরস্কে পাড়ি জমান।
ক্রিস্টাল গ্রুপের বর্তমান কর্ণধার মোরশেদ মুরাদ ইব্রাহিম বলেন, 'পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হওয়ায় আমাদের মাসহ অনেকেই ক্রিস্টাল গ্রুপের কর্ণধার হিসেবে রয়েছি। ব্যবসায়ী পরিবার হিসেবে আমরা চাই, সংকট কাটিয়ে আবারো ব্যবসায় ফিরতে। ইতোমধ্যে আমরা কয়েকটি ব্যাংকে ঋণ অ্যাডজাস্ট (সমন্বয়) করেছি। আমাদের সম্পদের তুলনায় ঋণের পরিমাণ খুবই কম। সম্পত্তি বিকিকিনির মাধ্যমে বাকি ঋণ অ্যাডজাস্ট করতে আমাদের দেশে ফেরার কিংবা মুভমেন্ট করার সুযোগ থাকতে হবে। কিন্তু, আমাদের সেই সুযোগ যদি সীমিত হয়ে যায় তাহলে সংকট আরো বাড়বে।'
মন্দ ঋণের ছড়াছড়ি
উপরে আলোচিতরা ছাড়াও, আরো অনেকেই রয়েছেন যারা ব্যাংকের ঋণ নিয়ে পরিশোধ না করেই দেশত্যাগ করেছেন।
যেমন সীতাকুণ্ডের শাহ আমানত আয়রন মার্টের গিয়াস উদ্দিন কুসুম ৬০০ কোটি টাকা খেলাপি করার পর ২০১৫ সালে কানাডায় অভিবাসন করেছেন। ৫২৫ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করেই ২০১৭ সালে কানাডায় পাড়ি দেন লিজেন্ড হোল্ডিং এর স্বত্বাধিকারী এসএম আবদুল হাই।
৮ ব্যাংকের কাছে ৫০০ কোটি টাকা দেনা রেখে ২০১৮ সালে কানাডায় পাড়ি জমান বাদশা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসা বাদশা। ৬ ব্যাংক আর একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তা পরিশোধ না করেই ২০১৯ সালে দেশত্যাগ করেন নাম কর্পোরেশনের কর্ণধার আবদুল আলিম চৌধুরী।
এছাড়া, চার ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকা শোধ না করেই ২০১৫ সালে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান নাজমুল আবেদিন। এসব ঋণ তিনি নিয়েছিলেন তার কোম্পানিগুলোর নামে। ৮ ব্যাংকের থেকে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে গত চার বছর ধরে সস্ত্রীক মালয়েশিয়ায় গিয়ে রয়েছেন আলম অ্যান্ড কোং- এর শাহ আলম।
সিঅ্যান্ডএ গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ মোর্শেদ ২০১৮ সালে স্ত্রীকে নিয়ে পাড়ি জমান যুক্তরাষ্ট্রে, তিনি রেখে গেছেন ২৮০ কোটি টাকার ঋণ। এমএএফ ইন্টারন্যাশনালের মালিক মাকসুদুল আলম ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ায় চলে যান চার ব্যাংকের কাছে ২০০ কোটি টাকার অপরিশোধিত দেনা রেখে।
জাহিদ এন্টারপ্রাইজের পরিচালক জাহিদ হোসেন মিয়া বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ১৮৬ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করেই মালয়েশিয়া চলে যান। বাগদাদ গ্রুপের মালিক ফেরদৌস খান আলমগীর ২০২০ সালে পাঁচটি ব্যাংকের কাছে ১৫০ কোটি টাকা ঋণ রেখে কানাডা চলে যান।
চট্টগ্রামের ইফফাত ইন্টারন্যাশনালের মালিক দিদারুল আলম দুই ব্যাংক থেকে নেওয়া প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করে কানাডা চলে গেছেন। সার্ক ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী আনোয়ারুল হক চৌধুরী দুটি ব্যাংক থেকে নেওয়া ৭১ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়ে ২০১২ সালে সপরিবারে মালয়েশিয়া চলে যান।
এনএম ট্রেডিং কর্পোরেশনের মালিক এবং আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান এস এম শামীম ইকবাল ২০১৯ সালে তিনটি ব্যাংকের ৭০ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ না করে পরিবারের সাথে কানাডা চলে যান। খাতুনগঞ্জের এসএল এন্টারপ্রাইজের মালিক লিয়াকত আলী চৌধুরী ২০১২ সালে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ২০ কোটি টাকা পরিশোধ না করে লন্ডনে চলে যান।
