ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি যেভাবে জীবন ও স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত করছে
ঢাকার একটি শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সিনিয়র নির্বাহী রিয়াজ আহমেদ (ছদ্মনাম) দীর্ঘদিন ধরে পায়ের ব্যথায় ভুগছেন। আবহাওয়া কিছুটা স্যাঁতসেঁতে হলেই তার এই ব্যথা দেখা দেয়। শুরুর দিকে রিয়াজ ভাবতেন, এটা হয়তো কোনো বাত রোগ, যেহেতু তার মায়েরও একই ধরনের ব্যথার সমস্যা রয়েছে।
'বছর সাতেক আগে আমি একজন কার্ডিওলজিস্ট দেখিয়েছিলাম। আমার চেহারা দেখে ডাক্তার আমার ভিটামিন "ডি" লেভেল পরীক্ষা করতে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি বলেছিলেন, আমার আর পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই, আমি যেন ভিটামিন "ডি" নেওয়া শুরু করি। তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে আমার শরীরে ভিটামিন "ডি"-এর অভাব রয়েছে," বলেন রিয়াজ আহমেদ।
ওই ডাক্তারের ভাষ্যমতে, রিয়াজ আহমেদ ভিটামিন 'ডি' নেওয়া শুরু করতেই তার শরীরের ব্যথা কমতে থাকে।
মোহাম্মদ জামান (ছদ্মনাম) ৪ বছর ধরে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। গত মাসে হঠাৎ হাতে জমে থাকা দুটি কাজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন তিনি; যদিও কাজগুলো খুব জটিল ছিল না। কিন্তু তিনি কাজে মনোনিবেশ করতে পারছিলেন না, এবং তার শুধু আলস্য বোধ হচ্ছিল।
পরবর্তীতে জামান একজন সাইকোলজিক্যাল কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলেন। ওই কাউন্সেলর তার শরীরে ভিটামিন 'ডি'-এর মাত্রা পরীক্ষা করাতে বলেন। পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার পর দেখা যায়, জামানের দেহে ভিটামিন' ডি' লেভেল যতটুকু থাকার কথা, আছে তার অর্ধেক।
জাতিসংঘের একটি বিশেষ সংস্থায় কাজ করেন ফাহমিদা খান (ছদ্মনাম)। গত তিন বছর ধরে তিনি কনুইয়ের ব্যথা নিয়ে ভুগছিলেন। সম্প্রতি তিনি একজন অর্থোপেডিক ডাক্তার দেখান। সেই ডাক্তারও তাকে ভিটামিন 'ডি' লেভেল পরীক্ষা করাতে বলেন। পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায় ফাহমিদার শরীরে সামান্য ভিটামিন 'ডি'-এর অভাব রয়েছে।
শুধু যে রিয়াজ, জামান ও ফাহমিদার এ ধরনের সমস্যা তা নয়, গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের জনসাধারণের মধ্যে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতির এক নীরব মহামারি চলছে।
শরীরে ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবে বাংলাদেশের মানুষ প্রায়ই নানা অসুস্থতায় ভোগে। এই অসুস্থতার কারণও তারা জানে না। তারা যখন নানা উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে যায়, তখন ডাক্তাররাও সরাসরি ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবের কারণে এই সমস্যাটি হচ্ছে কি না, তা খুঁজে বের করতে হিমশিম খান এবং শেষ পর্যন্ত ভুল রোগ নির্ণয় করেন কিংবা ভুল ওষুধ দিয়ে থাকেন।
ভিটামিন 'ডি' আমাদের দেহকে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম হাড় গঠনের অন্যতম প্রধান উপাদান। ভিটামিন 'ডি' আমাদের স্নায়ু, পেশী এবং ইমিউন সিস্টেমেও ভূমিকা রাখে। তিনটি উপায়ে আমরা ভিটামিন 'ডি' পেতে পারি: ত্বকের মাধ্যমে, খাদ্য থেকে এবং সাপ্লিমেন্ট থেকে। সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসার পরে আমাদের শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন' ডি' তৈরি হয়।
'ভিটামিন 'ডি' ডেফিশিয়েন্সি' বা শরীরে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি বিশ্বজুড়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত সমস্যা। ক্যালসিয়াম হোমিওস্টেসিস এবং বোন মিনারালাইজেশনের জন্য ভিটামিন 'ডি' প্রয়োজন। শরীরে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি থাকলে শিশুদের রিকেট রোগ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের 'অস্টেওম্যালেসিয়া' রোগ হয় বলে জানা গেছে গবেষণায়।
