করোনা সংকটে মাগুরায় লোকসানের মুখে মৎস্য খামারিরা
করোনাভাইরাসের কারণে বিপাকে পড়েছেন মাগুরার মৎস্য খামারীরা। বিশেষ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকাররা না আসায় মাছ বিক্রি করতে না পেরে কোটি টাকা লোকসানের মুখে পড়েছেন বড় খামারিরা।
একই কারণে এসব খামারে কর্মরত শ্রমিকরা কর্মহীন হয়ে পড়ে পরিবার পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
জেলা মৎস্য বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য খামারীদের তালিকা করে তাদের সরকার ঘোষিত প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।
জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, মাগুরা জেলায় এক হাজারের বেশি মৎস্য খামারী রয়েছেন। যারা বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছেন কয়েক শ' মৎস্য খামার। এর মধ্যে রয়েছে কমপক্ষে দুই শতাধিক বড় খামারী। যাদের একাধিক পুকুর ও ঘেরে পাঁচ থেকে ৫ হেক্টর জলাশয়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছের চাষ।
ছোট খামারীরা স্থানীয় বাজারে তাদের উৎপাদিত মাছ বিক্রি করে কোনোভাবে টিকে রয়েছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকারী ক্রেতারা না আসায় বড় খামরীরা তাদের উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ মাছ বিক্রি করতে না পেরে পড়েছেন বিপাকে।
তন্ময় দত্ত নামে এক মৎস্য খামারী বলেন, সদরের নালিয়ারডাঙ্গি এলাকায় ১৫ একর জলাশয়ে তিনি সাতটি ঘেরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ চাষ করেছেন। এসব ঘেরে একবার জাল টানলে আট থেকে ১০ ট্রাক মাছ ওঠে। এ মাছ বিগত দিনে তিনি ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারদের কাছে বিক্রি করে আসছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে প্রায় দুইমাস ধরে ঢাকাসহ অন্য জেলার পাইকাররা মাছ কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। স্থানীয় বাজারে এক ট্রাক মাছ নিলেই দাম অর্ধেকে নেমে আসে। ফলে তিনি মাছ বিক্রি করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন।
'
তন্ময় দত্ত বলেন, পানি কমে যাওয়ায় প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা সাতটি ঘেরে পাম্প চালিয়ে রাখতে হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব মাছের জন্য হাজার-হাজার টাকার খাবার কিনতে হচ্ছে। মাছ বিক্রি না হওয়ায় তার ঘেরে কর্মরত নিয়মিত-অনিয়মিত প্রায় ৫০ জন কর্মচারী রয়েছে, যাদের ঠিকমত বেতন দিতে পাচ্ছেন না।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে কোটি টাকা ঋণ নিয়ে তিনি এসব খামার গড়ে তুলেছেন। অন্যদিকে মাছের খাবার জন্য দোকানীদের কাছে মোটা অংকের দেনার দায়ে তিনি এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
শুধু তন্ময় দত্ত নয়, জেলার প্রায় দুই শতাধিক বড় মৎস্য খামরীর অবস্থা একই রকম।
ওহিদুর রহমান, পরিমল বিশ্বাসসহ বড় খামারে কর্মরত কয়েকজন শ্রমিক বলছেন, তাদের ঘের মালিকরা মাছ বিক্রি করতে না পারায় তারা অনেকে বেকার হয়ে পড়েছেন। আবার যারা কাজ করছেন তারাও নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন না। বর্তমান করোনা সংকটে পরিবার পরিজন নিয়ে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটছে এসব শ্রমিকদের।
জেলা মৎস্য অফিসার আসিকুর রহমান বলেন, বড় মৎস্য খামারীরা মাছ বিক্রি করতে না পেরে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সরকার ক্ষতিগ্রস্থ খামারীদের জন্য প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্য খামারীদের তালিকা করে তাদের প্রণোদনার আওতায় আনা হবে।