অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হার দিয়ে সুপার এইট শুরু বাংলাদেশের
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে লড়াই করতে নাজমুল হোসেন শান্ত ও তাওহিদ হৃদয় ছাড়াও বৃষ্টিকে সাথে পেয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শান্ত ও হৃদয়ের লড়াই যেমন যথেষ্ট হয়নি, তেমনি বৃষ্টি বাধাতেও আটকায়নি অজিদের জয়। আগে ব্যাটিং করে শান্ত ও হৃদয়ের ব্যাটে বাংলাদেশ যে সংগ্রহ গড়ে, তা নেয় লড়ারই সুযোগ ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার দাপুটে শুরুর পর নিজেদের সংগ্রহ আরও ছোট মনে হতে পারে বাংলাদেশের কাছে। এরপরও কিছুটা কালক্ষেপণ হয় বৃষ্টি বাধায়। শেষ পর্যন্ত হারই সঙ্গী হয় বাংলাদেশে।
শুক্রবার অ্যান্টিগার স্যার ভিভিয়ান রিচার্ডস স্টেডিয়ামে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সুপার এইট পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৮ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। বৃষ্টির কারণে ডাকওয়ার্ল-লুইস স্টার্ন পদ্ধতি খেলার ফল নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে খেলা ৬ ম্যাচের সবগুলোতেই হারলো বাংলাদেশ।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে প্রথম ওভারেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। শান্ত ও লিটনের ব্যাটে চাপ কাটিয়ে উঠলেও এই জুটি ভাঙার পর নিয়মিত ধারায় উইকেট হারানো দলটি বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যেতে পারেনি। ইনিংস সেরা রান করা শান্তর পর কেবল তাওহিদ হৃদয় দলকে পথ দেখাতে পেরেছেন। শেষ দিকে হ্যাটট্রিক করা কামিন্সের দাপটে ৮ উইকেটে ১৪০ রানে থামে বাংলাদেশ। তাদের কেবল চারজন ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের রান করেন, এর মধ্যে একজন আবার পেসার তাসকিন আহমেদ।
ছোট লক্ষ্য তাড়ায় ঝড়ো শুরু করেন অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার ও ট্রাভিস হেড। ৬.২ ওভারেই স্কোরকার্ডে ৬৪ রান জমা করেন তারা। এরপর বৃষ্টিতে বন্ধ থাকে কিছুক্ষণ। বৃষ্টির পর রিশাদ হোসেন ২টি উইকেট নিলেও তাতে কোনো লাভ হয়নি। ওয়ার্নারের সঙ্গে গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও দাপুটে ব্যাটিং শুরু করেন। ১২তম ওভারে আবার বৃষ্টি শুরু হলে বেশি সময় অপেক্ষা করা হয়নি, বৃষ্টি আইনে ম্যাচের ফল ঘোষণা করা হয়।
বৃষ্টি নামার আগে ১১.২ ওভারে ১০০ রান তোলে অজিরা। এগিয়ে থাকা ১৮ রানে জয় পায় সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা। ওয়ার্নার ৩৫ বলে ৫টি চার ও ৩টি চক্কায় ৫৩ রানে অপরাজিত থাকেন। ২১ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ৩১ রান করেন হেড। উইকেটে গিয়েই ঝড় তোলা ম্যাক্সওয়েল ৬ বলে একটি করে চার ও ছক্কায় ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন। ৩ ওভারে ২৩ রান খরচায় ২টি উইকেট নেন রিশাদ। এ ছাড়া শেখ মেহেদি হাসান কেবল কৃপণ বোলিং করেন, ৪ ওভারে ২২ রান দেন তিনি। বাকিরা সবাই ওভার প্রতি ৯ রানের বেশি করে খরচা করেন।
এর আগে ব্যাটিং করা বাংলাদেশ প্রথম ওভারেই উইকেট হারায়। দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়ে চাপ সামাল দেন শান্ত ও লিটন। এরপর ২০ রানেরও জুটি পায়নি বাংলাদেশ। ১৩ ইনিংসে কোনো হাফ সেঞ্চুরি না পাওয়া শান্ত আজ সাবলীল ব্যাটিং করলেও পঞ্চাশ ছুঁতে পারেননি। ৩৬ বলে ৫টি চার ও একটি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৪১ রান করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ২৮ বলে ২টি করে চার ও ছক্কায় ৪০ রানের কার্যকরী ইনিংস খেলেন ব্যাট হাতে দারুণ ধারাবাহিক পারফরম্যান্স করে আসা হৃদয়।
কঠিন সময়ে থাকা লিটন ২৫ বলে ১৬ রান করেন। শেষ দিকে তাসকিন আহমেদ ৭ বলে একটি চারে অপরাজিত ১৩ রান করেন। বাংলাদেশের এই চারজনের বাইরে আর কেউ দুই অঙ্কের রান করতে পারেননি। ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন। ব্যাটিং অর্ডার পাল্টে আগে নামা রিশাদ আস্থার দাম দিতে পারেননি, ৪ বলে ২ রান করেন এই লেগ স্পিনার। সাকিব আল হাসান ১০ বলে ৮ ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ৩ বলে ২ রান করেন। এই ম্যাচে জাকের আলী অনিকের জায়গায় সুযোগ পাওয়া শেখ মেহেদি হাসান রানের খাতা খুলতে পারেননি।
প্যাট কামিন্স ৪ ওভারে ২৯ রানে ৩টি উইকেট নেন। ১৮তম ওভারের শেষ দুই বলে মাহমুদউল্লাহ ও শেখ মেহেদিকে ফেরান তিনি। ২০তম ওভারের প্রথম বলে হৃদয়কে ফিরিয়ে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন কামিন্স। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট এটাই তার প্রথম হ্যাটট্রিক। ৪ ওভারে ২৪ রানে ২টি উইকেট পান লেগ স্পিনার অ্যাডাম জাম্পা। শুরুতেই বাংলাদেশের ইনিংসে আঘাত হানা অজি পেসার মিচেল স্টার্ক ৪ ওভারে ২১ রান খরচায় একটি উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন মার্কাস স্টয়নিস ও গ্লেন ম্যাক্সওয়েলও।