জরুরি পদক্ষেপে আপাতত কাটল জেট ফুয়েল সংকট
উড়োজাহাজের জ্বালানি সংকটের মাঝে আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী পেট্রোচায়না থেকে ২২ হাজার টন জ্বালানি শুক্রবার (২৯ ডিসেম্বর) দেশে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। এর ফলে জেট ফুয়েলের ঘাটতি সাময়িকভাবে কাটানো যাচ্ছে।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নতুন জ্বালানি দিয়ে আগামী ১৫ দিনের চাহিদা মেটানো যাবে। তবে ডলার সংকটের কারণে ভবিষ্যতে আবারও জ্বালানি সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
বিপিসি'র পরিচালক (বিপণন) অনুপম বড়ুয়া বলেছেন, তাদের কাছে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদার সমান জেট ফুয়েল মজুত রয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন এ সরবরাহ প্রাথমিকভাবে ২৬ ডিসেম্বর দেশে আসার কথা ছিল। কিন্তু, 'কিছু কারণে' তা আসেনি। এখন কাল শুক্রবার এ জ্বালানি কার্গোটি দেশে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা অবশ্য বলেছেন, একাধিক আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান তাদের বকেয়া পাওনা না পাওয়ায় নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী জ্বালানি সরবরাহ স্থগিত করলে জেট ফুয়েলের মজুত হ্রাস পায়। পরিস্থিতি মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের জরুরিভিত্তিতে ১০ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধ করার পর নতুন এ চালান আসছে বলে জানান তিনি।
বিপিসি'র এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, গত ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫টি আন্তর্জাতিক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের মোট ২৯৬ মিলিয়ন ডলার পাওনা বকেয়া পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইউনিপেক (৪২.৪৪ মিলিয়ন ডলার), ভিটল (১০৫.০৮ মিলিয়ন ডলার), ইএনওসি (১৪.৪০ মিলিয়ন ডলার), বিএসপি (৭০.৪৮ মিলিয়ন ডলার), পিটিএলসিএল (৪৮.২৮ মিলিয়ন ডলার), ও পেট্রোচায়না (১৫.২৮ মিলিয়ন ডলার)।
ইউনিপেক ও পিসি এসজি (পেট্রোচায়না) বকেয়া পরিশোধ না করলে পরবর্তীসময়ে জ্বালানি সরবরাহ করবে না বলে জানিয়েছে।
বিপিসি'র পক্ষে বিভিন্ন জেট ফুয়েল ব্যবস্থাপনা ও বিমানবন্দরে সরবরাহ করে পদ্মা অয়েল কোম্পানি লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি ২৪ ডিসেম্বর এক চিঠিতে বিপিসিকে জানায়, তাদের কাছে মাত্র নয় হাজার ২১ টন জেট ফুয়েল মজুত রয়েছে, যা দিয়ে কেবল ২৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাহিদা মেটানো যাবে।
চিঠিতে ২৯ ডিসেম্বরের মধ্যে ১৫ হাজার টন জেট ফুয়েল জরুরিভিত্তিতে আমদানির সুপারিশ করা হয় এবং জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে প্রতি মাসে সাড়ে ৪৫ থেকে ৫০ হাজার টন জেট জ্বালানি আমদানির ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
পদ্মা অয়েল কোম্পানির তথ্য অনুযায়ী, নভেম্বরে ৪৫ হাজার ২৩৫ টন জেট ফুয়েল বিক্রি হয়েছে। আর বিপিসি'র এক রিপোর্টে, ডিসেম্বরের প্রথম ১৬ দিনে ২২ হাজার ৭৫৯ টন বিক্রির কথা জানানো হয়। অর্থাৎ দেশে গড়ে দৈনিক জেট ফুয়েলের চাহিদা ছিল এক হাজার ৫১০ টন।
শুক্রবার জ্বালানি সরবরাহ নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না আশ্বস্ত করে বিপিসি'র একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেছেন, এ সরবরাহটি সময়মতো দেশে পৌঁছাবে।
জ্বালানি সংকট মোকাবিলায় করণীয় নির্ধারণে বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেন বিপিসি'র চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ।
বৈঠকসূত্রে জানা গেছে, বিপিসি'র চেয়ারম্যান কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন নির্বাচনের পরপরই সরকারের পক্ষ থেকে ডলারের সরবরাহ বাড়ানো হবে।
জ্বালানি তেল সরবরাহে যেন কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সে বিষয়ে বিপিসি'র কর্মকর্তাকে তৎপর থাকার নির্দেশনা দেন চেয়ারম্যান। এজন্য দেশে অবৈধ মজুত বন্ধ, আন্তর্জাতিক সরবরাহকারীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করার নির্দেশনা দেন তিনি।