আজ বিশ্ব মশা দিবস
যুগের পর যুগ ধরে প্রাণঘাতী রোগ ছড়ানোর জন্য পতঙ্গ হিসেবে কুখ্যাতি কুড়িয়ে এসেছে মশা। ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু থেকে শুরু করে জিকা—লাখ লাখ প্রাণহানির জন্য দায়ী মশা।
ম্যালেরিয়া, ওয়েস্ট নাইল ভাইরাস, ডেঙ্গু, চিকনগুনিয়া, জিকা—এসব রোগ মশার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকশ মিলিয়ন বছর ধরে পৃথিবীর বুকে আছে মশা। গবেষণায় উঠে এসেছে, ছয় মিলিয়নের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে মশার কারণে।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত দেশে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন মোট ৯৫ হাজার ৮৭৭ জনের ওপরে। একই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ৪৫০ জনের ওপর।
বাংলাদেশে প্রথম ডেঙ্গু সনাক্ত হয় ২০০০ সালে। গত বছর ডেঙ্গুতে ২৮১ জনের প্রাণহানি হয়। তবে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ স্থানীয় প্রশাসন কেবল প্রথাগত পদ্ধতি ব্যবহার করে মশা নিধনে আটকে আছে, যা কার্যত কোনো ফল আনেনি।
অথচ প্রতিবছরই মশা নিয়ন্ত্রণে বাজেটে বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ছে ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের। এ মশা নিয়ন্ত্রণেই গত ৬ অর্থবছরে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন ব্যয় করেছে প্রায় ৩৮৭ কোটি টাকা।
এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। গত ৫০ দিনে চলতি বছরের মোট ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রায় ৯২% সংঘটিত হয়েছে।
মশার বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরির জন্য প্রতি বছর ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবস উদযাপন করা হয়। জেনে নেওয়া যাক মশা সম্পর্কিত কয়েকটি তথ্য-
তারিখ
মশা দিবস পালন করা হয় মূলত চিকিৎসক রোনাল্ড রসের আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর জন্য। তিনিই প্রথম আবিষ্কার করেন যে অ্যানোফিলিস মশাই ম্যালেরিয়া ছড়ায়। অ্যানোফিলিস মশার অন্ত্রে ম্যালেরিয়ার পরজীবী আবিষ্কার করেন তিনি।
ইতিহাস
১৮৯৭ সালে স্যার রোনাল্ড রস আবিষ্কার করেন যে ম্যালেরিয়া সংক্রমণের জন্য মশাই দায়ী। প্রতি বছর লন্ডন স্কুল অভ হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিন এই দিনটিকে পার্টি ও প্রদর্শনীর মাধ্যমে উদযাপন করে, যাতে মশার বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা তৈরি করা যায় এবং এসবের প্রতিকার খুঁজে বের করা যায়। ১৯৩০ সাল থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে দিনটি পালিত হচ্ছে।
বিশ্বজুড়ে মশার বিস্তার
বর্তমানে প্রতি বছর মশাবাহিত রোগে বিশ্বজুড়ে এক মিলিয়নের বেশি মানুষ মারা যায়। এছাড়া প্রতি বছর ৭০০ মিলিয়ন মানুষ মশাবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়।
২০২৩ সালে ইতিমধ্যে তিন মিলিয়নের বেশি মানুষ ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়েছে। বিশ্বজুড়ে ডেঙ্গুতে ১ হাজার ৫০০-র বেশি মানুষ মারা গেছে চলতি বছর। আর্জেন্টিনা, পেরু ও বাংলাদেশে তাদের ইতিহাসের সর্বোচ্চসংখ্যক মানুষের ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে। এছাড়া প্যারাগুয়েতে চিকনগুনিয়া রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
তাৎপর্য
মশাবাহিত বিভিন্ন রোগের বিপদ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমেও মশা দিবসটি পালন করা হয়। ম্যালেরিয়ার প্রতিকার বের করতে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। রোনাল্ড রস ও অন্যান্য বিজ্ঞানীর কাজের প্রশংসাও এই দিনে করা হয়।
উদযাপন
বিশ্ব মশা দিবস পালনের অন্যতম সেরা উপায় হলো ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গু ও জিকার মতো রোগের চিকিৎসায় সাহায্য করার জন্য তহবিল সংগ্রহ করা। অনলাইনেও মশার বিপদ সম্পর্কে পড়া ও জানা যায়।