২০১৩ সালে ছোলা আমদানিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষতির সম্মুখীন হয় খাতুনগঞ্জের ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ। এর মালিক মোহাম্মদ মোজাহের হোসেন ২০১৪ সালে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে নেওয়া ১,২০০ কোটি টাকার ঋণ পরিশোধ না করে কানাডা চলে যান বলে জানা গেছে।
গত বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি ঋণ আদায়ের জন্য দায়ী আদালত তিনটি ব্যাংকের দায়ের করা মামলায় মোজাহেরকে দেড় বছরের কারাদণ্ড দেন এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সম্প্রতি সরেজমিনে গিয়ে ইয়াসির এন্টারপ্রাইজের অফিস বন্ধ পাওয়া গেছে।
ম্যাক ইন্টারন্যাশনালের মালিক তিন ভাই ২০০৭ সালে ভোক্তা পণ্য খাত থেকে জাহাজ ভাঙার ব্যবসায় আসেন। বিশ্ববাজারে উত্থান-পতনের কারণে কোম্পানিটি যথেষ্ট ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এরপর জয়নাল আবেদিন তার পরিবার নিয়ে কানাডায় চলে যান, জামিল আবেদিন ২০১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেছেন।
বর্তমানে কোম্পানিটির কাছে ১২টি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৮০০ কোটি টাকার বেশি পাওনা রয়েছে।
কতিপয় সুবিধেপ্রাপ্তদের জন্য সহজে ঋণ-সুবিধা
এনসিসি ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট আলী তারেক পারভেজ বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের আগে চট্টগ্রামে ব্যাংক ঋণ প্রদানে নিয়ম-নীতিগুলো ভালোভাবে অনুসরণ করা হয়নি।
'ব্যাংকগুলোর টার্গেট পূরণ করতে গিয়ে ঋণ প্রদানে স্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা যেমন ছিল, একইভাবে ব্যাংক পরিচালক-উদ্যোক্তাদের সাথে ঋণ গ্রহীতাদের সম্পর্কের ভিত্তিতে ফোর্স লোন দেয়া হয়েছে। এতে কোনো কোনো ব্যবসায়ী লোকসানে পড়েন, আবার কেউ কেউ ইচ্ছেকৃতভাবে ব্যাংক ঋণ শোধ না করে দেশত্যাগ করেছেন'- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলছিলেন তিনি।
'এতজন ব্যবসায়ী দেশত্যাগ করায় এসব ঋণ উদ্ধারে ব্যাংক কর্মকর্তাদের এখন প্রতিদিন আদালতে দৌড়াতে হচ্ছে'।
জ্যেষ্ঠ এই ব্যাংকার মন্তব্য করেন, ব্যাংকের টাকা জনগণের আমানত, তাই এই টাকা উদ্ধারে খেলাপিদের দেশে ফেরত আনতে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদ্যোগ নিতে হবে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের নির্বাহী সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যাংকিং শাখার প্রধান সৈয়দ মাহমুদ আখতার বলেন, 'ব্যাংকগুলো এসব ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ নিয়মনীতি অনুসরণ করেনি। এতে কিছু ব্যবসায়ী লোকসানের মধ্যে পড়লেঅ, অন্যরা ইচ্ছে করে অর্থ আত্মসাৎ করে ব্যাংককে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছেন'।
'ব্যাংকগুলো এখন খেলাপিদের বিরুদ্ধে মামলা করছে, কিন্তু ইতোমধ্যেই তাদের অনেকে বিদেশে চলে গেছেন। ফলে তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া দুরূহ হয়ে পড়েছে' যোগ করেন তিনি।
