শুধু তৈরি পোশাকে ডেমারেজ মওকুফ ‘বৈষম্যমূলক’, সব খাতের জন্য ছাড় চান ব্যবসায়ীরা
সরকার শুধু তৈরি পোশাক খাতের জন্য পোর্ট ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করায় অন্যান্য খাতের আমদানিকারকেরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন উল্লেখ করেছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
বুধবার (৩১ জুলাই) দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-এর সঙ্গে আলাপকালে সব খাতের ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকদের জন্য এ মাশুল মওকুফ করার দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা।
এর আগে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) এক গেজেট বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ১৬ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দরে আসা তৈরি পোশাক পণ্যের যেকোনো চালানের জন্য সাতদিনের পোর্ট ডেমারেজ চার্জ মওকুফের কথা জানায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়।
বন্দরের ডেমারেজ হলো সম্মত সময়ের মধ্যে আমদানিকৃত পণ্য বহনকারী কনটেইনার খালাস করতে ব্যর্থ হলে প্রদেয় মাশুল। একটি কনটেইনার কোনো বন্দরে পৌঁছানোর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সেটি ডেলিভারি নিতে না পারলে এ মাশুল আরোপ করা হয়।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে অস্থিরতার মাঝে দেশজুড়ে নজিরবিহীন ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট ও কারফিউ জারির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরে আটকা পড়ে বিভিন্ন খাতের আমদানি পণ্যবাহী কয়েক হাজার কনটেইনার।
১৯ জুলাই রাতে চট্টগ্রাম কাস্টমসে শুল্কায়ন ও বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি বন্ধ হয়ে যায়। এরপর থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ইস্পাত, ঔষধ, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য, কৃষিসহ বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ীরা চাইলেও বন্দর থেকে কনটেইনার ডেলিভারি নিতে পারেননি।
এ প্রেক্ষিতে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার দিনগুলোর জন্য বিশেষ বিবেচনায় বন্দরের ডেমারেজ চার্জ মওকুফের দাবি জানান ব্যবসায়ীরা।
গার্মেন্টস খাতের ক্ষয়ক্ষতি জানাতে ও ডেমারেজ চার্জ মওকুফ চেয়ে ব্যবসায়ী নেতারা নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করার দুদিন পর সরকার তৈরি পোশাক খাতের জন্য পোর্ট ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করে।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার চারদিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনাভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিনকারকেরা। এরপর থেকে বিভিন্ন আকারের কনটেইনারের জন্য ভিন্ন ও ক্রমবর্ধমান হারে ভাড়া দিতে হয়।
ক্ষতিগ্রস্ত সবার জন্য ছাড় দাবি
ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, সংকট শুধু গার্মেন্টস খাতের একার ছিল না। বন্দর ব্যবহারকারী সকল ব্যবসায়ীই জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তাই কেবল একটি খাতের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করায় অন্যান্য খাতের আমদানিকারকেরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
তারা বলছেন, ক্ষতিগ্রস্ত সকল খাতের ব্যাবসায়ীর জন্য ডেমারেজ চার্জ মওকুফ হওয়া দরকার।
'ইস্পাত, ঔষধ, ইলেকট্রনিকস, খাদ্য, কৃষিসহ অনেক খাতের ব্যবসায়ীরা চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পণ্য ও কাঁচামাল আমদানি করেন,' বলেন চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি ওমর হাজ্জাজ।
তিনি বলেন, যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার সময় সকল কাগজপত্র সংগ্রহ করেও শুধু ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার কারণে বন্দরের ভেতর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেননি ব্যবসায়ীরা।
'এ দায়তো ব্যবসায়ীদের না। তারা চাইলেও বন্দর থেকে পণ্য ডেলিভারি নিতে পারেননি,' বলেন ওমর হাজ্জাজ।
তিনি আরও বলেন, চট্টগ্রাম ও ঢাকা চেম্বার অব কমার্স, এফবিসিসিআইসহ সকল ব্যবসায়ী সংগঠন ডেমারেজ চার্জ মওকুফের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।
'তাই কেবল গার্মেন্টস খাতের ডেমারেজ চার্জ মওকুফে অন্যান্য খাতের ব্যবসায়ীরা হতাশ হয়েছেন। সকল ক্ষতিগ্রস্ত আমদানিকারকের স্টোর ভাড়া মওকুফ করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি,' বলেন এ ব্যবসায়ী।
চট্টগ্রাম কাস্টমস ক্লয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহমুদ ইমাম বিলু বলেন, 'সিএন্ডএফ এজেন্টসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ব্যাংক, বন্দর, কাস্টমস, ডিপোগুলোর দ্বারে দ্বারে গিয়েও ফিরে এসেছিলেন। ইন্টারনেট অচল থাকায় কেউ পণ্য ডেলিভারির কাজ করতে পারেননি।'
এ পরিস্থিতিকে একটি জাতীয় সংকট হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেবল তৈরি পোশাক খাতের ডেমারেজ চার্জ মওকুফ করায় অন্যান্য খাতের আমদানিকারকেরা বৈষম্যের শিকার হয়েছেন।
'ক্ষতিগ্রস্ত কোনো আমদানিকারকের কাছ থেকে যাতে বাড়তি মাশুল আদায় করা না হয়, সরকারিভাবে এমন নির্দেশনা এলে সবচেয়ে ভালো হয়,' বলেন মাহমুদ ইমাম।
বিনা ভাড়ায় রাখা যায় ৪ দিন
চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ম অনুযায়ী, জাহাজ থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার চারদিন বন্দরের ইয়ার্ডে বিনাভাড়ায় রাখার সুযোগ পান আমদানিকারকেরা।
এরপর থেকে নির্দিষ্ট আকারের কনটেইনারের জন্য তাদেরকে ভিন্ন হারে ভাড়া দিতে হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এ ভাড়ার পরিমাণও বাড়ে।
২০ ফুট আকারের একটি কনটেইনারের জন্য চতুর্থ দিনের পর থেকে পরের সাতদিনের জন্য প্রতিদিন ৬ মার্কিন ডলার ভাড়া [স্টোর রেন্ট] গুনতে হয় ব্যবসায়ীদের।
এভাবে পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে প্রতিদিন ১২ ডলার এবং ২১তম দিন থেকে ডেলিভারি না নেওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ২৪ ডলার হিসেবে ভাড়া দিতে হয়।
একইভাবে ৪০ ফুট আকারের কনটেইনারের ক্ষেত্রে এর দ্বিগুণ হারে ভাড়া পরিশোধ করতে হয়।
চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডগুলোতে ৫৩ হাজার ৫১৮ টিইইউ কনটেইনার রাখার সক্ষমতা রয়েছে। বুধবার সকাল ৮টায় আমদানি পণ্যবাহী ৩৯ হাজার ১৩৯ টিইইউ কনটেইনার চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ছিল।
এসব কনটেইনারের বেশিরভাগই তৈরি পোশাক শিল্পসংশ্লিষ্ট।