কলার খোসা ভেজানো পানি যেভাবে গাছের বৃদ্ধিতে কাজ করে
অনেকের কাছেই তার ঘরের ভেতর-বাইরে থাকা গাছগুলো তাদের পোষা প্রাণীর মতো। গাছই তাদের বন্ধু এবং প্রিয় সঙ্গী। কেউ কেউ নিজেকে তার কাছে থাকা গাছগুলোর 'মা' হিসেবে দেখেন এবং এগুলোর যত্ন নেওয়া বাধ্যতামূলক মনে করেন। গাছের বৃদ্ধির জন্য এবং গাছকে নানারকম পোকামাকড়-রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে দূরে রাখার জন্যও যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হয়। সম্প্রতি রিডার্স ডাইজেস্ট-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে নিজের প্রিয় গাছেদের যত্ন নেওয়ার আরেকটি নতুন আরেকটি ডিআইওয়াই বস্তুর কথা যা গাছের জন্য খুবই উপকারী; আর তা হলো- ঘরে তৈরি 'ব্যানানা ওয়াটার' বা কলার খোসা ভেজানো পানি।
'রোজ গার্ডেনিং' এর লেখক স্টেফানি স্টিফেনসন ব্যাখ্যা করে জানান, ব্যানানা ওয়াটার বানানোরর প্রক্রিয়াটা খুবই সহজ হওয়ার কারণেই এটি এখন ট্রেন্ডে আছে, আর এটি যে আউটডোর-ইনডোর দুই রকমের গাছের জন্যই খুবই ভাল সার, সেকথা বলাই বাহুল্য। কলাতে রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেশিয়াম। এগুলোর সমন্বয়ের ফলেই এটি গাছের বৃদ্ধিতে এত সাহায্য করে।
'ব্যানানা ওয়াটার' কি?
ব্যানানা ওয়াটার হলো কলার খোসা ভেজানো পানি। এটি তৈরি করা খুবই সহজ- শুধু কিছু কলার খোসা একটা জারে বা বালতিতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দিন কয়েক সপ্তাহ, এরপর সেই পানি আপনার গাছে দিন। ব্যাস, হয়ে গেল! ভিজিয়ে রাখা কলার খোসা থেকে পটাশিয়াম ও ক্যালসিয়াম নির্গত হয় পানিতে, যা খুবই সস্তা হোমমেইড তরল সার তৈরি করে।
'ব্যানানা ওয়াটার' কি আসলেই উপকারী?
বাগান করেন এমন কেউ কেউ ব্যানানা ওয়াটারকে খুবই উপকারী ভাবেন, যদিও এই মুহুর্তে কোনো বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই যে ব্যানানা ওয়াটারে আসলে গাছের বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য আনার মত পর্যাপ্ত পটাশিয়াম আছে।
তবে এর মানে এই নয় যে এটি একেবারেই কাজ করবে না। কিন্তু একথা সত্যি যে কলার মধ্যে প্রচুর পটাশিয়াম থাকে, এবং এটি এমন একটি মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট যা গাছের বৃদ্ধিতে সহায়ক, গাছের কাণ্ড শক্তিশালী করে এবং খরা ও কীটপতঙ্গ প্রতিরোধী করে তোলে।
তবে এর জন্য কলার খোসা টুকরো করে নিতে হয় যাতে নিউট্রিয়েন্ট নির্গত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, কলার খোসা সেদ্ধ করে ব্যানানা ওয়াটার বানালে পটাশিয়াম লেভেল আরও বেড়ে যায়, যদিও এ বিষয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।
কোন কোন গাছে ব্যবহার করা যাবে?
বাগানের বা বাড়ির যেকোনো গাছেই ব্যানান ওয়াটার ব্যবহার করা যাবে। এর উপকারিতা নিয়ে যথেষ্ট গবেষণার অভাব থাকলেও এটি যে গাছের ক্ষতি করে না তা নিশ্চিত। বাড়তি পটাশিয়াম বিশেষ করে ফুল ও ফলের গাছের ক্ষেত্রে বেশি উপকারী।
স্টিফেনসন বলেন, "আপনি যদি ব্যানানা ওয়াটার নিয়ে দ্বিধায় থাকেন, তাহলে টমেটো, মরিচ, গোলাপ, অর্কিড, কলা ইত্যাদি গাছে ব্যবহার করে দেখেন।" তিনি জানান, টমেটোর পচন রোধ করে ব্যানানা ওয়াটার। "ম্যাগনেশিয়াম ফুল ও গাছকে সালোকসংশ্লেষণে সাহায্য করে, গাছে আরও বেশি ফুল-ফল ধরতে সাহায্য করে", বলেন তিনি।
সব গাছের জন্য কি নিরাপদ?
