জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: রাবার বুলেটবিদ্ধ অন্তত ৮০ জন, পুলিশ পাহারায় ভবন ছাড়লেন উপাচার্য
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আজ (বুধবার) বিকেলের পর থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ শুরু হয়। এতে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৮০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে অধিকাংশই পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে।
এছাড়া ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়েছে বলে ঘটনাস্থল থেকে জানিয়েছেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সংবাদদাতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের প্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. মো. শামছুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "সাড়ে ৫টা থেকে আমাদের এখানে আহত অবস্থায় শিক্ষার্থীরা আসতে শুরু করে। রাত ৮টা পর্যন্ত আমরা প্রায় ৬০-৭০ জন শিক্ষার্থীকে আহত অবস্থায় পেয়েছি যাদের মধ্যে গুরুতর হওয়ায় ১০-১৫ জনকে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। আহতদের অধিকাংশই পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে আহত ছিল।"
অপরদিকে রাতে সাভারের এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিউটি ম্যানেজার সুলতান টিবিএসকে বলেন, "সন্ধ্যা থেকে আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ জন শিক্ষার্থীকে পেয়েছি, এর মধ্যে ৪ জন ছিল গুলিবিদ্ধ। তাদের মধ্যে ৫ জন আমাদের হাসপাতালে ভর্তি আছেন, বাকিরা চিকিৎসা নিয়ে চলে গেছেন।"
এদিকে সন্ধ্যার পর থেকে কিছু কিছু শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগ করতে দেখা গেছে। রাত ৮টা নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বিপুল সংখ্যক পুলিশ, বিজিবি, র্যাব সদস্যদের মোতায়েন থাকতে দেখা গেছে। পুলিশের মধ্যে ঢাকা জেলা পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ছাড়াও শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য সদস্যদেরও দেখা গেছে।
আজ বিকেল ৫টা ১০ মিনিটের দিকে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষে পুলিশের মুহুর্মুহু গুলি, টিয়ার শেল আর সাউন্ড গ্রেনেডের মুখে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন হলের ভেতরে গিয়ে আশ্রয় নেন।
সংঘর্ষের এক পর্যায়ে সন্ধ্যা ৭টার দিকে পুলিশের উপস্থিতিতে অনেকটা পালিয়ে রেজিস্ট্রার ভবন ত্যাগ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের অধ্যাপক নূরুল আলমসহ অন্যান্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা।
রেজিস্ট্রার ভবনে দিনভর অবরুদ্ধ থাকা উপাচার্য, সিন্ডিকেট সদস্য, শিক্ষক এবং রেজিস্ট্রার ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ সময় পুলিশের উপস্থিতিতে ভবন ত্যাগ করেন বলে জানিয়েছেন ঘটনাস্থলে থাকা টিবিএস সংবাদদাতা।
শিক্ষার্থীদের মাইক্রোবাসে পুলিশের হামলা
বুধবার সন্ধ্যা পৌনে ৭টার সময় কয়েকজন শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশ সদস্যরা চড়াও হওয়ার ঘটনা জানিয়েছে প্রত্যক্ষদর্শী টিবিএস সংবাদদাতা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি মাইক্রোবাসে কয়েকজন শিক্ষার্থী নতুন কলা ভবনের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় 'কোনো প্রকার উসকানি ছাড়াই' গাড়িটির পথরোধ করেন পুলিশ সদস্যরা।
'এরপর গাড়ির দরজা খুলে ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদেরকে বন্দুকের বাঁট দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করার পাশাপাশি কিল-ঘুষি ও লাথি দিতে থাকেন পুলিশ সদস্যরা,' বলেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী টিবিএস প্রতিবেদক নোমান মাহমুদ।