৬ কংগ্রেসম্যানের চিঠিতে অতিরঞ্জন ও অসঙ্গতি রয়েছে: শাহরিয়ার আলম
বাংলাদেশ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ছয় কংগ্রেসম্যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে যে চিঠি দিয়েছেন সেটিতে অতিরঞ্জন ও অসঙ্গতি রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
তিনি বলেন, 'আমরা চিঠিটি সংগ্রহ করেছি। অন্য যেকোনও চিঠির মতো এখানে কিছু বাড়তি বলা হয়েছে। এমনকি তথ্যের বড় ধরনের ঘাটতি আছে, অসামঞ্জস্য আছে।'
সোমবার (৫ জুন) বিকালে শাহরিয়ার আলম পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান।
তিনি বলেন, 'আমাদের দেশেও রাজনীতিবিদেরা, সংসদ সদস্যরা বিশেষ করে অন্য দলের সংসদ সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে অনেক কিছু বলেন। কেউ হয়তো লেখেনও, কিন্তু আমরা সেটি জানি না। হয়তো আমার বিরুদ্ধে বলেন বা লেখেন। এটি রাষ্ট্র বা সরকারের প্রধানের ওপর নির্ভর করে তিনি ওই চিঠি বা কথাগুলো বিবেচনায় নেবেন কি নেবেন না।'
তিনি আরও বলেন, 'এরকম চিঠি অতীতেও এসেছে, ভবিষ্যতে আরও বড় আকারে আসতে পারে। নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে এই ধরনের কার্যক্রম তত বাড়তে থাকবে।'
বিভিন্ন লবিস্ট ফার্ম বা শক্তি কাজ করছে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'তারা তাদের কাজ করবে, আমরা আমাদের কাজ করবো। প্রধানমন্ত্রী সবসময় বলেন বাংলাদেশের মানুষ আমাদের শক্তি।'
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'বিদেশে কারো কাছে ধর্না দিয়ে বা কারো চাপে পড়ে বা কারো সঙ্গে সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত ধরে রাখতেই হবে- এরকম কোনও নীতির প্রতি অগ্রসর হয়ে বাংলাদেশের মানুষকে পেছনে ফেলে দেওয়ার নীতিতে আওয়ামী লীগ বিশ্বাস করে না।'
গত ২৫ মে ৬ জন রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান এক চিঠিতে শেখ হাসিনার সরকার সম্পর্কে বিভিন্ন নেতিবাচক মন্তব্য উল্লেখ করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে অনুরোধ করেছেন।এমনকি এদের মধ্যে একজন কংগ্রেসম্যান এ চিঠি পাঠানোর বিষয়টি এক টুইটে জানান।
তিনি বলেন, 'আমরা ওই কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে কথা বলবো। শুধু তাই না, এ অঞ্চল নিয়ে যাদের আগ্রহ আছে বা এ ধরনের বিষয়ে যাদের আগ্রহ আছে-তাদের সকলকেই নিয়মিতভাবে আমাদের অবস্থান জানাবো।'
মার্কিন ভিসা নীতি
অঘোষিতভাবে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত মার্কিন ভিসা নীতি অনুসরণ করবে বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদের বিষয়ে শাহরিয়ার বলেন, 'এগুলো সব প্রপাগান্ডা। সরকারের বিরোধী শক্তিগুলো এগুলো করছে।'
তিনি বলেন, 'প্রতিটি দেশের ভিসা নীতি তার বৈদেশিক নীতির একটি নিয়ামক। তাই এটি মোটেও সকল দেশের বিষয় নয়।'
রাষ্ট্রদূতেরা সীমা লঙ্ঘন করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে
সম্প্রতি একজন রাষ্ট্রদূতের বিএনপি চেয়ারপার্সনের অফিসে যাওয়া এবং ইসি অফিসে গিয়ে নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়ার বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, '৬ মাস আগে এমন একটা সময় গেছে। যদি কেউ বা কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত আবার এমন কিছু করেন, যা তাদের সীমার বাইরে, আর তা যদি আমাদের চোখে পড়ে; তবে আমরা অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো। তবে এরকম কিছু আমার এখনও জানা নেই।'
'অখণ্ড ভারতের' মানচিত্র
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ভারতের সংসদ ভবনে 'অখণ্ড ভারতের' মানচিত্র স্থাপন বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা জানার জন্য দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাসকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ওই মানচিত্রে বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও নেপালকে অখন্ড ভারতের মানচিত্রে দেখানো হয়েছে।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'এটি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করার কোনও কারণ নেই। তারপরও অধিক ব্যাখ্যার জন্য আমরা দিল্লির মিশনকে বলেছি ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলতে, তাদের আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা কী তা জানার জন্য।'
প্রতিমন্ত্রী বলেন, 'আমরা যা জেনেছি তা হলো-ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেছেন যে এটি অশোকা সাম্রাজ্যের মানচিত্র, এটি যিশু খ্রিস্টের জন্মের তিনশ' বছর আগের। সেই সময়ের যে অঞ্চলটি ছিল, তার একটি মানচিত্র এবং এটি একটি ম্যুরাল। ওই ম্যুরালে বিভিন্ন অগ্রগতির যাত্রা চিত্রায়ণ করা হয়েছে। এখানে সাংস্কৃতিক মিল থাকতে পারে, কিন্তু এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই।'