রাজশাহীর সাংসদদের আয় বেড়েছে
রাজশাহীর সংসদীয় ৬টি আসন থেকে নির্বাচিত ছয় সাংসদের মধ্যে রাজশাহী-৫ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ডা. মনসুর রহমানের আয় ও সম্পদ দুটিই বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। আর স্থাবর সম্পদ সবচেয়ে বেশি বেড়েছে রাজশাহী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দীনের।
তবে রাজশাহীর সবচেয়ে ধনাঢ্য সংসদ সদস্য– পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহয়িরার আলম।
পুঠিয়া ও দুর্গাপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৫ আসন থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথম আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে সংসদ নির্বাচিত হন ডা. মনসুর রহমান। এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন তিনি। মনসুরের ২০১৮ ও ২০২৩ সালের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে তাঁর বার্ষিক আয় বেড়েছে সাড়ে ছয় গুণ। আর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে সাত গুণ। রাজশাহীর ছয়জন সংসদ সদস্যদের মধ্যে তার আয় ও সম্পদ বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী, মনসুর রহমানের বার্ষিক আয় ছিল ১৪ লাখ ৯ হজার ৯৬১ টাকা। ২০২৩ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯২ লাখ ৭০ হাজার ২৮৭ টাকায়। আর অস্থাবর সম্পদ ৬১ লাখ ৩৬ হাজার ৯৫৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৩৪ হাজার ১০৫ টাকা। ২০১৮ সালে কৃষিখাত থেকে মনসুরের কোনো আয় না থাকলেও এইবার এ খাত থেকে আয় দেখানো হয়েছে ২৭ লাখ টাকা।
এ ছাড়া ২০১৮ সালে কৃষি জমির পরিমাণ ৩০ লাখ টাকা দেখানো হলেও– এবার আর্থিক মূল্য না দেখিয়ে জমির পরিমাণ দেখানো হয়েছে সাড়ে ১৯ বিঘা জমি, পুকুর ৬ বিঘা ও আবাদি জমি ১৩ বিঘা। গত পাঁচবছরে কমেছে ঋণের পরিমাণও। ২০১৮ সালে মনসুর রহমানের হাউজ বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন থেকে ব্যাংক ঋণ ২১ লাখ ৩৪ হাজার ২১ টাকা থাকলেও– তা কমে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
পবা ও মোহনপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৩ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দীন এবার দলীয় মনোনয়ন না পাওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। সাংসদ আয়েন উদ্দীনের বার্ষিক আয় ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ৫০৬ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৩৫ লাখ ২১ হাজার ৮৬৩ টাকায়। তবে তার স্ত্রীর আয় ৭ লাখ ২৭ হাজার ২৫০ টাকা থেকে এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ লাখ ৮১ হাজার ৯২৭ টাকায়।
হলফনামা অনুযায়ী অস্থাবর সম্পদও কমেছে আয়েন উদ্দীনের। গত নির্বাচনে নিজের নামে ১ কোটি ১৭ লাখ ৯৮ হাজার ৮৭ টাকার অস্থাবর সম্পদ থাকলেও থাকলেও এবার তার সম্পদ দেখানো হয়েছে ৬৭ লাখ ৭৫ হাজার ৮৬৫ টাকা। তবে স্ত্রীর সম্পদ ১২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৯১ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ লাখ ২৯ হাজার ৩৫২ টাকা।
আয় ও অস্থাবর সম্পদ কমলেও কয়েকগুণ লাফিয়ে বেড়েছে তাঁর স্থাবর সম্পদ। ২০১৮ সালের হলফনামায় আয়েন উদ্দীনের স্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ২ বিঘা জমি, যার মূল্য দেখানো হয়েছিল ৪ লাখ টাকা। সেবার কৃষি জমি থেকে আয় দেখানো হয়েছিল ১১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এবার ২ বিঘা স্থাবর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৭ বিঘায়, যার মূল্য ৩ কোটি ২৭ লাখ ২০ হাজার ৩২৬ টাকা। অথচ কৃষি খাত আয় দেখানো হয়েছে মাত্র ১১ লাখ টাকা। এ ছাড়া তার নামে লিজ নেওয়া জমি আছে ৭৭.৭৯ একর। সেই জমি লিজ নিয়ে মৎস্য চাষ করলেও সেখান থেকে তিনি আয় দেখিয়েছেন ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৮৬৩ টাকা। অথচ ২০১৮ সালে একাদশ সংসদ নির্বাচনের সময় কোনো মৎস্য খামার না দেখিয়েও মৎস্য চাষ থেকে আয় দেখানো হয় ২০ লাখ টাকা।