ডাক্তাররা বলেন, বাংলাদেশে ভিটামিন এ, বি ও সি নিয়ে সচেতনতা ছড়ানো হয়, ফলে লোকজন এসব ভিটামিন সম্পর্কে সচেতন থাকে। কিন্তু ভিটামিন 'ডি' ডেফিশিয়েন্সি নামক এই 'নীরব ঘাতক'-এর সম্পর্কে সবাই সচেতন নয়। আবার ভিটামিন 'ডি' টেস্ট ব্যয়বহুল হওয়ায় ডাক্তাররা রোগীদের প্রেসক্রিপশনে এটি লেখেন না। যেকোনো স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে এই টেস্ট করাতে গেলে ২,৫০০ থেকে ৫,০০০ টাকা লেগে যায়।
ভিটামিন 'ডি' টেস্টের রেজাল্ট এবং ডাক্তারদের কথা থেকেই প্রমাণিত যে বর্তমানে বাংলাদেশে বয়স্করা আগের চেয়ে বেশি ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবজনিত স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন। ফলে ধীরে ধীরে মানুষ এই ভিটামিন সম্পর্কে সচেতন হচ্ছেন।
বাংলাদেশে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি
এশিয়া প্যাসিফিক জার্নাল অভ ক্লিনিকাল নিউট্রিশন ২০২২ সালে একটি রিভিউ আর্টিকেল (একটি বিষয়ে আগে প্রকাশিত গবেষণার উপর সমীক্ষা) প্রকাশ করে। বাংলাদেশের বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভিটামিন 'ডি'-এর মাত্রা নিয়ে পরিচালিত সব কমিউনিটি ও হাসপাতালভিত্তিক গবেষণা থেকে পিয়ার রিভিউ করা যেসব মূল গবেষণা নিবন্ধ সহজলভ্য ছিল, তার ওপর ভিত্তি করে এই পর্যালোচনা নিবন্ধটি প্রকাশ করা হয়।
২০০২ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে কক্সবাজার, সিলেট, গাজীপুর এবং ঢাকার শহুরে ও গ্রাম্য উভয় এলাকায় উচ্চ ও নিম্ন আর্থসামাজিক গোষ্ঠীর ওপর মোট ৮টি গবেষণা পরিচালনা করা হয়েছে। এই আটটি গবেষণায় ৩,০৪৭ জনের উপর জরিপ চালানো হয়েছে।
এই রিভিউ আর্টিকেলে বলা হয়েছে, 'সারা বিশ্বেই সব বয়সের ব্যক্তির মধ্যে ভিটামিন "ডি"-এর ঘাটতি একটি প্রধান সমস্যা। চিকিৎসা খাতের এত অগ্রগতি সত্ত্বেও যথাযথ রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার অভাবে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি এখনও মহামারি রূপে বিরাজমান।'
ফিনল্যান্ডের হেলসিংকির খাদ্য ও পুষ্টি বিভাগ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিউট যৌথভাবে 'ভিটামিন "ডি' ডেফিশিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ: আ রিভিউ অভ দ্য প্রিভেলেন্স, কজেস অ্যান্ড রেকমেন্ডেশনস ফর মিটিগেশন' শীর্ষক গবেষণাটি পরিচালনা করেছে। এ গবেষণায় দেখা গেছে, বয়স, লিঙ্গ, জাতি, ধর্মীয় অবস্থান এবং আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে ভিটামিন 'ডি'-এর অভাব প্রায় সব জায়গায়ই বেশি ছিল।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতির মাত্রা ২৭.২ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশের মধ্যে। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বয়স ও লিঙ্গের পার্থক্যভেদে বয়স্ক এবং নারীদের মধ্যে এই ঘাটতি বেশি।
সদ্যোজাত শিশু থেকে ধরে এক বছরের কম বয়সী, কিশোর এবং বয়ঃসন্ধিকালে থাকা কিশোরকিশোরীদের মধ্যে হাইপোভিটামিনোসিস ডি (ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি) ২১ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশ। প্রিমেনোপজাল নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৩৮ শতাংশ থেকে ১০০ শতাংশ এবং গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে এই হার ৬৬ শতাংশ থেকে ৯৪.২ শতাংশ৷
অন্যদিকে, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতির হার ৬ শতাংশ থেকে ৯১.৩ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি পাওয়া গেছে পোস্ট-মেনোপজাল নারীদের মধ্যে: ৮২ শতাংশ থেকে ৯৫.৮ শতাংশ।
গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতির পেছনে যেসব প্রধান ফ্যাক্টর কাজ করে তার মধ্যে রয়েছে, গায়ের রং কালো, এমন লাইফস্টাইল যেখানে সারাক্ষণ ঘরের ভেতরে বা বসে বসে থাকার কাজ করতে হয়, পর্যাপ্ত সূর্যের আলো গায়ে না লাগা, বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ, পোশাকের ধরন, সানস্ক্রিন ব্যবহার, স্থূলতা ও ভিটামিন ডি-এর সাপ্লিমেন্টের অভাব।
নিবন্ধে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, 'ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি থেকে স্বাস্থ্যগত সমস্যাগুলো উপশম এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বিস্তৃত কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে জনসচেতনতা তৈরি, সানস্ক্রিন ব্যবহার থেকে বিরত থাকার জন্য উৎসাহিত করা, সূর্যের আলোর সংস্পর্শে থাকা, নিয়মিত ব্যায়াম, খাবারে ভিটামিন ও খনিজ রাখা এবং ভিটামিন 'ডি' সাপ্লিমেন্ট অন্তর্ভুক্ত করা।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্যবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মোহাম্মদ আখতারুজ্জামান এই গবেষণাটি পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত আছেন। তিনি বলেন, 'দেশে ভিটামিন "ডি"-এর ঘাটতির যে সামগ্রিক চিত্র দেখা যাচ্ছে তাকে ভালো বলা যায় না। আমাদের দেশে কোনো ব্যক্তির বয়স ষাট পার হলেই তার হাড়ে ব্যথা দেখা দেয়, কিন্তু উন্নত দেশগুলোতে এর চেয়ে বেশি বয়সী লোকেদেরও শরীরে এমন ব্যথার সমস্যা থাকে না।'
তিনি পরামর্শ দেন, সাধারণ মানুষ যেন দিনের বেলা সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসে, যাতে শরীরে ভিটামিন 'ডি' তৈরি হয়। একই সময়ে সবার উচিত এই ঘাটতি পূরণ করতে প্রতিদিন দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার খাওয়া। সেইসঙ্গে ব্যালান্সড ডায়েটের ব্যাপারে সচেতন হতে হবে।
ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি যেভাবে শরীরের ক্ষতি করে
বাংলাদেশে ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবে ভুগছে এমন মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি। এই ভিটামিনের ঘাটতি পূরণ করতে বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে সবার উচিত সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসা।
'আমরা যদি সূর্যালোকে না আসি তাহলে ভিটামিন "ডি" এর ঘাটতি বাড়তেই থাকবে, ক্যালসিয়াম শোষণ কমে যাবে এবং হাড় দুর্বল হয়ে যাবে। একপর্যায়ে এটি হাড়ে ফাটল ধরাবে,' বলেন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অভ ট্রমাটোলজি অ্যান্ড অর্থোপেডিক রিহ্যাবিলিটেশন-এর অধ্যাপক ডা. আব্দুর রব।
তিনি জানান, নারীরা ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবে ভোগেন সবচেয়ে বেশি। সাধারণত এই মাত্রা থাকা উচিত প্রতি লিটারে ৩০ ন্যানোমোলস। কিন্তু কিছু কিছু ক্ষেত্রে কারো দেহে এই মাত্রা প্রতি লিটারে ৪ থেকে ৫ ন্যানোমোলসও পেয়েছেন তিনি।
'তাদের হাতে-পায়ে এবং হাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। তারা দুর্বল অনুভব করে। হাড়ের ব্যথাটা মূলত ভিটামিন "ডি"-এর ঘাটতির জন্য হয়,' বলেন ডা. রব।
প্রথমত, নারীদের শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি থাকার কারণ হলো তারা পুরুষদের চেয়ে বাইরে সূর্যালোকে কম আসে এবং জামাকাপড় বেশি পরে। 'যেহেতু আমাদের ভিটামিন "ডি"-এর মূল উৎসই হল সূর্যের আলো, তাই যাদের শরীরে সূর্যের আলো সবচেয়ে কম লাগে তাদের দেহে ভিটামিন "ডি"-এর ঘাটতি সবচেয়ে বেশি থাকে"' বলেন ডা. রব।
