রোমাঞ্চ জাগিয়ে হেরে গেল বাংলাদেশ
রানের খাতা খোলার আগেই ক্যাচ তুললেন গ্লেন ফিলিপস। স্লিপে দাঁড়ানো বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ক্যাচটি নিতে পারলেন না। জীবন পেয়ে নিউজিল্যান্ডের ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান করলেন ইনিংস সেরা রান, তাকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে রানাচাকা ঘুরালেন মিচেল স্যান্টনারও। তাই ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ৬৯ রানে ৬ উইকেটে হারিয়েও জয়ের বন্দরে পৌঁছে গেল নিউজিল্যান্ড।
মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টে কিউইদের বিপক্ষে ৪ উইকেটে হেরে গেছে বাংলাদেশ। সিলেট টেস্ট জিতে প্রথমবারের মতো নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে দীর্ঘতম ফরম্যাটে সিরিজ জেতার বাসনা স্বপ্নই থেকে গেল বাংলাদেশের, সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়। ম্যাচ জয়ে কিউইদের পক্ষে কাণ্ডারীর ভূমিকায় ছিলেন ম্যাচসেরা ফিলিপস। প্রথম ইনিংসে দলকে খাদের কিনারে থেকে তুলে দুর্বার এক ইনিংস খেলা কিউই এই ব্যাটসম্যান দ্বিতীয় ইনিংসেও রাখলেন সবচেয়ে বড় অবদান।
এমন ম্যাচও হারা যায়, সেটা কেবল বাংলাদেশকে দেখলেই বোঝা সম্ভব। তিনদিন ধরে এগিয়ে থেকে শেষ পর্যন্ত হারের হতাশা নিয়ে মাঠ ছাড়তে হলো নাজমুল হোসেন শান্তর দলকে। টস জিতে আগে ব্যাটিং নেওয়া বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে ১৭২ রানেই অলআউট হয়ে যায়। এই হতাশা শেষ বিকালে ঘোচে দারুণ বোলিংয়ে। ৪৬ রানেই কিউইদের ৫ উইকেট তুলে নেয় তারা। দ্বিতীয় দিন বৃষ্টিতে খেলা হয়নি।
তৃতীয় দিন বেলা ১২টায় খেলা শুরুর পর ফিলিপসের মারকুটে ব্যাটিংয়ে ১৮০ রান তুলে ৮ রানের লিড নেয় নিউজিল্যান্ড। ফিলিপস করেন ৭২ বলে ৯টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৮৭ রান। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যর্থ বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ, এজাজ প্যাটেলের স্পিন ঘূর্ণিতে ১৪৪ রানেই শেষ হয় ইনিংস। ১৩৭ রানের লক্ষ্য দিয়ে দাপুটে বোলিং করতে থাকে বাংলাদেশ, ৬৯ রানেই তুলে নেয় ৬ উইকেট। এরপর আবারও ফিলিপসের প্রতিরোধ, সাথে থাকেন স্যান্টনার। তাতে ধুয়ে-মুছে যায় সব রোমাঞ্চ।
বৃষ্টি ও আলোক স্বল্পতায় মিরপুর টেস্টে সব মিলিয়ে ১৭৮ ওভারের খেলা হয়েছে। দিনের হিসেবে দুই দিনেরও কম সময়। এরপরও যে রোমাঞ্চ তৈরি হয়, সেটা নিতান্তই মিরপুর স্টেডিয়ামের উইকেটের কারণে। প্রথমদিন ধারাভাষ্যে তামিম ইকবাল বলছিলেন, ১৭-১৮ বছর ধরে এখানে খেলে এখনও তিনি বোঝেন না, উইকেটে কী হচ্ছে। মন্থর ও নিচু উইকেটে দুই দলের ব্যাটসম্যানদেরই কঠিন পরীক্ষা দিতে হয়। বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ড কেউ-ই কোনো ইনিংসে ৭০ ওভারের বেশি ব্যাটিং করতে পারেনি। স্বাগতিকরা সর্বোচ্চ ৬৬.২ ওভার ব্যাটিং করে।
১৩৭ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৫ রানেই উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড। ডেভন কনওয়েকে ফিরিয়ে দেন শরিফুল ইসলাম। কিছুক্ষণ পর ১১ রান করা কেন উইলিয়ামসনের উইকেট তুলে নেন দারুণ বোলিংয়ে সিরিজ সেরার পুরস্কার জেতা তাইজুল ইসলাম। ২৪ রানে ২ উইকেট হারানো সফরকারীদের বিপদ বাড়ান মেহেদী হাসান মিরাজ। দলীয় ৩৩ রানে হেনরি নিকোলসকে সাজঘর দেখিয়ে দেন তিনি।
দলীয় ৪৮ রানে টম ল্যাথামকে মিরাজ নিজের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন। ফেরার আগে ২৬ রান করেন ল্যাথাম। তিন রান পরই টম ব্লান্ডেলকে ফেরান তাইজুল। ৫১ রানে ৫ উইকেট হারানো দলটি ৬৯ রানে খোয়ায় ড্যারিল মিচেলের উইকেটও। বাংলাদেশ শিবিরে তখন উচ্ছ্বাসের জোয়ার, অপেক্ষা ৪ উইকেটের। কিন্তু এখান থেকে যে হাল ধরেন ফিলিপস-স্যান্টনার, তাদের আর থামানো যায়নি। ৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে জয় এনে দেন তারা।
এটাই মিরপুর টেস্টের সেরা জুটি। এটার আগে কোনো দল ৬০ পেরোনো জুটিও গড়তে পারেনি। দুই ইনিংসেই দলকে পথ দেখানো ফিলিপস ৪৮ বলে ৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৪০ রানে অপরাজিত থাকেন। স্যান্টনার ৩৯ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৫ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন। মিরাজ সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। তাইজুল ২টি ও শরিফুল একটি উইকেট পান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৭২
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ১৮০
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ১৪৪
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: (লক্ষ্য ১৩৭), ১৩৯/৬ (ল্যাথাম ২৬, উইলিয়ামসন ১১, মিচেল ১৯, ফিলিপস ৪০*, স্যান্টনার ৩৫*; মিরাজ /৫৩, তাইজুল ২/৫৮, শরিফুল ১/৯)।
ফল: নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: গ্লেন ফিলিপস (নিউজিল্যান্ড)
সিরিজ সেরা: তাইজুল ইসলাম (বাংলাদেশ)
সিরিজ: ১-১ ব্যবধানে ড্র