ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল
ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শামীম হকের প্রার্থিতা বাতিল করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
শুক্রবার (১৫ ডিসেম্বর) সকালে নির্বাচন কমিশনের আপিল শুনানিতে এ রায় দেয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার সিইসি কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
এর আগে দ্বৈত নাগরিকত্বের অভিযোগে শামীমের প্রার্থিতা বাতিল চেয়ে আপিল করেন তার প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ।
আইন অনুযায়ী, কেউ দ্বৈত নাগরিক প্রমাণ হলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তবে ইসির সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে যেতে পারবেন শামীম হক।
কী কারণে বাতিল
ফরিদপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন বলে দাবি করলেও এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়। তিনি নাগরিকত্ব ত্যাগের সপক্ষে যেসব নথি নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দিয়েছেন, সেখানে জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন বলেও অভিযোগ ওঠে।
সংবিধান অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি বিদেশি রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব অর্জন করলে তিনি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের অযোগ্য। শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিক, এমন অভিযোগ এনে তার মনোনয়নপত্রের বৈধতার বিরুদ্ধে ইসিতে আপিল করেন ওই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল কাদের আজাদ (এ কে আজাদ)। গত বুধবার আপিলের আংশিক শুনানি হয়। আজ শুক্রবার এ অভিযোগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে তার প্রার্থিতা বাতিল করে দেয় নির্বাচন কমিশন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বুধবার আপিল শুনানিতে শামীম হকের আইনজীবীরা দাবি করেন, তিনি বিদেশি নাগরিকত্ব ত্যাগ করেছেন। তবে ইসির প্রশ্নের মুখে তার নাগরিকত্ব ত্যাগের আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে, এমন কোনো সনদ দেখাতে পারেননি। তারা কিছু কাগজপত্র ইসিতে জমা দেন। সেখানে বলা হয়, শামীম হক গত ৯ নভেম্বর নাগরিকত্ব ত্যাগের জন্য আবেদন করেছেন।
শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগ করা-সংক্রান্ত যেসব নথি ইসিতে জমা দিয়েছেন, তা পর্যালোচনা করে প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদের আইনজীবী মুস্তাফিজুর রহমান খান বলেন, যে নথিগুলো শামীম হক জমা দিয়েছেন, তার সত্যতা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। তার নাগরিকত্বের অবস্থা জানতে আপিল মুলতবি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়েছিল ইসি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগের ঘোষণা দিতে হলে সেদেশের কাউন্সেলরের কার্যালয় বা বাংলাদেশে অবস্থিত নেদারল্যান্ডসের দূতাবাসে আবেদন করতে হবে। শামীম হক এই দুই জায়গার কোথায় আবেদন করেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ৯ নভেম্বর তারিখে শামীম হকের সই করা একটি ঘোষণা ইসিতে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোথায়, কীভাবে এটি জমা দিয়েছেন, তার কোনো উল্লেখ ছিল না। এটি নেদারল্যান্ডসের কাউন্সেলর কার্যালয় বা ঢাকায় তাদের দূতাবাস গ্রহণ (রিসিভ) করেছে, এমন কোনো স্বাক্ষরও নেই।
পাশাপাশি শামীম হকের পক্ষে নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের নামে একটি ইমেইলের কপি দেওয়া হয়। তাতে বলা হয়, শামীম হক নেদারল্যান্ডসের নাগরিকত্ব ত্যাগের ঘোষণা দিয়ে 'হল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে' আবেদন করেছেন। সেখানে বলা হয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পরবর্তী কোনো নির্দেশনা পেলে তারা সেটা জানাবেন।
এ চিঠির বিষয়ে এ কে আজাদের পক্ষে বলা হয়েছে, ওই ইমেইলে দেশটির নাম 'হল্যান্ড' ব্যবহার করা হয়েছে। আসলে দেশটির বর্তমান নাম হলো নেদারল্যন্ডস। ফলে আসলেই এই চিঠি বা ইমেইল নেদারল্যান্ডসের কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এসেছে কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।
ফরিদপুর-৩ আসনে বর্তমানে ৫ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তারা হলেন: স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এ কে আজাদ, বাংলাদেশ কংগ্রেস থেকে এম এ মুঈদ হোসেন, জাতীয় পার্টি থেকে এস এম ইয়াহিয়া, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি থেকে মো. দেলোয়ার হোসেন ও বিএনএম থেকে গোলাম রব্বানী মুন।