পাকিস্তান-ইরান সীমান্ত উত্তেজনার ঘটনাক্রম
মঙ্গলবার রাতে পাকিস্তানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হওয়ার পর পাকিস্তান ও ইরান কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি হয়েছে। বুধবার পাকিস্তান এই হামলার নিন্দা জানিয়ে তেহরান থেকে নিজ রাষ্ট্রদূতকে প্রত্যাহার করে এবং ইরানের রাষ্ট্রদূতকে পাকিস্তানে ফিরে যেতে বাধা দেয়।
ইসলামাবাদ ইরানের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের আকাশসীমা লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে। এবং ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সশস্ত্র গোষ্ঠী জইশ আল-আদলের দুটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে নিক্ষেপ করা হয়েছিল।
ইসলামাবাদের বক্তব্য ইরানি হামলার ফলে ক্রমবর্ধমান সংকটের দিকে ইঙ্গিত করে। দুই দেশের মধ্যকার ৯০০ কিলোমিটার (৫৫৯ মাইল) দীর্ঘ সীমান্তে এর আগেও উত্তেজনা দেখা গেছে।
ডিসেম্বর ২০২৩
জইশ আল-আদল (আর্মি অফ জাস্টিস) যেটিকে ইরান একটি "সন্ত্রাসী" গোষ্ঠী হিসাবে কালো তালিকাভুক্ত করেছে, সিস্তান-বেলুচেস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্ত প্রদেশে ইরানের রাস্ক শহরে একটি পুলিশ স্টেশনে হামলার দায় স্বীকার করেছিল। এই হামলায় ১১ জন ইরানি নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়। এই হামলার নিন্দা জানিয়েছিল পাকিস্তান।
জুন ২০২৩
পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর মিডিয়া শাখা ইন্টার-সার্ভিসেস পাবলিক রিলেশনস (আইএসপিআর) একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছিল। এতে বলা হয় যে, সশস্ত্র "সন্ত্রাসীরা" কেচ জেলার সিংওয়ান এলাকায় একটি চেকপয়েন্টে দুই পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছে। যোদ্ধাদের ইরানে পালানোর চেষ্টা বন্ধ করার জন্য পাকিস্তান ইরানি কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করেছিল।
এপ্রিল ২০২৩
আইএসপিআর ঘোষণা করেছিল, ইরান থেকে আক্রমণকারীরা কেচ জেলার জলগাই সেক্টরে সীমান্তে টহল দেওয়া ৪ জন সৈন্যকে হত্যা করেছে।
জানুয়ারি ২০২৩
পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফ বেলুচিস্তানে ইরানের সীমান্তের কাছে চার নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে হত্যায় নিন্দা জানিয়েছিলেন। পাঞ্জগুর জেলার চুকাব সেক্টরে হামলার পর পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইরানকে বিষয়টি তদন্ত করতে এবং দোষীদের জবাবদিহিতার জন্য আহ্বান জানায়। ইসলামাবাদের ইরানি দূতাবাস এই হামলায় নিন্দা জানিয়েছিল
সেপ্টেম্বর ২০২১
ইরানের ক্রস-বর্ডার হামলায় এক সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছিল পাকিস্তান। এই হামলার জন্য পাকিস্তান ইরানের "সন্ত্রাসীদের" দায়ী করে। নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে চার মাস বন্ধ থাকার পর ২০ সেপ্টেম্বর দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের জন্য দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত পুনরায় খুলে দেওয়ার পর এই হামলার ঘটনা ঘটে।
ফেব্রুয়ারি ২০২১
দুই গোয়েন্দা এজেন্টকে উদ্ধার করতে ইরানি সৈন্যরা পাকিস্তানের ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছিল। তেহরান জানিয়েছিল এই গোয়েন্দারা "সন্ত্রাসীদের" দ্বারা বন্দী হয়েছিল।
এপ্রিল ২০, ২০১৯
পাকিস্তানের প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ মাহমুদ কোরেশি সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ইরান-ভিত্তিক রাজি আজোই সাঙ্গার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীর সশস্ত্র "সন্ত্রাসীরা" বেলুচিস্তানে একটি বাসে যাত্রীদের উপর হামলা চালিইয়েছিল। এই হামলায় ১০ জন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা, তিনজন বিমান বাহিনীর কর্মী এবং কোস্টগার্ডের একজন সদস্য সহ ১৪ জন নিহত হয়েছিল।
ডিসেম্বর ৬, ২০১৮
ইরানি গণমাধ্যম জানিয়েছিল, ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় বন্দর নগরী চাবাহারের পুলিশ সদর দফতরে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় চার পুলিশ নিহত এবং আরও ৪২ জন আহত হয়েছিল। ইরানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ "বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের" এই হামলার জন্য দোষারোপ করেছিলেন যা পাকিস্তানের বিরুদ্ধেই অভিযোগ হিসাবে ধারণা করা হয়েছিল। ইসলামাবাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলায় নিন্দা জানিয়েছিল।
অক্টোবর ১৬, ২০১৮
ইরানের শীর্ষ নিরাপত্তা বাহিনী রেভল্যুশনারি গার্ডের গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ ১২ জন ইরানি নিরাপত্তা কর্মীকে পাকিস্তানের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে অপহরণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ আনা হয়েছিল। জইশ আল-আদল এর দায় স্বীকার করেছিল। পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনী ইরানকে সশস্ত্র গোষ্ঠীর কাছ থেকে অপহৃত ১২ জনের মধ্যে অন্তত পাঁচজনকে উদ্ধার করতে সাহায্য করেছিল।
এপ্রিল ১৭, ২০১৮
ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানিয়েছিল, সিস্তান-বেলুচেস্তান প্রদেশের মিরজাভেহ শহরের একটি সীমান্ত চৌকিতে সশস্ত্র যোদ্ধাদের ক্রস-বর্ডার হামলায় তিন ইরানি নিরাপত্তা কর্মী নিহত হয়েছিল।
জুন ২২, ২০১৭
পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, পাকিস্তানের বিমান বাহিনী পাকিস্তানের পাঞ্জগুর অঞ্চলে উড়ন্ত একটি ইরানি ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে। এই প্রথম ইরান থেকে নিক্ষেপ করা একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছিল পাকিস্তান।
এপ্রিল ২৬, ২০১৭
জইশ আল-আদল মিরজাভেহের একটি হামলার দায় স্বীকার করেছিল যাতে ১০ ইরানি সীমান্তরক্ষী নিহত হয়েছিল। ইরানি পুলিশ রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমকে এক বিবৃতিতে বলেছিল, দূরপাল্লার বন্দুক দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছিল এবং "পাকিস্তান সরকারকে এই হামলার চূড়ান্ত দায় নিতে হবে।"
আগের হামলা
জইশ আল-আদল সশস্ত্র গোষ্ঠী ২০১৩ সাল থেকে ইরানি সীমান্ত রক্ষীদের উপর হামলা চালানো শুরু করছিল। এই সময় সীমান্তের কাছে একটি অতর্কিত হামলায় ইরানি সামরিক বাহিনীর ১৪ জন নিহত হয়েছিল।
২০১৪ সালে ইরানের নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত পাঁচ সদস্যকে অপহরণ করা হয়েছিল।
২০১০ সালের ডিসেম্বরে চাবাহারের একটি মসজিদের কাছে আত্মঘাতী হামলার পরে ৪১ জন নিহত এবং ৯০ জন আহত হয়েছিল।