‘আমাদের পরিবারের সবাইকে একসাথে মেরে ফেলুন’
বিএনপির গুম ও গ্রেপ্তার নেতাকর্মীদের স্বজনেরা তাদের মুক্তির দাবিতে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেছেন।
মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সকাল ১১টার দিকে প্রেসক্লাবের সামনে জড়ো হন তারা।
ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা লিয়ন হক ও রাজিব হাসানের বোন বলেন, "আমার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ, এক ভাইকে পুলিশ ১ মাস গুম করে পরে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে। আমার পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার-গুম-খুন করে সরকার তছনছ করে দিয়েছে।"
তিনি বলেন, "এক বছর আগে আমার ভগ্নিপতিকে লক্ষীপুরে র্যাব গুলি করে মেরে ফেলেছে, তিনি বিএনপি করতেন, পরে আমরা ২০ লাখ টাকা ঘুষ দিলে র্যাব আমাদেরকে মৃত লাশটা দেয়-তারা প্রথমে লাশ পর্যন্ত দিতে চায়নি। যদি আমার এবং আমার পরিবারের বাঁচার অধিকার না থাকে, তাহলে আমাদের সবাইকে একসাথে মেরে ফেলুন, একজন একজন করে কষ্ট দিয়ে মারবেন না।"
ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা মুক্তিযোদ্ধা শেখ মনিরুজ্জামানের স্ত্রী বলেন, "রাত দুইটা বাজে দরজা ভেঙ্গে আমার স্বামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পুলিশকে কত আকুতি মিনতি করলাম যে বয়স্ক, অসুস্থ, নির্দোষ লোকটাকে না নিয়ে যেতে- কিন্তু পুলিশ বাসায় ভাঙচুর করে নির্দয়ভাবে তাকে তুলে নিয়ে যায়।"
জেলখানায় নিহত বিএনপি নেতা আবুল বাসারের স্ত্রী বলেন, "আমি আমার স্বামী হারানোর বিচার চাই, আমার সন্তানকে এতিম করেছে, পুলিশ অমানবিক নিষ্ঠুর নির্যাতন করেছে- যার ফলে আমার স্বামীর মৃত্যু হয়। আমি স্বামী হত্যার বিচার চাই।"
যুবদলের সিনিয়র সহ সভাপতি এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের স্ত্রী বলেন, "আমার কোথায় যাব! আমার স্বামীর মামলার বাদী পুলিশ, মামলা করলোও পুলিশ, সাক্ষী দিলও পুলিশ- এটা কেমন বিচার!"
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহানের স্ত্রী রহিমা শাহজাহান মায়া বলেন, "আমার স্বামীকে দুই বছরের জন্য জেল দিয়েছে, তার কোন দোষ নেই, আমাদের পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে- আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন।"
ঢাকা মহানগর বিএনপির নেতা আবদুল হাই ভুঁইয়া বলেন, "আমার ৩ ছেলে ও এক ছেলের বউকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তার করে অমানুষিক নির্যাতন করছে জেলে, যারা গ্রেপ্তার হয়েছে তাদের দেখতে গেলেও আত্মীয়স্বজনকে আটকে থানায় হয়রানি করছে পুলিশ। আমি দেশে-বিদেশের বিবেকবান মানুষকে বলতে চাই; আমরা কিভাবে দিন কাটাচ্ছি, একটু চিন্তা করুন।"
২০১৩ সালে গুম হওয়া বিএনপি নেতা কাউসার হোসেনের স্ত্রী মিনা আক্তার বলেন, "আমার সন্তানের বয়স ১৩ বছর, সে বুঝ হওয়ার পর বাবাকে দেখে নাই। যখন সে বলে 'মা আমার বাবার মুখ কি আর দেখতে পারবো না?', তখন আমার বুকটা ফেটে যায়।"