দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধাদের অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী
দলমত নির্বিশেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সবসময় সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপ ২০২৪-২৫ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, তারা বীর মুক্তিযোদ্ধা এটা সব সময় মনে রাখতে হবে।
তিনি বলেন, 'নিজের জীবনের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে, পরিবার-পরিজন, বাবা-মাসহ সবকিছু ফেলে রেখে তারা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যার যা কিছু আছে তা নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন।'
তাদের আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে দেশের বিজয় অর্জিত হয়েছে বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'তাদের সব সময় সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া উচিত।'
শেখ হাসিনা বলেন, তিনি জানেন মুক্তিযোদ্ধাদের অনেকের হয়তো তার দলের প্রতি সমর্থন নেই, হয়তো অন্য দলে চলে গেছেন বা অন্য কোনো কারণ।
তিনি বলেন, 'তারা যেখানেই যাক, তাতে আমার কিছু যায় আসে না। এটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ যে তারা এই দেশকে মুক্ত ও বিজয়ী করতে তাদের সবকিছু বিসর্জন দিয়েছে, জীবন দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে। তাদের অনেকে পঙ্গু হয়েছে।'
মুক্তিযোদ্ধারা শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় এনে দিয়েছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, 'তাই এক্ষেত্রে আমি মনে করি, তাদের সম্মানই হতে হবে সর্বোচ্চ।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেক মুক্তিযোদ্ধা তার মতের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন, তার দলের সঙ্গে একমত নাও হতে পারেন, কিন্তু তারপরও তারা মুক্তিযোদ্ধা।
তিনি আরও বলেন, 'আমি সবাইকে সম্মান করি। এদেশের মানুষ যুগ যুগ ধরে তাদের এই সম্মান দিয়ে দিক এটাই চাই আমরা।'
একসময় মুক্তিযোদ্ধারা অবহেলিত ছিল বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'আমি ক্ষমতায় আসার পর থেকে তাদের সব ধরনের সহযোগিতা করেছি। তারা গর্ব করে বলতে পারে আমি মুক্তিযোদ্ধা।'
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা শোষণমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন। তিনি ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে চেয়েছিলেন।
তিনি আরও বলেন, 'এটা মাথায় রেখেই আমাদের দেশের সর্বস্তরের মানুষদের কাউকে অবহেলা করা হবে না।'
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে সংখ্যালঘু আছে, প্রতিবন্ধী মানুষ আছে, অটিস্টিক আছে। সরকার তাদের সবার প্রতি সহানুভূতিশীল।
তিনি বলেন, 'তারা যেন সমাজের সকল সুযোগ-সুবিধা পায়, তারা যেন পিছিয়ে না পড়ে সেদিকে আমরা বিশেষ নজর রাখছি।'
এসময় প্রধানমন্ত্রী ফেলোশিপের ফেলোদের বিদেশে উচ্চশিক্ষার জন্য যাওয়ার আগে দেশের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, 'আপনাদের অনেক কিছু দেওয়ার আছে। ভবিষ্যতে আপনাদেরই দেশকে আরও উন্নত করতে হবে।'
জনগণের টাকায় ফেলোশিপ নিয়ে তারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যাচ্ছেন এই বিষয়টি তাদের মনে রাখতে বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'মনে রাখবেন, আপনাদের উচ্চশিক্ষায় যে অর্থ ব্যয় হচ্ছে, তা জনগণের টাকা। জনগণের সেবায় আপনাদের বিশেষ নজর দিতে হবে।'
ডিগ্রি শেষ করে দেশে ফেরার পর দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার জন্য তাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
এ বছর ১১ জন পিএইচডি এবং ৩৯ জন মাস্টার্স ফেলোশিপ পেয়েছেন।
বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পড়াশোনা করতে এ পর্যন্ত ৩০৮ জন মাস্টার্স ফেলো ও ১১৬ জন পিএইচডি ফেলোকে প্রায় ৩৩৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বৃত্তি দেওয়া হয়েছে। এরইমধ্যে ২১৫ জন মাস্টার্স ফেলো এবং ২৬ জন পিএইচডি ফেলো ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন।
তিনটি ক্যাটাগরিতে এই ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে- সরকারি কর্মকর্তা (বিসিএস), সরকারি কর্মকর্তা (নন-বিসিএস) ও অন্যান্য (বেসরকারি পরীক্ষার্থী)।
সব সেক্টরের সম্পদের সক্ষমতা বাড়াতে ২০১৮ সালে এই ফেলোশিপ চালু করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গভর্নেন্স ইনোভেশন ইউনিটকে (জিআইইউ) এটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও নেদারল্যান্ডসসহ বিভিন্ন দেশের স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার সুযোগ পাচ্ছেন এই ফেলোরা।
ফেলোশিপ বিতরণ অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা দেন প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা ও সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া।
ফেলোশিপ পাওয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করে কয়েকজন পিএইচডি ও মাস্টার্স ফেলো তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান। বাংলাদেশ ও এর জনগণের কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার জানা তারা।
অনুষ্ঠানে ফেলোশিপের ওপর একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি দেখানো হয়।