সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ইরান সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন
প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির মৃত্যুর পর ইরান সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন সৌদি যুবরাজ প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। গত ২৪ মে ইরানের রাষ্ট্রপতি কার্যালয়ের সরকারি ওয়েবসাইট এ সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
গত দুই দশকের মধ্যে এই প্রথম সৌদি রাজপরিবারের কোনো সদস্যের তেহরান সফর হতে যাচ্ছে, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নতির ইঙ্গিত দেয়। গত বছর চীনের মধ্যস্থতায় একটি চুক্তি এবং দুই দেশের দূতাবাস পুনরায় চালু হওয়ার পর এই সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ইরানের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মোখবারের আমন্ত্রণে ইরান সফরে রাজি হয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। ফোনালাপে সৌদি যুবরাজ, প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির-আবদুল্লাহিয়ান ও তাদের সফর সঙ্গীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন।
অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট মোখবার, ইরান ও সৌদি আরবের সম্পর্ক জোরদার এবং তাদের বেসরকারি খাতের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন, বিশেষত ইসরায়েল-ফিলিস্তিন ইস্যুর মতো সংঘাতের সময়।
সাবেক রাষ্ট্রপতি রাইসি ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানকে ইরান সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। প্রয়াত রাষ্ট্রপতির অধীনে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পর থেকে ইরান ও সৌদি আরবে সরাসরি ফ্লাইট শুরু এবং বাণিজ্যিক সম্পর্কেরও উন্নতি হয়েছে।
ইরানের বেসরকারি খাতগুলো সৌদির বাজারে প্রবেশের জন্য ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। হজের জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর থেকে ইরানি হজ্বযাত্রীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে।
৩০ এপ্রিল তারিখে ইরানের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপসচিব মোহসেন কারিমি ব্যাংকে সম্পদ প্রবেশের বিষয়ে ইতিবাচক খবর প্রকাশ করেন।
তিনি জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে তাদের ভালো আলোচনা হয়েছে। ব্লক করা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে হজ খরচের জন্য সৌদি ব্যাংকে সফলভাবে অর্থ স্থানান্তর করতে পেরেছেন তারা।
কারিমি বলেন, 'আমাদের লক্ষ্য সৌদি ব্যাংকগুলোর সাথে লেনদেন করার জন্য একটি স্থিতিশীল ব্যাংক চ্যানেল তৈরি করা।'
তবে আরাশ/ডোরা তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের মতো বিষয় নিয়ে তেহরান ও রিয়াদের মধ্যে এখনো মতবিরোধ রয়েছে। সৌদি আরব ও কুয়েত বলছে, জ্বালানীক্ষেত্রগুলো তাদের অর্থনৈতিক অঞ্চলের অধীনে রয়েছে। তবে ইরানের দাবি, এগুলো তাদের সামুদ্রিক অঞ্চলের অধীনে।
ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতসহ আঞ্চলিক উত্তেজনার মধ্যেই এই গুরুত্বপূর্ণ সফর এবং ইরান ও সৌদি আরবের মধ্যে সম্ভাব্য আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে হচ্ছে। এর আগে, তেল আবিব 'আব্রাহাম চুক্তির' অংশ হিসেবে সৌদি আরবের সাথে একটি চুক্তি নিয়ে কাজ করছিল, কিন্তু ৭ অক্টোবর হামাস, ইসরায়েলে আক্রমণ করলে এটি বন্ধ হয়ে যায়।
সৌদি আরব সম্প্রতি বলেছে, ফিলিস্তিনিদের জন্য একটি ভালো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বড় ধরনের কোনো চুক্তি করবে না।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালে তেহরান ও মাশহাদে সৌদি দূতাবাসে ইরানি চরমপন্থীদের হামলার পর দেশটির সঙ্গে সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে সৌদি আরব। সৌদি আরবে একজন শিয়া ধর্মীয় নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার পর এসব হামলা চালানো হয়।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন