দেশের ১০ জেলায় সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি
সোমবার পর্যন্ত দেশের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছাড়িয়েছে এক লাখ ৫১ হাজারে, এর মধ্যে নতুন কেসের সংখ্যা ২,৯৪৪টি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ১০ জেলার রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির হার সবচেয়ে বেশি।
গত ৩ থেকে ৯ সেপ্টেম্বর সময়ে দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রবিবার সাপ্তাহিক ডেঙ্গু হেলথ বুলেটিন (সপ্তাহ ৩৫) প্রকাশ করে।
বুলেটিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, পটুয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, পিরোজপুর, চাঁদপুর, মানিকগঞ্জ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর শীর্ষে রয়েছে।
এতে আরও উঠে আসে, ঢাকার মধ্যে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ১০ এলাকা হলো যাত্রাবাড়ী, সবুজবাগ, কদমতলী, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও, কেরানীগঞ্জ, ক্যান্টনমেন্ট, উত্তরা, ধানমন্ডি ও পল্লবী।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দৈনিক তথ্য অনুসারে, সোমবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১১ জন ডেঙ্গু রোগী মারা গেছে; এই বছর এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা ৭৪১ এ পৌঁছলো।
অন্যদিকে নতুন আক্রান্ত ২,৯৪৪ জনের মধ্যে ৯৬৭ জন ঢাকার এবং ১,৯৭৭ জন দেশের অন্যান্য স্থানের।
বর্তমানে মোট ৯,৮১৬ জন ডেঙ্গু রোগীর মধ্যে ঢাকায় ৪,২০৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫,৬০৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
যেসব এলাকায় ডেঙ্গু রোগী বেশি সেসব এলাকায় মশক নিধনে জোর দেয়া ও চিকিৎসা সুবিধা বাড়ানোর পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।
ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি, ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চের (আইইডিসিআর) অন্যতম উপদেষ্টা ডা. এম মুশতাক হোসেন বলেন, "ঢাকার বাইরে উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু টেস্টের সুবিধা নেই, চিকিৎসাও পর্যাপ্ত নয়। সে কারণে জ্বর হলেও গ্রামের মানুষ রেস্টে না থেকে মাঠে কাজ করে, অফিসে, স্কুলে যায়। যখন শারিরীক অবস্থার অবনতি হয় তখন উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় চলে আসে। তখন আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু কোভিডের মতো উপজেলা বা জেলা পর্যায়ে যদি ডেঙ্গুর স্যাম্পল কালেকশনের ব্যবস্থা থাকতো তাহলে মানুষ ডেঙ্গু টেস্ট করে বিশ্রামে থাকতে পারতো। টেস্টের ব্যবস্থা বাড়ালে রোগী শনাক্ত বাড়বে কিন্তু মৃত্যু কমবে।"
তিনি আরো বলেন, "এতোদিন মনে করা হতো ডেঙ্গু শুধু ঢাকার বা বড় বড় শহরের রোগ। শহরে মশা মারার ব্যবস্থা থাকলেও গ্রামে সে সুযোগ নেই। মশা মারতে সমন্বিত পরিকল্পনা করতে হবে। এখন ডেঙ্গু কতদিন থাকবে তা নির্ভর করে বৃষ্টির ওপর। আবহাওয়াবিদ, কিটতত্ত্ববিদ, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ নিতে হবে। তা হলে হয়তো আগামী বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতির উন্নতি হবে।"
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, "জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু নিধনে কার্যক্রম তেমন নেই। যে কারণে এসব জেলাতে বেশি রোগী মিলছে। ঢাকার তুলনায় ঢাকার বাইরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার ঝুঁকি আছে, কারণ সেখানে সংক্রমণ একেবারে নতুন।"
২০১৯ সালের আগে ডেঙ্গুর প্রকোপ ঢাকার বাইরে এতোটা ছিল না। কিন্তু এবার কোনো জেলা বাকি নেই।
গত সপ্তাহে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ১৪% এবং মৃত্যুর হার ২১% বেড়েছে।
সে সময় ৯৪ জন ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে ৫৯ জন (বা ৬০%) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার এক দিনের মধ্যে এবং ২৩ জন (বা ২৩%) রোগী হাসপাতালে ভর্তির দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে মারা যায়।
উল্লেখ্য, দেশে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে ২৮১ জনের এবং ২০১৯ সালে ১৭৯ জনের প্রাণহানি হয়।