ব্যানানা ওয়াটার প্রায় সব গাছের জন্যই নিরাপদ। আর এটা অবশ্যই গাছের বৃদ্ধিতে একটুও বাধা দেবে না। তবে সাধারণত কলা উৎপাদনের সময় সিনথেটিক কীটনাশক স্প্রে করা হয়। ফলে আপনি যদি অর্গানিক বাগান করতে চান, তাহলে হয়তো ব্যানানা ওয়াটার না ব্যবহার করাই ভাল।
বলে রাখা ভাল যে, ব্যানানা ওয়াটারে শুধু কয়েকটি নিউট্রিয়েন্ট থাকে, এটি গাছের জন্য প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি দিবে না। তাই সার হিসাবে শুধুমাত্র ব্যানানা ওয়াটারের ওপর নির্ভর করা চলবে না, এতে অন্যান্য উপাদানের ঘাটতি তৈরি হবে গাছে। তাই অন্যান্য সারের পাশাপাশি এটি ব্যবহার করতে হবে।
ব্যানানা ওয়াটার তৈরির পদ্ধতি
১. ব্যানানা ওয়াটার তৈরির জন্য দরকার কিছু কলার খোসা, পানি এবং একটা বড় বালতি বা জার। এটি তৈরির জন্য আগে থেকেই কলার খোসা জমাতে হবে। একটা কন্টেইনারে খোসাগুলো রাখতে হবে এবং খোসাগুলোর তিন ভাগের দুই ভাগ পানি দিয়ে পূর্ণ করতে হবে এবং ঢেকে দিতে হবে। এরপরে জার বা বালতি ভরে না যাওয়া পর্যন্ত খোসা জমাতে হবে এর মধ্যে। গন্ধ যাতে না বের হয়, তার জন্য অবশ্যই ঢেকে রাখতে হবে।
২. দ্রুত যেন খোসাগুলো থেকে উপাদান নির্গত হয়, তার জন্য এগুলো এক ইঞ্চি মাপে কেটে দেয়া যেতে পারে। অথবা ব্লেন্ডারে চূর্ণ করে তারপর জারে রাখতে পারেন।
৩. পাত্রটি যখন কলার খোসায় পূর্ণ হয়ে যাবে, এটিকে ঠান্ডা, অন্ধকার কোনো স্থানে রাখতে হবে ২ থেকে ৩ সপ্তাহের জন্য। খোসাগুলো ইতোমধ্যে কালো হয়ে যাবে আর পানিও কালো হয়ে যাবে। এর মধ্য থেকে কিছু গন্ধ আসতে পারে যা স্বাভাবিক। কিন্তু গাছে দেয়ার পর এতে গন্ধ থাকবে না।
৪. আরেকটি উপায় হলো, কয়েকদিন কলার খোসা জমিয়ে রেখে তারপর সসপ্যানে পানি ও খোসা নিয়ে সেদ্ধ করা। ৩০-৪০ মিনিট সেদ্ধ করার পর এই মিশ্রণ ঠান্ডা করতে হবে।
৫. মিশ্রণ থেকে খোসাগুলো ছেঁকে নিয়ে তরল পানি গাছে ব্যবহার করতে হবে। গাছে নিয়মিত পানি দেয়ার অংশ হিসেবেও ব্যানানা ওয়াটার ব্যবহার করা যায়।
ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় তৈরি ব্যানানা ওয়াটার সাথেসাথেই ব্যবহার করা যায়। কিন্তু সেদ্ধ করা পানি ব্যবহারের আগে ডাইলুট করতে হবে। সেক্ষেত্রে পাঁচ ভাগ পানির সঙ্গে এক ভাগ ব্যানানা ওয়াটার মিশিয়ে ব্যবহার করতে হবে।
সপ্তাহে কয় দিন ব্যবহার করতে হবে?
বেশিরভাগ ইনডোর ও আউটডোর গাছের ক্ষেত্রে সপ্তাহে যে সময়সূচি মেনে পানি দেয়া হয় গাছে, সেভাবেই ব্যানানা ওয়াটারও দেয়া যেতে পারে। গাছের পাতা ড্যাম্প হওয়া প্রতিরোধে পানি দেয়ার সময় গাছের গোড়ায় মাটিতেই দিতে হবে ব্যানানা ওয়াটার।