কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ
২০১৮ সালের কোটা বাতিলের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সোমবার (১ জুলাই) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি টিএসসির সামনে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে বেলা ১টা পর্যন্ত বিক্ষোভ সমাবেশ করে।
পরবর্তীতে সেখান থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ও সায়েন্স লাইব্রেরি খোলা রাখার দাবিতে প্রক্টর কার্যালয়ের উদ্দেশ্যে মিছিল বের হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'কোটা না মেধা', আপোস নয় সংগ্রাম', 'আঠারোর পরিপত্র-পুনর্বহাল করতে হবে', 'কোটাপ্রথা নিপাত যাক-মেধাবীরা মুক্তি পাক'- এ ধরনের স্লোগান দিতে থাকেন।
শিক্ষার্থীরা জানান, অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠী ও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী ছাড়া সব ধরনের অনায্য কোটা বাতিল করতে হবে। আগামী ৪ জুলাই হাইকোর্টের শুনানি পর্যন্ত এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
ভূতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী আবু বাকের মজুমদার বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমতা নিশ্চিতের প্রতি গুরুত্বারোপ করে। মুক্তিযোদ্ধারা জাতির সর্বশ্রেষ্ঠ নাগরিক। তাদের জন্য প্রয়োজনে আরো ভাতার ব্যবস্থা করা হোক। কিন্তু এ ধরনের বৈষম্যমূলক কোটা প্রথা সাধারণ শিক্ষার্থীদের জন্য যন্ত্রণার বিষয়।
আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ হাসান ৪টি দাবি জানান।
দাবিগুলোর মধ্যে আছে, ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা, ২০১৮ খ্রিস্টাব্দের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)।
এছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানানো হয়েছে।
আন্দোলনকারীরা জানান, আগামীকাল মঙ্গলবার দুপুরে একই দাবিতে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে গণপদযাত্রা কর্মসূচি পালিত হবে এবং পরদিন বুধবার টিএসসির সামনে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে গণ জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে নিয়োগে ৫৬ শতাংশ পদ বিভিন্ন কোটার জন্য সংরক্ষিত ছিল। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, জেলা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ৫ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ বরাদ্দ ছিল। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা বাতিল করে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের সুপারিশ করে মন্ত্রিসভা। পরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি সংশোধন করে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তবে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে কোটা ব্যবস্থা বহাল রাখে সরকার।
কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে জাবি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ
অন্যদিকে, সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল এবং মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে ছাত্র সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে ছাত্র সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি সড়ক ঘুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক সংলগ্ন ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়।
পরবর্তীতে শির্ক্ষাথীরা বেলা ১১ টা ৫৭ মিনিট থেকে ১০ মিনিট ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে প্রতীকী অবরোধ কর্মসূচি পালন করেন। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে যানজটের সৃষ্ট হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো- ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল, সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার না করা, কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
এসময় সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
শহীদ মিনারের পাদদেশে ছাত্র সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেলের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা বক্তব্য রাখেন।
সমাবেশে উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বলেন, 'আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য আগামী ৪ জুলাই দিন ধার্য করা হয়েছে। আদালতের এই রায়ের প্রতিক্রিয়ায় আমাদের এই আন্দোলন। সংবিধানে স্পষ্ট লিখা আছে শুধুমাত্র পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকবে। কিন্তু এই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী কি সব সাধারণ মুক্তিযোদ্ধার নাতি? নাকি মুক্তিযোদ্ধার ছেলে? ২০১৮ সালে আমরা দেখেছিলাম তড়িঘড়ি সিদ্ধান্তে কোটা বাতিলে পর সম্প্রতি হাইকোর্টি এটিকে অবৈধ ঘোষণা করেন। তাই আমাদের অবস্থান আগের মতই। কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা করতে হবে।'
আগামী ৪ জুলাই এই কোটা পদ্ধতি বাতিল ঘোষণা না করা হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করা হবে হুশিয়ারি দিয়ে সমাপনী বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম বলেন, 'বৈষম্য দূর করার জন্য ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। পাকিস্তান যে বৈষম্য চাপিয়ে দিয়েছিল সেই বৈষম্য দূর করার জন্য লাখ লাখ জনতা মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল। সেই বৈষম্য কোটার মাধ্যমে আবার ফিরিয়ে এনে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হয়েছে। আগামী ৪ জুলাই এই কোটা বাতিল না হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে গাড়ি চলতে দেওয়া হবে না। এই বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে দেওয়া হবে।'