ইরাক ও সিরিয়ায় থাকা ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে সিরিজ হামলার সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্রের
সিরিয়া ও ইরাকে থাকা ইরানি লক্ষ্যবস্তুতে সিরিজ হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। বিবিসির সহযোগী সিবিএস নিউজের কাছে তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন মার্কিন দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
সেক্ষেত্রে কয়েক দিনব্যাপী এই হামলা চালানো হবে। আর এই হামলার ক্ষেত্রে আবহাওয়া পরিস্থিতিকে বিবেচনায় আনা হবে।
গত রবিবার সিরিয়া সীমান্তের কাছাকাছি জর্ডানে ড্রোন হামলায় নিহত হয় তিন মার্কিন সেনা। ওয়াশিংটন এই হামলার পেছনে ইরান সমর্থিত মিলিশিয়া গ্রুপ 'ইসলামিক রেজিস্টান্ট ইন ইরাক' এর জড়িত থাকার অভিযোগ তোলে।
কেননা ধারনা করা হয় যে, এই গ্রুপটিসহ বেশ কয়েকটি সশস্ত্র গ্রুপকে তেহরানের রেভুলেশনারি গার্ডস ফোর্স অর্থ, অস্ত্র ও প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। 'ইসলামিক রেজিস্টান্ট ইন ইরাক' এর পক্ষ থেকেও হামলার দায় স্বীকার করা হয়েছে
এদিকে হামলার কোনো ধরনের সংশ্লিষ্টতা নেই বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে ইরান। ঐ হামলায় প্রায় ৪১ জন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী যে ড্রোনটি দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে সেটি ইরানের তৈরি। একইসাথে ইউক্রেন যুদ্ধে তেহরান রাশিয়াকে যে ড্রোনগুলো দিয়েছে এটি সেগুলোর অনুরূপ।
সংবাদ সম্মেলনে গতকাল মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন দেরিতে সামরিক প্রতিক্রিয়া প্রদর্শনের পেছনে যুক্তি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, "আমরা কোথায়, কখন এবং কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাব সেটা নির্ধারণ করছি।"
লয়েড অস্টিন আরও বলেন, "আমরা যাতে সঠিক লোকেদের জবাবদিহি করতে পারি সেটি নিশ্চিত করতে চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এখানে নির্দিষ্ট কোনো ফর্মুলা নেই। তবে এটির প্রভাব যাতে কুণ্ডলীর মতো ছড়িয়ে না পড়ে সেটি নিয়ন্ত্রণের নানা পথ রয়েছে। আমাদের মূল লক্ষ্য সেটাই।"
সিবিএস-কে সাক্ষাৎকার দেওয়া ঐ কর্মকর্তা সম্ভাব্য হামলার নির্দিষ্ট সময় সম্পর্কে কিছু জানাননি। তবে সংকটাপন্ন আবহাওয়ায় সেটি চালানো হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে অসাবধানতাবশত বেসামরিক লোকেরা যাতে আহত না হয় সেই ঝুঁকি কমাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
এদিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের পক্ষ থেকে বেশ চাপের মুখোমুখি হচ্ছেন। এরমধ্যে কেউ কেউ আবার ইরানের ভেতরেই হামলা চালিয়ে পাল্টা জবাব দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন।
তবে বাইডেন প্রশাসন জানায়, ওয়াশিংটন ইরানের সাথে বৃহৎ আকারে কোনো যুদ্ধ চায় না। একইসাথে মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিরতা বৃদ্ধি যাতে না হয় সেদিকেও নজর রাখার কথা জানিয়েছে দেশটি।
সম্ভাব্য পরিকল্পনা অনুযায়ী মার্কিন হামলাগুলো ইরানের অভ্যন্তরে করা হবে না। বরং সিরিয়া ও ইরাকে থাকা ইরানিয়ান লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি যেন ক্রমশ ঘোলাটে হচ্ছে। ইরান সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলোতে হামলার প্রবণতা বৃদ্ধি করেছে।
ইরান সমর্থিত হুথিরা লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে জাহাজে হামলা করছে। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররাও পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে।
এক মার্কিন প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা সিবিএসকে জানান, এডেন উপসাগরে ও লোহিত সাগরে একাধিক ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল (বৃহস্পতিবার) রয়টার্স জানায়, মধ্যপ্রাচ্যে সংঘাতে সরাসরি জড়িয়ে যাওয়া এড়াতে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর ইরান সিরিয়া থেকে সিনিয়র কর্মকর্তাদের সরিয়ে নিয়েছিল।
মার্কিন কর্মকর্তারা সম্প্রতি সিএনএনকে জানান, ধারণা করা হচ্ছে যে, ইরান সরকার অঞ্চলটিতে নিজের প্রক্সি গ্রুপগুলির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ক্রমবর্ধমান উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে। কেননা গ্রুপগুলো গত অক্টোবর থেকে মার্কিন বাহিনীর উপর ১৬০ টিরও বেশি আক্রমণ শুরু করেছে।
জর্ডানে হামলায় নিহত তিন মার্কিন সেনার মরদেহ আজ (শুক্রবার) দেলাওয়ারে এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে ফেরত পাঠানো হবে। হোয়াইট হাউস জানায়, সেখানে প্রেসিডেন্ট বাইডেন উপস্থিত থাকবেন।
হামলায় নিহত তিন সৈন্য হলেন উইলিয়াম জেরোম রিভারস (৪৬), কেনেডি ল্যাডন স্যান্ডার্স (২৪) এবং ব্রেওনা অ্যালেক্সসন্ড্রিয়া মফেট (২৩)। তিনজনই জর্জিয়ার ফোর্ট মুরেতে অবস্থিত একটি সেনা রিজার্ভ ইউনিটের সাথে ছিলেন।
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান