অসম্মান করার প্রতিবাদে বিসিবি সভাপতিকে আম্পায়ারদের চিঠি
সর্বশেষ জাতীয় ক্রিকেটে লিগে (এনসিএল) প্রশ্নবিদ্ধ আম্পায়ারিং নিয়ে কিছুদিন আগে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। যা খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। এই কমিটির সদস্য করা হয় আম্পায়ারদের প্রশিক্ষক ও সাবেক ক্রিকেটার এনামুল হক মনি, ম্যাচ রেফারি সেলিম শাহেদ ও আম্পায়ার্স কমিটির ম্যানেজার অভি আবদুল্লাহকে।
জাতীয় লিগের পারফরম্যান্স বিবেচনা করে রিপোর্ট জমা দেন তারা। সেটার ভিত্তিতে সাতজন আম্পায়ারকে চলমান বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিসিএল) আম্পায়ার্স প্যানেলে নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমে কথা বলেন আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান ইফতেখার আহমেদ মিঠু।
এটা অসম্মানমূলক মনে হয়েছে আম্পায়ারদের কাছে। প্রতিবাদে ইফতেখার আহমেদের সমালোচনা করে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের বরাবর চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট আম্পায়ার্স অ্যান্ড স্কোরার্স অ্যাসোসিয়েশন। তাদের দাবি, আম্পায়ারদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন আম্পায়ার্স কমিটির প্রধান।
চিঠিতে লেখা হয়েছে, 'খালি চোখে খেলা পরিচালনার ক্ষেত্রে মাঠে আম্পায়ারের ভুল ত্রুটি হতেই পারে। আম্পায়ারের ভুল ত্রুটির মূল্যায়ন করা হয় সেই খেলার ম্যাচ রেফারি ও দলের ক্যাপ্টেনের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে এবং আম্পায়ারের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হলে সেটাও অভ্যন্তরীণভাবে। কখনও আম্পায়ারের শাস্তির বিষয় প্রকাশ্য আসে না। পৃথিবীর কোনো দেশে আম্পায়ার অথবা বিচারকের শাস্তির বিষয় প্রকাশ্যে অথবা মিডিয়াতে আসে না। এমনকি আইসিসিও এই নিয়মনীতি অনুসরণ করে থাকে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের জন্মলগ্ন থেকে আম্পায়ার্স কমিটি আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের বিষয়ে মিডিয়ায় প্রকাশের মাধ্যমে কোনো প্রকাশ্য ব্যবস্থা নেওয়ার নজীর নাই।'
চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে, 'বর্তমান আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান গত দুই ডিসেম্বর এবং পাঁচ ডিসেম্বর ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের ডেকে এনে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ সিনিয়র আম্পায়ারদের ছবি সরবরাহ করে আম্পায়ারদের পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করে সাক্ষাৎকার প্রদান করেন।'
'দুই ডিসেম্বর আম্পায়ার্স কমিটির এক সভায় চেয়ারম্যান সাহেব সদস্যদের অবগত করেন যে টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যানের (আহমেদ সাজ্জাদুল আলমদ ববি) পরামর্শে ছয় আম্পায়ারকে বিসিএল থেকে বাদ দেওয়া হবে। যা টুর্নামেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান সাহেব সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে অস্বীকার করেছেন। আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যান কীভাবে কমিটির সভায় অসত্য তথ্য দিতে পারেন, তা আমাদের বোধগম্য না।'
চিঠির শেষ অংশে লেখা হয়েছে, 'সম্মানিত সভাপতি মহোদয়, আপনি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে আম্পায়ারদের সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করে আম্পায়ারদের মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রেখে আসছেন এবং বাংলাদেশ ক্রিকেট আম্পায়ার্স অ্যান্ড স্কোরার্স অ্যাসোশিয়েশন আপনার দায়িত্ব গ্রহণের সূচনা লগ্ন থেকে আপনার পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আম্পায়ার্স কমিটির চেয়ারম্যানের এহেন আচরণ আমাদের কে মর্মাহত করেছে।'
যদিও এই অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন ইফতেখার আহমেদ। দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'আমি কীভাবে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয় করলাম, সেটা কোনোভাবেই বুঝতে পারছি না। কোথাও আমি আম্পায়ারদের নাম উল্লেখ করিনি, এমনকি সংখ্যাও বলিনি। এরপরও তারা কীভাবে এমন বলতে পারে! জাতীয় লিগে আম্পায়ারদের পারফরম্যান্স নিয়ে আলোচনা হওয়ায় নির্দিষ্ট কয়েকজন আম্পায়ারকে যেন বিসিএলে না রাখা হয়, সেটা চেয়েছি আমি। তবে তাদের অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন।'