কারফিউয়ে ধুঁকছে হোটেল-রেস্তোরাঁ, বিনোদন পার্ক
কারফিউ ও ইন্টারেন্ট সংযোগ বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন হোটেল-রেস্তোরাঁ ও বিনোদন পার্ক ব্যবসায়ীরা।
জানা গেছে, চলমান পরিস্থিতিতে হোটেল-রেস্তোরাঁয় বিক্রি অন্তত ৭০-৮০ শতাংশ কমেছে। মোবাইল নেটওয়ার্ক না থাকায় বন্ধ রয়েছে অনলাইনে খাবার ডেলিভারি। এদিকে, শুক্রবার (২৬ জুলাই) বিনোদন কেন্দ্রগুলো আংশিক খুললেও মানুষ ছিল অনেক কম।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মেট্রো স্টেশনের নিচেই কুকার্স সেভেন রেস্তোরাঁ। স্বাভাবিক সময়ে রেস্তোরাঁটিতে দেখা যায় মানুষের ভিড়; চলে অনলাইনে খাবার সরবরাহও। কারফিউয়ের কারণে ৫ দিন বন্ধ থাকার পর গত মঙ্গলবার থেকে খুললেও রেস্তোরাঁটিতে দেখা যায়নি তেমন ক্রেতা।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) কুকার্স সেভেনের মালিক মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন টিবিএসকে বলেন, "মেট্রোরেলের কাজ চালু থাকায় ব্যবসায় একটা বড় ক্ষতি হয়েছিল। তবে মেট্রো চালু হওয়ার পর সেটা কাটিয়ে পুরোদমে আবার শুরু করি।"
তিনি বলেন, "আমাদের বিক্রির একটি অংশ অনলাইনে হয়। তবে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় অনলাইন বিক্রি বন্ধ রয়েছে। আর ফিজিক্যালি খুব বেশি মানুষ এখন রেস্টুরেন্টে আসছেন না। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে।"
একই চিত্র রাজধানীর অন্যান্য ছোট বড় হোটেলগুলোতেও। রাজধানীর মালিবাগ চৌধুরীপাড়ার তাজমহল রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার শাহীন আহমেদ টিবিএসকে বলেন, "রেস্টুরেন্টে মানুষজন খুবই কম। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় আজ (শুক্রবার) চারভাগের এক ভাগ মানুষ আসছেন। এই এলাকায় ঝামেলা বেশি ছিল। এ কারণে মানুষের মধ্যে এখনো আতঙ্ক রয়েছে।"
হোটেল-রেস্তোঁরায় প্রায় ৭০-৮০ শতাংশ বিক্রি কমেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেস্টুরেন্ট মালিক সমিতি মহাসচিব ইমরান হাসান। তিনি টিবিএসকে বলেন, "ইন্টারনেট না থাকায় অনলাইনে বিক্রি বন্ধ রয়েছে। এর পাশাপাশি দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে মানুষ হোটেল-রেস্টুরেন্টে যাচ্ছেন না। হোটেল-রেস্তোরাঁগুলো খুলতে শুরু করলেও গ্রাহক নেই। স্বাভাবিক সময়ের সাথে তুলনা করলে ২০-৩০ শতাংশ বিক্রি হচ্ছে।"
হোটেল-রেস্তোরাঁর মালিকরা খুব খারাপ সময় পার করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, "একের পর এক খারাপ সময় আমাদের পার করতে হচ্ছে। দেশের পরিস্থিতিই এখন কঠিন। আশা করি, দ্রুত শান্তি ফিরবে।"
স্বাভাবিক সময়ে রাজধানীর বিনোদন পার্ক বা স্থাপনাগুলোতে শুক্রবার উপচে পড়া ভিড় থাকলেও শুক্রবার খুব বেশি মানুষ চোখে পড়েনি। রাজধানীর হাতিরঝিলে বিকেলে দেখা যায়, কিছু মানুষ ঘোরাফেরা করছেন। তবে তা স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে অনেক কম।
হাতিরঝিলে ঘুরতে আসা কাজী দেলোয়ার হোসেন টিবিএসকে বলেন, "গত কয়েকদিন ধরে বাসায় এক প্রকার বন্দি। আতঙ্কের মধ্যে সময় কেটেছে। অনেক মানুষের আহত-নিহত হওয়ার খরব শুনেছি। মোটামুটি পুরো ঢাকার পরিস্থিতিই ছিল খারাপ। বাসার পাশেই হাতিরঝিল হওয়ায় এমনিই ঘুরতে বের হয়েছি। তবে হাতিরঝিলে খুব বেশি মানুষ নেই। যারা আছেন, তারা হয়তো আমার মতো আশেপাশেই থাকেন।"
নন্দন পার্কও প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর শুক্রবার খোলা হয়। স্বাভাবিক সময়ে শুক্রবারে এ পার্কটিতে প্রায় ৪০০-৫০০ মানুষ আসেন। তবে গতকাল বিকেল পর্যন্ত মাত্র ২০-৩০ জন দর্শনার্থী এসেছেন।
নন্দন পার্কের কর্মকর্তারা জানান, পরিবেশ-পরিস্থিতি খারাপ। এ কারণে মানুষ আসছেন না।
নন্দন পার্কের হেড অব মার্কেটিং আশিকুর রহমান টিবিএসকে বলেন, "আমরা কারফিউ শিথিলের সময় খোলা রাখছি। সরকারি নির্দেশনা অনুসরণ করে পার্ক খোলা রাখার চেষ্টা করবো। তবে মানুষজন খুবই কম আসছেন।"
কনকর্ড গ্রুপের সিস্টার কনসার্ন ফ্যান্টাসি কিংডমে স্বাভাবিক সময়ে শুক্রবারে গড়ে প্রায় ৩,০০০-৩,৫০০ দর্শনার্থী বেড়াতে আসেন। প্রায় এক সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর শুক্রবার খুললেও পার্কটিতে মানুষ ছিল না।
কনকর্ড গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব অ্যামিউজমেন্ট পার্কস অ্যান্ড অ্যাট্রাকশনের প্রধান সমন্বয়ক অনুপ কুমার সরকার বলেন, "আজ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রেখেছি। সব মিলিয়ে ১০০ জন মানুষও হবে না। শুক্রবারের উপরই আমাদের নির্ভর করতে হয়। এখন সরকারের যেহেতু রেগুলেশন রয়েছে, তাই ৪টার মধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছি।"
তিনি বলেন, "প্রায় সাতদিন পার্ক বন্ধ ছিল। এ সময়ে কর্মচারী-কর্মকর্তাদের বেতন, বিদ্যুৎ বিলসহ অনেক খরচই টানতে হবে। এখন মানুষের যে সংখ্যা, তারচেয়ে আমাদের মেইন্টেনেন্স খরচ অনেক বেশি।"