খুলনায় পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষ: টিয়ারশেল-রাবার বুলেটে ‘রণক্ষেত্র’, আটক-আহত অনেকে
খুলনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়েছে। এ সময় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের আটক করে পুলিশ। এছাড়া সংঘর্ষের সময়ে অসংখ্য শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
বুধবার (৩১ জুলাই) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত কয়েক দফায় চলে এ সংঘর্ষ। পুলিশের টিয়ারশেল ও রাবার বুলেটের পালটা জবাব হিসেবে শিক্ষার্থীরা ইট-পাটকেল ছোড়েন।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে দেশব্যাপী সহিংসতার পর 'মার্চ ফর জাস্টিস' কর্মসূচি পালন করছিলেন শিক্ষার্থীরা। খুলনায় এ কর্মসূচিতে পুলিশ বাধা দেয়।
শিক্ষার্থী সকাল ১০টার দিকে রয়েল মোড়ে অবস্থান নিলে পুলিশ অভিযান চালায়। এ সময় প্রায় ৩০ জনকে আটক করা হয়।
পরে বেলা ১১টার দিকে খুলনার নিরালা এলাকা থেকে একটি মিছিল ময়লাপোতা হয়ে রয়েল মোড়ে এসে পুলিশের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থান নেয়।
এক পর্যায়ে পুলিশের বাধা ভেঙে রয়েল মোড়ের পাশে সাতরাস্তা মোড়ে গিয়ে শিক্ষার্থী সড়কে অবস্থান নেন। সেখানে পুলিশ মাইকিং করে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরে যেতে অনুরোধ করে।
তবে শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে পড়লে তাদের ঘেরাও করে দুদিক থেকে লাঠিচার্জ শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তখন শিক্ষার্থী সাতরাস্তা মোড়সংলগ্ন দোলখোলা রোড, ইকবাল নগর রোড ও জাতিসংঘ পার্কের রোডের মধ্যে অবস্থান নিয়ে পুলিশের দিকে ইট ছুড়তে থাকে।
এ সময় পুলিশও প্রচুর টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছোড়া শুরু করে। কয়েক দফায় দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ চলতে থাকে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলার পর পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) কমিশনার মোজাম্মেল হক বলেন, 'শিক্ষার্থীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে ও রাস্তা অবরোধ করে জানমালের ক্ষতি করার চেষ্টা করছিল। পুলিশ বারবার তাদের অনুরোধ করা পরেও তারা সড়ক থেকে সরেননি। এ কারণে তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়া হয়েছে।'
তিনি বলেন, সংঘর্ষের সময়ে বেশ কিছু শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাদের সম্পর্কে যাচাই-বাছাই করে পরবর্তীসময়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এ সংঘর্ষের পেছনে জামায়াত-শিবিরের লোকজন বেশি ছিল বলে মনে করেন বলে জানিয়েছেন কেএমপি কমিশনার মোজাম্মেল হক।
শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করতে খুবি প্রশাসনের আহ্বান
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের হয়রানি না করতে আহ্বান জানিয়েছে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) প্রশাসন।
বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ ও প্রকাশনা বিভাগ থেকে প্রেরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সহিংসতা ও আইন-শৃঙ্খলা বিনষ্টকারী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার অভিযোগে বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের নানা সংবাদ গণমাধ্যমে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থী যাতে হয়রানির শিকার না হয় তা নিশ্চিত করার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আহ্বান জানাচ্ছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী হয়রানির শিকার হলে তাকে ছাত্র বিষয়ক পরিচালকের দপ্তরকে অবহিত করার নির্দেশনা প্রদান করা হল। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদান করা হবে।'
আন্দোলন প্রত্যাহার সমন্বয়কদের
মঙ্গলবার রাতে খুলনায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে একটি সভা করেন পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। ওই সভার পরে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সব কর্মসূচি প্রত্যারের ঘোষণা দেন সমন্বয়কেরা।
সভাশেষে কোটা সংস্কার আন্দোলনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী ও সমন্বয়ক তানভীর আহমেদ বলেন, 'আমার কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলন করেছি। তবে খুলনাতে আমরা কোনো সহিংসতা করিনি।
'এখন আন্দোলনটা ভিন্ন খাতের দিকে চলে যেতে পারে, তা নিয়ে আজ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। আমরা জানিয়ে দিচ্ছি, আমাদের পরবর্তীকালে আর কোনো কর্মসূচি নেই।'
কোটা আন্দোলনের সৃষ্ট সংহিসতায় যারা মারা গেছে, তাদের ব্যাপারে নিরপেক্ষ তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তিনি সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন সমন্বয়কারী ও তাদের অভিভাবকেরা।
সভায় খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মেয়র ও খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক, খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার সরদার রকিবুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।
সভাশেষে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের (কেসিসি) মেয়র ও পুলিশ কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
তবে সভায় উপস্থিত থাকা খুলনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বলেন, 'শিক্ষার্থীদের ডেকে আমরা বলেছি, খুলনায় পুলিশ যদি তোমাদের নামে কোনো মামলা দিয়ে থাকে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।'
প্রত্যাহারের পর আন্দোলন
সমন্বয়কেরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলেও শিক্ষার্থীদের একাংশ আন্দোলন অব্যাহর রাখার ঘোষণা দেন।
মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের নামে একটি বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়ে। তাতে বলা হয়, 'খুলনায় একক কোনো সমন্বয়ক নেই। কয়েকজন শিক্ষার্থীদের ডেকে নিয়ে জিম্মি করে মিডিয়ায় বক্তব্য দেওয়ানো হয়েছে।'
সে সূত্র ধরেই ফেসবুকের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে 'মার্চ ফর জাস্টিস' পালনের জন্য সব শিক্ষার্থীকে রয়েল মোড়ে জড়ো হওয়ার আহ্ববান জানানো হয়।