৫ বছরে ৮২% আবাসিক গ্রাহককে প্রিপেইড মিটারিংয়ের আওতায় আনার লক্ষ্য তিতাসের
আগামী ৫ বছরে অতিরিক্ত ১৭.৫০ লাখ আবাসিক গ্রাহককে গ্যাস মিটারিংয়ের আওতায় আনার লক্ষ্যে দুটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল)।
জাপান সরকারের আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থার (জাইকা) পর গ্যাস মিটারিংয়ে নতুন করে অর্থায়নের সম্মতি জানিয়েছে বিশ্বব্যাংকে এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। নতুন এ দুই প্রকল্পে সরকার মোট বিনিয়োগ করবে ৬,২৩৪ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক ও এডিবি দুই সংস্থা ঋণ দেবে ৪,৬৬৪ কোটি টাকা।
প্রকল্প শেষে তিতাসের অন্তর্ভুক্ত এলাকায় মোট আবাসিক গ্রাহকের ৮১.৭৯% প্রিপেইড গ্যাস মিটারিং সিস্টেমের আওতায় আসবে বলে জানিয়েছেন তিতাসের কর্মকর্তারা।
তিতাসের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে কোম্পানির আওতাধীন আবাসিক গ্রাহক সংযোগ সংখ্যা প্রায় ২৬.৬৩ লাখ। এডিবি'র অর্থায়নে ইতোমধ্যে ৮,৬০০টি মিটার স্থাপন করা হয়েছে।
এছাড়া জাইকার অর্থায়নে একটি চলমান প্রকল্পের আওতায় ৩,২০,০০০টি প্রি-পেইড মিটার স্থাপন করা হয়েছে। জাইকার'র ঋণ সহায়তায় চলমান প্রকল্পটির আওতায় আরো ১ লাখ প্রিপেইড মিটার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে।
টিজিটিডিসিএল ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাংক ও এডিবির অর্থায়নে দুটি প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। দুটি প্রকল্পই পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষা রয়েছে।
এরমধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের প্রকল্পের মাধ্যমে ১১ লক্ষ প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, এডিবির অর্থায়নে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ৬.৫০ লক্ষ প্রিপেইড মিটার স্থাপন করা হবে।
প্রস্তাবিত এই দুটি প্রকল্প আগামী চার-পাঁচ বছরের মধ্যে শেষ হলে তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় মোট আবাসিক গ্রাহকের সংখ্যা হবে ২১.৭৮ লাখ।
টিজিটিডিসিএলের কর্মকর্তারা জানান, তিতাসের সিস্টেম লস সংক্রান্ত সার্ভে এখনো সম্পন্ন হয়নি এবং তাদের কাছে কোন হালনাগাদ তথ্য নেই। তবে প্রকল্প দুটি বাস্তবায়িত হলে গ্রাহক প্রতি মাসে ২৬ ঘনমিটার করে গ্যাস সাশ্রয় হবে।
কর্মকর্তারা আরো জানান, প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের ফলে তিতাস অধিভুক্ত আবাসিক এলাকায় আবাসিক পর্যায়ে ব্যবহৃত গ্যাসের অপচয় রোধ, গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ পাইপলাইনের লিকেজ সনাক্তকরণ এবং গ্যাস ব্যবহারের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে গ্যাস ব্যবহারে দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে।
এর ফলে বায়ুমণ্ডলে মিথেন এবং কার্বন-ডাই অক্সাইড নিঃসরণ কমবে। দেশের সিংহভাগ কার্বন ডাই অক্সাইড তেল, এবং প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে নির্গমন হয়।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, "তিতাসের গ্রাহক ২৬.৬৩ লাখ বলা হলেও বাস্তবে আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ২৮ লাখ।"
সব আবাসিক গ্রাহককে ২০৩০ সালের মধ্যে মিটারিংয়েরে আওতায় আনার লক্ষ্য রয়েছে।
"এ লক্ষ্যে এডিবি ও বিশ্ব্যাংকের প্রস্তাবিত প্রকল্পের পর আরো একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে। ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চলছে। সমীক্ষা শেষ হলে আগামী এক-দুই বছরের মধ্যে নতুন আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হবে। ওই প্রকল্পে বাস্তবায়ন হলে আশা করা যাচ্ছে শতভাগ গ্রাহককে প্রিপেইড সিস্টেমের আওতায় আনা সম্ভব হবে," বলেন তিনি।
মিটার প্রতি ব্যয় নিয়ে পরিকল্পনা কমিশনের আপত্তি
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, জালালাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের চলমান প্রকল্পের জন্য নির্ধারিত প্রাক্কলিত ব্যয়ের অতিরিক্ত ১০% যোগ করে প্রতিটি মিটারের মূল্য ১৭,৫০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০২২ সালে স্বাক্ষরিত জালালাবাদ চুক্তিতে মিটার প্রতি খরচ নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৫,৮৭৩ টাকা।
পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, তারা প্রস্তাবিত দুটি প্রকল্পের জন্য মিটার ব্যয়ে ১০% বৃদ্ধি এড়ানোর নির্দেশ দিয়েছে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আওতায় বিভিন্ন সংস্থার চলমান ও প্রস্তাবিত প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের প্রকল্পগুলোর মিটার প্রতি মূল্যের তারতম্য নিরসনের সুপারিশ করেছে পরিকল্পনা কমিশন।
একই সঙ্গে, দ্রুততম সময়ের মধ্যে মিটারের রেট সিডিউল প্রণয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে প্রস্তাবিত প্রকল্প দুটিতে প্রিপেইড মিটার এর জন্য গ্রাহক পর্যায়ে নির্ধারিত মাসিক মিটার ভাড়া ধরা হয়েছে ২০০ টাকা। কিন্ত চলমান অন্যান্য প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান মাসিক মিটার ভাড়া ধরা আছে ১০০ টাকা।
এ বিষয়টি পর্যালোচনা করে পরিকল্পনা কমিশন নতুন প্রকল্পে ধরা মিটার ভাড়া কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে।
প্রকল্পের প্রস্তাব পর্যালোচনার জন্য জুলাই ও আগস্ট মাসে তার মূল্যায়ন কমিটি পৃথক বৈঠক করার পর পরিকল্পনা কমিশন তাদের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আসে।
কর্মকর্তাদের মতে, ৩ হাজার ৯৫১ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের বিপরীতে বিশ্বব্যাংক ঋণ দেবে ২ হাজার ৭১৯ কোটি টাকা।
অন্যদিকে, ২ হাজার ২৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের বিপরীতে এডিবি ঋণ দেবে ১৯৪৪.৯৯ কোটি টাকা।
উভয় প্রকল্পের ক্ষেত্রে অবশিষ্ট অর্থ তিতাসের অভ্যন্তরীণ তহবিল এবং সরকারের কাছ থেকে নেওয়া হবে।