যুক্তরাজ্য ছাড়ছেন কোটিপতিরা!
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ভবিষ্যতে লেবার সরকারের অধীনে কর বৃদ্ধির সম্ভাবনার কারণে এই বছর রেকর্ড সংখ্যক ধনকুবের যুক্তরাজ্য ছাড়তে চলেছেন।
অভিবাসন পরামর্শক সংস্থা হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অন্তত এক মিলিয়ন ডলারের সম্পদ আছে এমন সাড়ে ৯ হাজার ব্যক্তি ব্রিটেন ছাড়তে পারেন। এই সংখ্যা গত বছরের তুলনায় দ্বিগুণেরও বেশি।
ইনস্টিটিউট ফর গভর্নমেন্টের প্রধান নির্বাহী হান্নাহ হোয়াইট বলেন, 'এই সংখ্যাগুলো দেখিয়ে দিচ্ছে কেন ধনী ব্যক্তিদের কাছে যুক্তরাজ্য আর এতটা আকর্ষণীয় নয়। ব্রেক্সিটের প্রভাব এখনও টের পাওয়া যাচ্ছে এবং লন্ডনকে আর বিশ্বের অর্থনৈতিক কেন্দ্র হিসেবে দেখা হচ্ছে না।'
ইনভেস্টমেন্ট ফার্ম নিউ ওয়ার্ল্ড ওয়েলথ প্রায় দেড় লাখ অতিধনী ব্যক্তিদের (হাই-নেট ওয়ার্থ) তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। এদের মধ্যে আছেন বিভিন্ন কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা, চেয়ারম্যান, সিইও, সভাপতি, পরিচালক এবং ম্যানেজিং পার্টনারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদের ব্যক্তিরা, যারা নতুন কোনো দেশে গিয়ে অন্তত ছয় মাসেরও বেশি সময় অবস্থান করেছেন। ২০১৭ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ১৬ হাজার ৫০০ জন মিলিয়নিয়ার যুক্তরাজ্য ছেড়েছেন।
হেনলি প্রাইভেট ওয়েলথ মাইগ্রেশন রিপোর্ট ২০২৪ অনুসারে, ২০২৩ সালে বিশ্বব্যাপী এক লাখ ২০ হাজার মিলিয়নিয়ার স্থানান্তরিত হলেও এ বছর বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাবেন এক লাখ ২৮ হাজার জন মিলিয়নিয়ার।
হেনলি অ্যান্ড পার্টনার্সের হেড অব প্রাইভেট ক্লায়েন্ট ডমিনিক ভোলেক বলেন, 'ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সামাজিক বিপর্যয়ের মতো বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের কারণে কোটিপতিরা ক্রমাগত স্থানান্তরিত হওয়ার পথ বেছে নিচ্ছেন।'
তবে গত বছরের মতোও এবারও সর্বাধিক সংখ্যক কোটিপতি হারাবে চীন। ধারণা করা হচ্ছে এ বছর ১৫ হাজার ২০০ জন মিলিয়নিয়ার চীন ছাড়বেন, গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১৩ হাজার ৮০০ জন। যুক্তরাজ্যের পর তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারত, যেখানে ৪ হাজার ৩০০ মিলিয়নেয়ার দেশ ছাড়তে যাচ্ছেন, যা আগের বছর ছিল ৫ হাজার ১০০ জন।
গত দশ বছরে যুক্তরাজ্য, জাপান এবং হংকংয়ে মিলিয়নিয়ারের সংখ্যা হ্রাস পেলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি এবং ফ্রান্সের মতো দেশগুলোতে এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।
আসন্ন নির্বাচনে লেবার পার্টির জয়ের সম্ভাবনা এই দেশত্যাগকে আরও উসকে দিয়েছে। কেয়ার স্টারমার এবং তার অর্থ মুখপাত্র, ব্যাংক অফ ইংল্যান্ডের সাবেক কর্মকর্তা লেবার পার্টির রাচেল রিভস, আয় বা বিক্রয় কর না বাড়ানোর এবং সুনাকের সরকার কর্তৃক নির্ধারিত আর্থিক বিধি অনুসরণ করার প্রতিশ্রুতি দিলেও দলটির বিভিন্ন খাতে করের পরিমাণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা ধনীদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
লেবার পার্টি ধনী ব্যক্তিদের লক্ষ্য করে কিছু খাতে কর বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে। এর মধ্যে রয়েছে বেসরকারি স্কুলগুলো থেকে ২০ শতাংশ ট্যাক্স বিরতি সরিয়ে রাজ্য স্কুলগুলোর জন্য আরও শিক্ষক নিয়োগ, যুক্তরাজ্যের অস্থায়ী বাসিন্দাদের জন্য করের ফাঁকফোকর বন্ধ করা (বিদেশের উপার্জন থেকেও কর আদায়) এবং বেসরকারি ইক্যুইটি সংস্থাগুলোর কর বৃদ্ধি করা।
ব্রেক্সিট ও ইউক্রেন সংঘাতের মতো অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বিনিয়োগ ও সম্পদ সংরক্ষণের নিরাপদ স্থান হিসেবে দেশটির আবেদন কমিয়ে দিচ্ছে। ফলস্বরূপ, অনেক মিলিয়নিয়ার যুক্তরাজ্য ছেড়ে আরও স্থিতিশীল দেশে স্থানান্তরিত হতে চাইছেন।
হোয়াইট বলেন, 'বর্তমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি ইতোমধ্যে অনেক ধনী ব্যক্তিকে চলে যেতে বাধ্য করেছে এবং নির্বাচনের আগে এই নতুন নীতিগত সিদ্ধান্তগুলো এই প্রবণতাকে ত্বরান্বিত করছে।'
তবে নির্বাচনে যাই ঘটুক না কেন, প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তার স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি যুক্তরাজ্যেই থাকবেন। তিনি যুক্তরাজ্যের অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে ইতিবাচক রয়েছেন। বিনিয়োগকারীদের আশ্বস্ত করতে এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে নির্বাচনে যেই জিতুক না কেন, ধারাবাহিক রাজস্ব নীতি বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, সাবেক হেজ ফান্ড ম্যানেজার সুনাক এবং ভারতীয় প্রযুক্তি ধনকুবেরের মেয়ে মূর্তির মোট সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১০ লাখ পাউন্ড (৮২৬ মিলিয়ন ডলার)।
অনুবাদ: সাকাব নাহিয়ান শ্রাবন