যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী হিন্দুজা পরিবারের বিরুদ্ধে মানবপাচারের অভিযোগে বিচার শুরু
যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ধনী হিন্দুজা পরিবার তাদের গৃহকর্মীদের চেয়ে পোষা কুকুরের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ অভিযোগের মধ্যেই পরিবারটির চার সদস্যের বিরুদ্ধে সুইজারল্যান্ডে বিচারকাজ শুরু হয়েছে।
৪৭ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পদের মালিক হিন্দুজা পরিবারের বিরুদ্ধে মানবপাচার ও কর্মীদের শোষণ করার অভিযোগ আনা হয়েছে।
জেনেভার অভিজাত এলাকা কোলোনিতে হিন্দুজা পরিবারের একটি ভিলা আছে। পরিবারটির শিশুদের এবং ওই বাড়ির দেখাশোনা করার জন্য ভারত থেকে গৃহকর্মী আমদানি নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো এসেছে।
অভিযোগ উঠেছে, প্রকাশ ও কমল হিন্দুজা তাদের ছেলে অজয় ও তার স্ত্রী নম্রতার সঙ্গে মিলে কর্মীদের পাসপোর্ট কেড়ে নিয়েছেন। দিনে ১৮ ঘণ্টা কাজ করার জন্য মাত্র ৮ ডলার বেতন দেন। আর তাদেরকে বাড়ি থেকে বলতে গেলে বেরই হতে দেওয়া হয় না।
গত সপ্তাহে কর্মীদের শোষণ নিয়ে একটি আর্থিক নিষ্পত্তি হলেও হিন্দুজা পরিবারের বিরুদ্ধে মানবপাচারের বিচারকাজ এখনও চলছে। সুইজারল্যান্ডে মানবপাচার অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ। যদিও পরিবারটি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তবে এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে দায়ী ব্যক্তিদের কারাদণ্ড হতে পারে।
চলতি সপ্তাহে আদালতে জেনেভার অন্যতম বিখ্যাত কৌঁসুলি ইভেস বার্তোসা বলেন, গৃহকর্মীর চেয়ে পোষা কুকুরের জন্য বেশি অর্থ ব্যয় করে হিন্দুজা পরিবার। পরিবারটি কুকুরের জন্য বছরে প্রায় ১০ হাজার ডলার খরচ করে বলে দাবি তার।
হিন্দুজা পরিবারের আইনজীবীরা নির্দিষ্টভাবে কম মজুরি দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তবে পরিস্থিতির আলোকে মজুরির বিষয়টি দেখতে হবে বলে দাবি করেন তারা। কর্মীরা বাসস্থান ও খাবার সুবিধাও পান বলে এ সময় তারা উল্লেখ করেন।
দীর্ঘ সময় কাজ করানোর অভিযোগ নিয়েও আলাদত আলোচনা হয়। একজন আইনজীবী দাবি করেন, হিন্দুজা পরিবারের শিশুদের সঙ্গে বসে একটি সিনেমা দেখাকে প্রকৃত কাজ হিসেবে গণ্য করা যাবে না।
কয়েকজন সাবেক কর্মী হিন্দুজা পরিবারের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন। তারা বলেছেন, হিন্দুজারা বন্ধুভাবাপন্ন পরিবার, কর্মীদের সম্মান দেন।
তবে গৃহকর্মীদের পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়া এবং তাদেরকে অনুমতি ছাড়া বাড়ির বাইরে বেরোতে না দেওয়ার অভিযোগ দুটি গুরুতর। কারণ এসব অভিযোগের ফলে মানবপাচারের জন্য হিন্দুজা পরিবারের বিচার হতে পারে।
বার্তোসা হিন্দুজা পরিবারের সদস্যদের কারাদণ্ড এবং ক্ষতিপূরণ ও আইনজীবীর ফি হিসেবে কয়েক মিলিয়ন ডলার দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ও সুইজারল্যান্ডের ধনী ব্যক্তিদের কেন্দ্র জেনেভায় কর্মীদের সঙ্গে অন্যায় আচরণের অভিযোগ আগেও এসেছে।
২০০৯ লিবিয়ার সাবেক শাসক মুয়াম্মার গাদ্দাফির ছেলে হানিবাল গাদ্দাফিকে জেনেভার এক হোটেল থেকে গৃহকর্মীদের পেটানোর অভিযোগে সস্ত্রীক গ্রেপ্তার করা হয়। পরে অভিযোগটি তুলে নেওয়া হলেও এ নিয়ে সুইজারল্যান্ড ও লিবিয়ার মধ্যে ব্যাপক কূটনৈতিক বিরোধ দেখা দেয়।
গত বছরই ফিলিপাইনের চারজন গৃহকর্মী জাতিসংঘে জেনেভার এক কূটনৈতিক মিশনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। তাদের অভিযোগ ছিল, ওই মিশন কয়েক বছর ধরে তাদের বেতন দিচ্ছিল না।