ইভি নির্মাতা বিওয়াইডি’র শোরুম উদ্বোধন, মে থেকে দেশের সড়কে চলবে সিল-এর ২ সংস্করণ
চীনের শেনজেনভিত্তিক বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি শনিবার (২ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম শোরুম চালু করেছে।
এদিন প্রতিষ্ঠানটির প্রিমিয়াম সেডান বিওয়াইডি সিল-এর দুটি সংস্করণ অতিথিদের সামনে উন্মোচন করা হয়। বিওয়াইডি ইভি'র জাতীয় পরিবেশক সিজি-রানার বাংলাদেশ লিমিটেড-এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহ বাজার প্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ এবং প্রি-বুকিংয়ের পরে আগামী মে মাস থেকে দেশের সড়কে নামবে গাড়িগুলো।
নেপালের শীর্ষ ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান চৌধুরী গ্রুপ এবং বাংলাদেশে রানার গ্রুপের মধ্যকার একটি যৌথ উদ্যোগ সিজি-রানার বাংলাদেশ বিওয়াইডি সিলের দুটি সংস্করণের দাম প্রকাশ করেনি।
তবে বিওয়াইডি বাংলাদেশের দুইজন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, এক চার্জে ৫৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে সক্ষম বিওয়াইডি সিলের রিয়ার হুইল ড্রাইভ সংস্করণটির দাম হবে এক কোটি থেকে এক কোটি ১০ লাখ টাকার মধ্যে।
অন্যদিকে নেপালে সম্প্রতি ঘোষিত দামের দিকে ইঙ্গিত করে প্রতি চার্জে ৫২০ কিলোমিটার মাইলেজের ফোর হুইল ড্রাইভের পারফরম্যান্স সংস্করণটির দাম ৩০–৪০ শতাংশ বেশি হতে পারে বলে জানান তারা।
এ সপ্তাহে ভারতের বাজারেও বিওয়াইডি সিল চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
'ওশেন অ্যাস্থেটিক' নকশার সঙ্গে স্টেট-অভ-দ্য-আর্ট প্রযুক্তির সম্মিলন ঘটেছে বিওয়াইডি সিল সেডান গাড়িতে। বিওয়াইডির নিজস্ব ই-প্ল্যাটফর্ম ৩.০, উদ্ভাবনী সিটিবি (সেল-টু-বডি) প্রযুক্তি, ব্লেড ব্যাটারি এবং আইট্যাক (ইন্টেলিজেন্ট টর্চার অ্যাডাপ্টেশন কন্ট্রোল) উপভোগ করতে পারবেন গ্রাহকেরা। এছাড়া এ গাড়ির আরও রয়েছে তির্যক রুফলাইন, প্যানোরামিক গ্লাস রুফ, শর্ট রিয়ার ডেক, ওয়াটারড্রপ মিরর, ওয়েভ ওয়েস্টলাইন এবং এলইডি বাতি।
আরও পড়ুন: মার্চ থেকে দেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি আনছে বৈশ্বিক ইভি জায়ান্ট বিওয়াইডি
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, 'সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে ৩০ শতাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়ন করতে চায়। এ দুটোই সফল হওয়ার জন্য দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহন সহজলভ্য করা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে মানুষ বেশি বেশি ইভি কিনতে পারে। এ কারণে আমি বিওয়াইডি-এর দেশে প্রথম শোরুম খোলার পদক্ষেপকে স্বাগত জানাই।'
কার্বন নিঃসরণ মোকাবিলায় প্রথাগত জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত গাড়ি পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে বৈদ্যুতিক যানবাহন চালুর লক্ষ্য রয়েছে সরকারের। কিন্তু ধীরগতিতে এ বিষয়ক নীতিমালা প্রণয়নের কারণে এ ধরনের গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বাংলাদেশ।
প্রাথমিকভাবে মাত্র ১০০টি ইভি গ্রাহক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এখনো দেশে চার্জিং স্টেশনের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠেনি। যে ৩টি ইভি চার্জিং স্টেশন রয়েছে, সেগুলোর অবস্থানও রাজধানীতে।
সারাদেশে বৈদ্যুতিক গাড়ির নেটওয়ার্ক তৈরি করার জন্য দেশের সক্রিয় ইভি ব্যবসায়ীরা তৃতীয় পক্ষের চার্জিং নেটওয়ার্ক উদ্যোগ খুঁজছেন।
আরও পড়ুন: টেসলাকে টপকে চীনা কোম্পানি 'বিওয়াইডি' যেভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ির বৈশ্বিক বাজার দখল করছে
রাজধানীতে ৮টি, কুমিল্লায় এবং চট্টগ্রামে একটি করে মোট ১০টি চার্জিং স্টেশন আগামী জুন মাসে চালু হবে। এছাড়া ডিসেম্বরের মধ্যে আরও ৩০টি স্টেশন চালু হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইভি বিপণনকারীদের মতে, বাণিজ্যিক চার্জিং স্টেশনগুলোতে সকল ব্র্যান্ডের বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি দেড় হাজার থেকে এক হাজার ৮০০ টাকায় ৪৫ মিনিটে চার্জ করা যাবে। অন্যদিকে বাড়িতে চার্জি দিতে [হোম চার্জিং] সময় লাগবে ৬–৭ ঘণ্টা। সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ বিল হবে এক হাজার টাকার কম।
চীনের যাত্রীবাহী বৈদ্যুতিক গাড়ির শীর্ষ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি বিশ্বের ৩০টি দেশের ৭০টি বাজারে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গতবছর ইলন মাস্কের বিখ্যাত কোম্পানি টেসলাকে পেছনে ফেলে বৈশ্বিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রিতে শীর্ষে উঠে আসে বিওয়াইডি।
২০২৩ সালের শেষ তিনমাসে বিওয়াইডি বিশ্বব্যাপী কেবল ব্যাটারিচালিত গাড়ি বিক্রি করেছে পাঁচ লাখ ২৬ হাজার ইউনিট। অন্যদিকে একই প্রান্তিকে টেসলার বিক্রি ছিল চার লাখ ৮৪ হাজার ইউনিট।