বার্ষিক আয় দেড় কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে রাজশাহী-২ (সদর) আসন থেকে তিন দফা নির্বাচিত আওয়ামী লীগের শরীক জোটের প্রার্থী ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশার। ২০১৮ সালেও ফজলে হোসেন বাদশার বার্ষিক আয় ছিল ৩৯ লাখ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ৭৮ লাখ ১৭ হাজার ৪৪২ টাকায়। ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী বাদশার অস্থাবর সম্পদ ৯৯ লাখ ৬৬ হাজার ৪৮৬ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ ৬৩ হাজার ২৪৫ টাকা।
রাজশাহীর সবচেয়ে ধনাঢ্য প্রার্থী বাঘা ও চারঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। ২০১৮ সালের হলফনামা অনুযায়ী তার বার্ষিক আয় ছিল ৩ কোটি ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৮ টাকা। এবার তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৯২ লাখ ৯১ হাজার ২৫৪ টাকা। তবে নির্ভরশীলদের আয় ১ কোটি ৩০ লাখ ৪৫ হাজার ৮৩৪ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে ৯৪ লাখ ৮১ হাজার ২৮৪ টাকা।
শাহরিয়ার আলমের অস্থাবর সম্পদও বেড়েছে। তাঁর অস্থাবর সম্পদ ৬৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫১ হাজার ৩৭১ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৯ কোটি ২৪ লাখ ৯ হাজার ৯৭০ টাকা। তবে স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ কমলেও বেড়েছে পুত্রের। স্ত্রীর নামে ৯ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৪৯ টাকা অস্থাবর সম্পদ দেখানো হলেও এবার তা দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৮৮ লাখ ৪৪ হাজার ৮২৮ টাকা। আর পুত্রের অস্থাবর সম্পদ ৯ লাখ ১০ হাজার ৬৬২ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ কোটি ৪৫ লাখ ১ হাজার ৪৮২ টাকা।
বাগমারা উপজেলা নিয়ে গঠিত রাজশাহী-৪ আসন থেকে তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য এনামুল হক। এবার আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এ আসন থেকে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এনামুল হকের বার্ষিক আয় ৫৫ লাখ টাকা থেকে বেড়ে দাঁিড়েয়েছে ১ কোটি ২৬ লাখ ১২ হাজার ২৭১ টাকা।
এ ছাড়া তার অস্থাবর সম্পদ ৭ কোটি ৭ লাখ ৮২ হাজার ১৬৯ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ কোটি ৩৬ লাখ ৩৭ হাজার ৬৭৮ টাকা। তবে স্ত্রীর ও নির্ভরশীলদের নামে অস্থাবর সম্পদ কমেছে। স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ ৯ কোটি ৭৩ লাখ ৭১ হাজার ৫২৭ টাকা থেকে হয়ে দাঁড়িয়েছে ৮ কোটি ১৫ লাখ ৯০ হাজার ৪৪ টাকা, এবং নির্ভরশীলদের আয় ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯০ হাজার টাকা থেকে কমে হয়েছে ১ কোটি ৬৪ লাখ ৯০ হাজার টাকা ।
রাজশাহী-১ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য ওমর ফারুক চৌধুরীর বার্ষিক আয় কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯ লাখ ৫০ হাজার ২০১ টাকা। গতবার যা ছিল ৭০ লাখ ২০ হাজার ৩১৭ টাকা। তবে নির্ভরশীলদের আয় ৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২০ লাখ ৩৬ হাজার ৬৬৬ টাকা। বার্ষিক আয় কমলেও অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ফারুক চৌধুরীর । অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৫৩ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৮ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ কোটি ১১ লাখ ৬৮ হাজার ২৭২ টাকা। স্ত্রীর ৫ লাখ ৩০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৬ লাখ ৫ হাজার ১১৪ টাকা। গত নির্বাচনে নির্ভরশীলদের আয় না থাকলেও এবার তা হয়েছে ৫১ লাখ ১০ হাজার ৬৬৬ টাকা।