নিজের পেশাজীবনের অভিজ্ঞতা থেকে ডা. রব দেখেছেন, যারা শরীরে অনেক বেশি কাপড় জড়িয়ে রাখে, তাদের দেহে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি বেশি হয়। নারী ও শিশুরা বেশিরভাগ সময় ঘরে থাকে বলে তারাও ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবে ভোগে। আবার যারা অফিসে যান তারা দিনের অধিকাংশ সময় অফিসের ভেতরেই থাকেন এবং বাড়ি থেকে অফিসে আসা-যাওয়ার সময়েই শুধু বাইরে বের হন। ফলে এই শ্রেণীর মানুষও ভিটামিন 'ডি'-এর অভাবে ভোগেন।
চিকিৎসকরা সাধারণত ভিটামিন ডি-এর হালকা ঘাটতি থাকলে ওরাল ভিটামিন 'ডি' গ্রহণের পরামর্শ দেন। কিন্তু যখন গুরুতর ঘাটতি দেখা দেয়, তখন চিকিৎসকরা ইনজেকশন নেওয়ার পরামর্শ দেন। ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ঘাটতি পূরণ করতে পারে, তবে এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হিসেবে বিবেচিত নয়।
ডা. রব বলেন, 'আপনি কাউকে ভিটামিন "ডি" সাপ্লিমেন্ট গ্রহণের পরামর্শ দিলেও, দীর্ঘমেয়াদে ভিটামিন "ডি"-এর ঘাটতি পূরণ করতে তাকে অবশ্যই সূর্যালোকের সংস্পর্শে আসতে হবে এবং একই সময়ে সুষম খাদ্য খেতে হবে।'
তিনি আরও জানান, দীর্ঘ সময় ধরে ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি থেকে মানুষ ডিপ্রেশন বা হতাশার শিকারও হতে পারে। 'শারীরিক ফিটনেস না থাকলে মানসিক ফিটনেসও থাকবে না,' বলেন তিনি।
ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতি যেভাবে মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে
এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মাহজাবিন হক বলেন, ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতির সঙ্গে মানসিক স্বাস্থ্যের যোগসূত্র রয়েছে। 'শরীরে ভিটামিন ডি-এর অভাব থাকলে, "হ্যাপি হরমোন'গুলোর একটি, যাকে সেরোটোনিন বলে, সেটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। সেরেটোনিন আমাদের মনকে উৎফুল্ল রাখতে সাহায্য করে,' বলেন তিনি।
তিনি আরও জানান, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে সেরেটোনিন লেভেল এবং আবেগীয় আচরণের মধ্যে একটি সম্পর্ক রয়েছে। শরীরে যখন সেরেটোনিনের মাত্রা কম থাকে, তখন মানুষ আবেগপ্রবণ আচরণ করে।
'মানুষ যখন হুট করেই আবেগপ্রবণ আচরণ করে, তখন কোনোকিছুর পরিণাম না ভেবেই কিছু একটা করে বসে। বেশিরভাগ সময়ই এরকম আবেগপ্রবণ আচরণের ফলাফল খারাপ হয়,' বলেন ডা. হক।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে আমাদের সমাজে, কর্মক্ষেত্রে বা পরিবারেও অনেকের মধ্যেই আবেগপ্রবণ আচরণের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সেটি গুরুতর অপরাধে পর্যন্ত গড়াচ্ছে।
'আমি মনে করি, এ ধরনের আচরণ করে যেসব ব্যক্তি, তাদের দেহে ভিটামিন "ডি" লেভেল এবং সেরেটোনিন লেভেলও পরীক্ষা করে দেখা উচিত,' বলেন ডা. হক।
ভিটামিন 'ডি'-এর চাহিদা বৃদ্ধি
বাংলাদেশে এই মুহূর্তে ১০৩ কোটি টাকার ভিটামিন 'ডি'-এর বাজার রয়েছে। এ বাজার ৭.৫ শতাংশ হারে বাড়ছে বলে জানান রেনাটা লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এস কায়সার কবির। ভিটামিন 'ডি' প্লাস ক্যালসিয়ামের বাজার রয়েছে ৯৪২ কোটি টাকার; অন্যদিকে ভিটামিন 'ডি' এবং অন্যান্য মাল্টিভিটামিনের বাজার রয়েছে ৩১৫ কোটি টাকার। প্রথমটির বাজার ১৭.৫ শতাংশ করে বাড়লেও, শেষোক্ত বাজারটি বেড়েছে ৪.৩ শতাংশ হারে। কায়সার কবির জানান, 'গত ১২ মাসের মধ্যে বাজারে এই বৃদ্ধি পরিলক্ষিত হয়েছে।'
ডা. রব বলেন, মানুষ যেহেতু দিন দিন ভিটামিন 'ডি'-এর ঘাটতির বিষয়টি নিয়ে সচেতন হচ্ছে, সেজন্য দেশীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোও দেশের চাহিদা মেটাতে ভিটামিন 'ডি' সাপ্লিমেন্ট উৎপাদন বাড়িয়েছে।
ডা. রব বলেন, '৫ বছর আগেও দেশীয় পর্যায়ে কোনো ভিটামিন ডি প্রোডাকশন ছিল না, কারণ এর বাজার ছিল অনেক ছোট। কিন্তু এখন যেহেতু মানুষ সচেতন হচ্ছে, তাই ভিটামিন 'ডি'-এর বাজারের পরিধিও বাড়ছে।' এর ফলে ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো ওরাল ও ইনজেক্টেবল ভিটামিন 'ডি' সাপ্লিমেন্টও উৎপাদন করছে।