কে আর গ্রুপের চেয়ারম্যান সেকান্দার হোসেন টিংকু বলেন, 'চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের সুনাম দীর্ঘদিনের। কিন্তু, সাম্প্রতিক সময়ে কিছু ব্যবসায়ীর ব্যাংক ঋণ শোধ না করে দেশত্যাগের ঘটনায় চট্টগ্রামের পুরো ব্যবসায়ী সমাজের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এক সময়, আমাদের কাছে বিনিয়োগ-ঋণ দিতে ধর্ণা দিতেন ব্যাংক কর্মকর্তারা। কিন্তু, এখন চট্টগ্রামের কোনো ব্যবসায়ীর ঋণ প্রস্তাব পাঠানো হলে ব্যাংকগুলোর প্রধান কার্য়ালয় থেকে সহজে অনুমোদন দিতে চায় না'।
আইনজ্ঞরা যা বলছেন
চট্টগ্রাম অর্থঋণ আদালতের বেঞ্চ সহকারী রেজাউল করিম জানান, আদালতের গ্রেফতারি পরোয়ানা ও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এমন ৩০-৩২ জন ব্যবসায়ী দেশের বাইরে রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা, দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং পাসপোর্ট জব্দ কিংবা স্বশরীরে আদালতে হাজির হওয়ার আদেশ রয়েছে।
যেসব ব্যবসায়ী আদেশের পরও হাজির হননি তারা আদালতে পলাতক হিসেবে বিবেচিত। এসব ব্যবসায়ীদের পক্ষে তাদের আইনজীবীরা মামলা পরিচালনা করছেন। কিন্তু, কোনো কোনো মামলায় বিবাদী হাজির না থাকায় একতরফা শুনানি ও রায়ের পক্ষে হাঁটছে আদালত। তবে এপর্যন্ত আদালতের কোনো আদেশ কার্যকর করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
অর্থ ঋণ আদালতের এই কর্মকর্তা বলেন, 'আমরা জেনেছি, নুরজাহান গ্রুপের পরিচালক ইতোমধ্যে দেশত্যাগ করেছেন। একারণেই কেউ আদালতের কোনো আদেশ প্রতিপালন করেননি'।
গত দুই বছরে চট্টগ্রামের অর্থ ঋণ আদালত প্রায় ১,৫০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ আদায় করেছে। এই সময়ে ৪,১৪৫ কোটি টাকার অর্থদাবি সম্পর্কিত ২,২৪১টি মামলার রায় ঘোষণা করা হয়।
অর্থঋণ আদালতের একজন অ্যাটর্নি আইনজীবী একেএম শাহরিয়ার রেজা (রিয়াদ) বলেন, অনেক ঋণ খেলাপি দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ায় চট্টগ্রামে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে গেছে।
তিনি আরো জানান, গত দুই বছরে খেলাপিদের বিষয়ে আদালত সক্রিয় ভূমিকা পালন করায় ঋণ আদায় বেড়েছে এবং মামলার সংখ্যা কমেছে।
খেলাপিদের যেভাবে দেশে ফিরিয়ে আনা যাবে
বিদেশ থেকে এসব খেলাপিদের দেশে ফেরত আনার বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোনো উদ্যোগ নেই।
ব্যাংকারদের মতে, তাদের ফেরত আনতে হলে ঋণদাতা ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য পক্ষকে সমন্বয় করে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বিভিন্ন ব্যাংক ও অর্থ ঋণ আদালতের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে বিভিন্ন শিল্পগোষ্ঠীসহ চট্টগ্রামের ৫৫ কোম্পানির ব্যাংক ও নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে খেলাপি ঋণ রয়েছে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার।
হাজার কোটি খেলাপি মামলায় চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি মিশমাক গ্রুপের চেয়ারম্যান মিলনকে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছেন অর্থ ঋণ আদালত। বিশেষত, স্বরাষ্ট্রসচিব ও অর্থসচিব এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে এ আদেশ বাস্তবায়নে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।