রাজধানীর বাজারে সবজি, কাঁচামরিচের দাম চড়া
ঈদের ছুটির পর চাহিদা কম থাকলেও ঢাকার খুচরা বাজারে কাঁচামরিচ, শাক-সবজি ও অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী রয়েছে।
রাজধানীর খুচরা বাজারে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৬০ টাকা। এছাড়া শশা, করলা, টমোটো ও কাঁকরোল প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকার ওপরে। ঈদের পর পাইকারিতে প্রতিকেজি পেঁয়াজের দামও ১০ থেকে ১৪ টাকা বেড়েছে।
বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের পর রাজধানীতে মানুষ কম থাকলেও বিভিন্ন জেলা থেকে শাক-সবজি আসছে কম। এ কারণে বাজারে দাম বেশি।
শুক্রবার (২১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজার, শাহজাদপুর, বাড্ডা, রামপুরা ও হাতিরপুলসহ বিভিন্ন এলাকার কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পোয়া (২৫০ গ্রাম) কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। সে হিসেবে প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম ৩২০ থেকে ৩৬০ টাকা পর্যন্ত পড়ছে।
আবার এককেজি নিলে দাম পড়ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা। যদিও কারওয়ানবাজারে পাইকারিতে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ৩২০ টাকায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার টিবিএসকে বলেন, "অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও বন্যায় কাঁচামরিচ ও করলা উৎপাদন মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আড়তে করলার সরবরাহ একেবারেই কম। টমেটো এখন ইন্ডিয়ানগুলো বাজারে। এ কারণে দাম বেশি।"
মূলত আবহাওয়াগত সমস্যার কারণেই সবজির দাম বেশি বলেও জানান তিনি।
এদিকে রাজধানীতে প্রতিকেজি শশা বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা দরে। আর করলা ১০০ থেকে ১৪০ টাকা, টমেটো ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা, কাঁকরোল ৮০ থেকে ১০০ টাকা এবং গাজর বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৬০ টাকা প্রতিকেজি দরে।
বিক্রেতারা জানিয়েছেন, শহরে এখনও সেভাবে মানুষ আসেনি। আবার ঢাকার বাইরে থেকেও সবজি কম আসছে।
শাহজাদপুরের সবজি বিক্রেতা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, "মানুষ কম। সবজিও কম আনছি। ঢাকার বাইরে থেকে এখন সবজি কম আসে। এ কারণে দাম বেশি।"
অন্যান্য সবজির দামও কিছুটা বেশি। প্রতিকেজি বেগুন ৮০ থেকে ৯০ টাকা, পেঁপে ৫০ থেকে ৬০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৯০ টাকা এবং পটোল, ধুন্দুল, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, পটল ও ঢ্যাঁড়শ ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া, লাউ প্রতিপিস ৬০ থেকে ৮০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, রাজধানীর কারওয়ানবাজারে সবজির দাম পাড়া-মহল্লার চেয়ে কিছুটা কম। কিছু কিছু সবজি কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত ব্যবধান রয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি মো. ইমরান মাস্টার বলেন, "পাড়া-মহল্লায় ভ্যান গাড়িতে কোনো তদারকি হয় না। তাদের জবাবদিহিতাও নেই। এ কারণে দেখা যায়, কারওয়ানবাজারের চেয়ে সবজির দাম অনেক বেশি থাকে। তাদেরকে মনিটরিংয়ের আওতায় আনা দরকার।"
বেড়েছে পেঁয়াজের দাম, স্থিতিশীল আলর বাজার
এদিকে পেঁয়াজের দাম বেড়েই চলেছে। খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। আর আমদানি হওয়া পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়।
গত ৩/৪ দিনের ব্যবধানে পাইকারি পর্যায়ে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে অন্তত ১০ থেকে ১৪ টাকা।
শুক্রবার পাইকারিতে প্রতিকেজি দেশি পেয়াঁজের দাম ছিল ৮৪ থেকে ৮৬ টাকা। আর আমদানি হওয়া পেঁয়াজের দাম ছিল ৯৬ টাকা। ঈদের আগে পাইকারি পর্যায়ে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ ৭৪ থেকে ৭৬ টাকা এবং আমদানি হওয়া পেঁয়াজ ৮০ থেকে ৮২ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
এ বিষয়ে পাইকারি পেঁয়াজ ব্যবসায়ী মো. বাবুল মিয়া টিবিএসকে বলেন, "ঈদের সময় পরিবহন কম ছিল। পেঁয়াজ কম ঢুকেছে। এখন যা আসছে, দাম বেশি। কী কারণে বাড়ছে, জানি না।"
এদিকে রাজধানীতে প্রতিকেজি আলু খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা। আর পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।
পাইকারি ব্যবসায়ী মো. ইলিয়াস টিবিএসকে বলেন, "ব্যাপারীরা এখন কোন বাজারে কত দাম চলছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে মাল দিয়ে যায়। আমাদের আড়তে আসলে তারা যে দাম দেয়, সে দামে বিক্রি করতে হয়। অন্য বাজারে দাম বেশি পেলে তারা এখানে নামায় না। হিমাগার পর্যায়ে দাম বেশি হলে, আমরা কমাতে পারবো না।"
দাম বেড়েছে মুরগি, ডিমেরও
খুচরা বাজারে প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা। ঈদের আগের তুলনায় কেজিতে ১০ টাকা বেশি। আর সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়।
এদিকে, বাদামি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা ডজন। সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকা ডজন।
সার্বিক বিষয়ে কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসেন টিবিএসকে বলেন, "অতি মুনাফার লোভ এখন ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংক্রমণ হচ্ছে। কেউ এখন কম লাভ করতে চায় না। এখন সবজি বা মুরগির চাহিদা কম থাকার কথা। তাহলে দাম বাড়ছে কেন?"
"বাজার মনিটরিং যথাযথভাবে করতে হবে। যেখানে প্রয়োজন, সেখানে তদারকি করতে হবে," যোগ করেন তিনি।