ঈদযাত্রায় দূরপাল্লার বাসে বাড়তি ভাড়া আদায়, ব্যতিক্রম ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট
স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকার মোহাম্মদপুরে থাকেন নাটোরের রিপন ইসলাম। গত রবিবার থেকে কল্যাণপুর ও টেকনিক্যালে নাটোরের বিভিন্ন পরিবহনের কাউন্টারে যোগাযোগ করছেন। কিন্তু ১৪ ও ১৫ জুনের টিকিট তিনি পাননি।
কাউন্টারের পাশেই দালালরা তাকে টিকিট পাইয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু এক্ষেত্রে গুণতে হবে প্রায় তিনগুণ ভাড়া। মহাখালী বাস টার্মিনালেও একই দৃশ্য দেখতে পান রিপন।
প্রতি ঈদের মতো এবারও বাড়ি যাওয়া নিয়ে বিড়ম্বনায় পড়েছেন তিনি।
বুধবার মহাখালী বাস কাউন্টারে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর সাথে কথা বলার সময় রিপন ইসলামের বলেন, ঢাকা থেকে নাটোরের ভাড়া ব্র্যান্ডের গাড়িগুলোতে (নন-এসি) স্বাভাবিক সময়ে ৬০০ টাকা থাকে।
তিনি বলেন, নাটোরে পৌঁছানোর জন্য চাপাইনবাবগঞ্জগামী বাসের টিকিট কাটার চেষ্টা করেছেন তিনি। তার জন্য তাকে ঢাকা-চাপাইনবাবগঞ্জ রুটের ভাড়া দিতে বলা হয়েছে।
রিপন বলেন, "এবার কাউন্টারে গেলে বলা হয়েছে টিকিট নেই। পরে দালালরা ডেকে নিয়ে বলেছে এই গাড়িতেই টিকিটের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন। কিন্তু প্রতি সিটের মূল্য ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা চাচ্ছে।"
প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদযাত্রায় রাজধানী ঢাকা থেকে বিভিন্ন জেলার দূরপাল্লার বাসে যাতায়াত করতে বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে যাত্রীদের। কোনো কোনো জেলায় প্রায় দুই থেকে তিনগুণ বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে অনেকটা ব্যতিক্রম ঢাকা-চট্টগ্রামের পরিবহণ। কোনো ঈদেই এ রুটে বাড়তি ভাড়া দিতে হয় না।
যাত্রী ও পরিবহনের মালিকরা জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে পরিবহনের সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। ঈদ ছাড়াও এ রুটে যাত্রীদের চলাচল বেশি থাকে। এ কারণে ঈদের আগে যাত্রী অনুযায়ী পর্যাপ্ত আসন থাকায় এখানে ভাড়া বাড়ে না। আবার অন্য জেলাগুলোর মতো সিন্ডিকেশনের সুযোগ থাকে না।
ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে নন-এসি বাসগুলোর ভাড়া ৬৫০-৬৮০ টাকা। আর এসি বাসগুলোর ক্ষেত্রে শ্রেণীভেদে ৯৫০-২০০০ টাকা দিতে হয়।
এ রুটের নিয়মিত যাত্রী মো. মোস্তফা টিবিএসকে বলেন, "আমি স্বাভাবিক সময়ে যে ভাড়া দেই, ঈদেও এ রুটে সবসময়ে একই ভাড়া থাকে। ঈদের আগের দিনও টিকিট পাওয়া যায় কাউন্টারে। অন্যান্য রুটের মতো সংকট থাকে না।"
হানিফ পরিবহণের মহাব্যবস্থাপক মোশাররফ হোসেন টিবিএস এর সাথে কথা বলার সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের পরিবহণ মালিক সমিতিকে বাস ভাড়া নিয়ন্ত্রণে রাখার কৃতিত্ব দেন। তিনি বলেন, এই রুটে পরিবহনের সংখ্যা অনেক বেশি।
তিনি বলেন, ঢাকা-চাপাইনবাবগঞ্জ রুটে তাদের যেসব বাস রয়েছে সেগুলোর ভাড়া যা ঠিক করা আছে তাই দিতে হয়। এখানে কেউ ব্ল্যাকে টিকিট বিক্রি করার সুযোগ নেই। কিন্তু রিপনের মতো যাত্রীদের অভিজ্ঞতার সাথে তার বক্তব্যের মিল নেই।
অন্যান্য রুটের পরিস্থিতি
ঢাকা-সাতক্ষীরা রুটেও ভাড়া বেড়েছে অন্তত ২০০ টাকা। যাত্রীরা জানিয়েছেন, নন-এসি বাসে নিয়মিত ভাড়া ৭৫০-৮০০ টাকা হলেও বর্তমানে নেয়া হচ্ছে ৯৫০-১০০০ টাকা। ৯০০-১০০০ টাকার এসি বাসের ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ১৬০০-১৮০০ টাকা।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আসাদুল্লাহ ওয়াকিফ কল্যাণপুর বাস কাউন্টারে সাতক্ষীরাগামী বাসের টিকিট কিনতে এসেছিলেন।
তিনি টিবিএসকে বলেন, "গত রোজার ঈদে সাতক্ষীরা গিয়েছি ১১০০ টাকায়। ঈদ আসলেই পরিবহনগুলো বাড়তি ভাড়া নেয়। খুলনার বাসগুলোতেও ২০০-৩০০ টাকা বেশি নেওয়া হয়।"
বিভিন্ন রুটের যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতি ঈদেই নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ঢাকা-নোয়াখালী রুটে প্রায় ২৫০-৪৫০ টাকা, ঢাকা-বরিশাল রুটে ১০০-৩৫০ টাকা, ঢাকা-জামালপুর রুটে ১৫০-২০০ টাকা, ঢাকা-হবিগঞ্জ ও ঢাকা-মৌলভীবাজার রুটে ১০০-১৫০ টাকা এবং ঢাকা-বগুড়া রুটে ২০০-৩০০ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় করা হয়।
আদৌ কী পরিবর্তন সম্ভব?
যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী টিবিএসকে বলেন, "ঈদের সময় একপ্রকার প্রকাশ্যেই পরিবহণগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করে। কিন্তু সমস্যা হলো এটা সরকার বা পরিবহণ মালিক কেউই স্বীকার করতে চায় না।"
সরকারের নজরদারির অভাব উল্লেখ করে তিনি বলেন, "পরিবহণ খাতে কাঠামোগত সংস্কার ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব নয়। আমরা একটি দুষ্টচক্রে আটকে আছি।"
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান টিবিএসকে বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিষয়ে তাদের তদারকি চলছে।
তিনি বলেন, "প্রতিটি কাউন্টারে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের বিরুদ্ধে ব্যানার টানানো হয়েছে। যাত্রীদের অভিযোগের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।"
তিনি আরো বলেন, "কিছু অনিয়ম এক সময় ছিল, কিন্তু এখন অনিয়মগুলো বন্ধ হয়েছে।"