তাইজুল জাদুতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় টেস্ট জয় বাংলাদেশের
আগের ইনিংসে নিউজিল্যান্ডকে সবচেয়ে বেশি ভোগান তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে কিউইদের রীতিমতো দিশেহারা করে তুললেন বাংলাদেশের বাঁহাতি এই স্পিনার। তার স্পিন ঘূর্ণির সামনে লড়াইও করতে পারলো না কিউইরা। ঘরের মাঠে অবিস্মরণীয় জয়ে সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ।
দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডকে ১৫০ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে কিউইদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট ম্যাচ জিতলো তারা। ১৮ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় জয়। গত বছরের জানুয়ারিতে মাউন্ট মঙ্গানুইতে প্রথমবারের মতো কিউইদের টেস্টে হারায় তারা। দলটির বিপক্ষে শেষ তিন টেস্টের দুটিতেই জিতলো বাংলাদেশ।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ৩১০ রান করে। জবাবে ৩১৭ রান তুলে ৭ রানের লিড নেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সেঞ্চুরিতে ৩৩৮ রান তোলে বাংলাদেশ, নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩৩২ রান। যে রান পাড়ি দিতে নেমে ম্যাচসেরা তাইজুলের স্পিন ঘূর্ণির সামনে ১৮১ রানেই অলআউট হয়ে যায় সফরকারীরা।
সবকিছু বিবেচনায় এটা বাংলাদেশের অন্যতম সেরা জয়। পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই টেস্ট সিরিজ খেলতে এসেছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু বাংলাদেশ দলে নেই নিয়মিত বেশ কয়েকজন সদস্য। চোটের কারণে খেলছেন না নিয়মিত অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। একই কারণে নেই তামিম ইকবাল, তাসকিন আহমেদ ও এবাদত হোসেন। খেলছেন না লিটন কুমার দাসও। এরপরও ব্যাটে-বলে ছড়ি ঘুরিয়ে কিউইদের বিপক্ষে দারুণ জয় তুলে নিলো ঘরের মাঠের দলটি।
সিলেট স্টেডিয়ামে এটাই বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়। এর আগে একমাত্র টেস্টে ২০১৮ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ১৫১ রানে হারে বাংলাদেশ। এই মাঠের দ্বিতীয় ম্যাচেই নিজেদের রেকর্ড বদলে নিলো তারা, নায়কের ভূমিকায় থাকলেন তাইজুল। প্রথম ইনিংসে ৪ উইকেট নেওয়া বাঁহাতি এই স্পিনার দ্বিতীয় ইনিংসে তুলে নেন ৬ উইকেট।
ক্যারিয়ারের ১২তম বারের মতো ৫ বা তার চেয়ে বেশি উইকেট নিলেন তিনি, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম। স্বভাবতই কিউইদের বিপক্ষে এটা তার সেরা বোলিং। ৩১ ওভারে ৮ মেডেনসহ ৭৫ রান খরচায় ৬ উইকেট নেন তাইজুল, যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেরা বোলিং। টেস্টে এক ইনিংসে ৭ ও ৮ উইকেটও আছে তার, বাংলাদেশের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ডও তার দখলে।
৩৩২ রান তাড়ায় নিউজিল্যান্ডের শুরুটা হয় দুঃস্বপ্নের। রানের খাতা খোলার আগেই টম ল্যাথামকে ফিরিয়ে দেন দেন শরিফুল ইসলাম। দলীয় ১৯ রানে কেন উইলিয়ামসনকে সাজঘর দেখিয়ে দেন তাইজুল। ১৯ রানেই দুই উইকেট হারানো কিউইদের বিপদ বাড়ে একটু পরই, দলীয় ৩০ রানে হেনরি নিকোলসকে ফিরিয়ে দেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
একপাশ আগলে খেলতে থাকা ডেভন কনওয়েও থামেন একটু পর। ৭৬ বলে ৩টি চারে ২২ রান করে তাইজুলের শিকারে পরিণত হন তিনি। ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কিউইরা যে চাপে পড়ে, তা আর কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তাইজুল একের পর এক উইকেট তুলে নেন, নাঈম ও মিরাজও করেন নিয়ন্ত্রিত বোলিং। বাংলাদেশের স্পিন তোপে অসহায় আত্মসমর্পণ করতে হয় সফরকারী দলটির।
৭ উইকেটে ১১৩ রান তুলে চতুর্থ দিনের খেলা শেষ করে নিউজিল্যান্ড। বিপর্যয়ের মাঝে ড্যারিল মিচেল কেবল লড়াই করেছেন। ১২০ বলে ৭টি চারে ৫৮ রান করেন তিনি, যা তাদের ইনিংস সেরা। তার বিদায়ের পর ইশ সোধির সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়েন টি-টোয়েন্টি মেজাজে ব্যাটিং করা কিউই অধিনায়ক টিম সাউদি, এটাই তাদের ইনিংস সেরা জুটি। ২৪ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৪ রান করেন সাউদি। ৯১ বলে ২টি চারে ২২ রান করেন সোদি। নাঈম ২টি এবং শরিফুল ও মিরাজ একটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ৩১০
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৩১৭
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৩৮ (শান্ত ১০৫, মুমিনুল ৪০, মুশফিক ৬৭, মিরাজ ৫০; এজাজ ৪/১৪৮, সোধি ২/৭৪, সাউদি ১/৩৩, ফিলিপস ১/৪৭।
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩৩২) ৭১.১ ওভারে ১৮১ (মিচেল ৫৮, সোধি ২২, সাউদি ৩৪; তাইজুল ৬/৭৫, ২/৪০, শরিফুল ১/১৩, মিরাজ ১/৪৪)।
ফল: বাংলাদেশ ১৫০ রানে জয়ী
ম্যাচসেরা: তাইজুল ইসলাম (বাংলাদেশ)
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