শনির আখড়ায় দোকানগুলোর শাটার এখনও বন্ধ, শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে
ইউসুফ আলি রাজধানীর শনির আখড়ায় লেবুর শরবত বিক্রি করেন। সাম্প্রতিক পরিস্থিতির কারণে গত সাতদিন ধরে তিনি তার শরবত বিক্রির স্ট্যান্ডটি বন্ধ রেখেছেন। এছাড়া তার হাতে আর কোনো উপায় ছিল না।
দেশব্যাপী হওয়া সহিংসতার মধ্যে রাজধানীর শনির আখড়া হয়ে উঠেছিল অন্যতম মারাত্মক সংঘর্ষের স্থান। এই এলাকার দুজন বাসিন্দা নিহত হওয়াকে ঘিরে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিক্ষোভের বিষয়ে আলির কোনো মন্তব্য নেই। তবে তিনিও এই ঘটনাপ্রবাহ এবং পরিস্থিতির ভুক্তভোগী।
এই লেবুর শরবত বিক্রির ওপর তার পাঁচজনের সংসারটি নির্ভরশীল।
পরিবারের মানুষদের মুখে খাবার জোগাতে অবশেষে ভয় ও শঙ্কা ভরা মন নিয়ে আজ সকাল ১১টায় ইউসুফ তার স্ট্যান্ডটি খোলেন।
কিন্তু এত ঝুঁকি নিয়েও কোনো লাভ হয়নি। তিনি দোকান খুললেও তার শরবত কেনার মতো কোনো খদ্দের আজ রাস্তায় ছিল না।
তিনি বলেন, 'আমি এখন এখানে দাঁড়াতেও ভয় পাচ্ছি। পুলিশ এখানে কাউকে দাঁড়ানোর অনুমতি দিচ্ছে না। কিন্তু আমার আর কোনো উপায় নেই। আমাকে অবশ্যই আমার বাচ্চাদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে।'
আজ সকাল থেকে যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, রায়েরবাগ, সাইনবোর্ড, সানারপাড় এবং চট্টগ্রাম রোড প্রভৃতি এলাকার রাস্তাগুলোও প্রায় ফাঁকা ছিল। কয়েকটি গলির ভেতরের দোকান খুললেও, অধিকাংশ গুরুত্বপূর্ণ মোড়ের ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ রয়েছে।
কারফিউ এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারির কারণে বেশি মানুষ রাস্তায় বের হতে পারছেন না বলে এসব এলাকার অধিকাংশ দোকানদার তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখেছেন।
আজ সকালে সানারপাড় মোড়ে একজন নারী তার ছোট্ট অস্থায়ী দোকানে ভাত ও তরকারি বিক্রি করছিলেন।
তিনি জানান, আজ সর্বমোট ৫০০ টাকা উপার্জন করতে পেরেছেন। সাধারণ সময়ের চেয়ে আজ তার অর্ধেকেরও কম বিক্রি হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তার দোকান বন্ধ করে দিতে পারে এই ভয়ে তিনি তার নাম প্রকাশ করতে চাননি।
এই নারী দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে বলেন, 'আমার অধিকাংশ খদ্দের পরিবহন শ্রমিক। তাদের বেশিরভাগই বাস-ট্রাকের ড্রাইভার ও সহকারী। বর্তমানে তারা কাজ করতে পারছেন না। এই ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে বেঁচে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।'
অন্যদিকে, ওই এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টহল গাড়ি দেখে কিছু পরিবহন শ্রমিককে একটি ট্রাকের পেছনে লুকিয়ে পড়তে দেখা যায়।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরে গেলে তারা বেরিয়ে এসে জানান, তারা সবাই লাব্বাইক পরিবহনের বাসে কাজ করে। এসব শ্রমিকও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানান।
মোহাম্মদ সোহেল মিয়া একজন রিকশাচালক। পরিবারের চার সদস্যসহ তিনি মদিনাগড়ে বাস করেন। সহিংসতা ও সংঘর্ষের মধ্যে প্রাণভয়ে সাতদিন ঘরে বসে থাকার পর আজ থেকে তিনি ফের কাজে যেতে শুরু করেছেন।
তিনি বলেন, 'রাস্তায় কোনো যাত্রী নেই। যারাও আছেন, তারা রিকশায় যাতায়াত করাটা নিরাপদ মনে করছেন না।'
তাহলে তিনি কেন আজ এ পরিস্থিতির মধ্যেও বাইরে ছিলেন?
তিনি বলেন, 'টাকা ধার নিতে পারি এমন আর কোনো জায়গা বাকি নেই। তাই আজ থেকে আমি রিকশা চালানো শুরু করেছি।'
দুপুরে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি জানান, কয়েক ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে তিনি মাত্র ৬০টাকা উপার্জন করতে পেরেছেন।
অন্যদিকে ওই এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জানান, কারফিউয়ের মধ্যে মানুষ রাস্তায় বের না হওয়ায় তারা জিনিসপত্র বিক্রি করার মতো খদ্দের পাচ্ছেন না।
তারা আরও জানান, মানুষ গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় পাচ্ছে। তাই এই অবস্থায় তাদের ব্যবসা পরিচালনা করা কষ্টকর হয়ে পড়েছে।