বরিশালের বিক্ষোভে ছাত্র-জনতার ঢল, পুলিশ বক্স ও ট্রাক ভাঙচুর
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অংশ হিসেবে বরিশালে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন সহস্রাধিক আন্দোলনকারী। শনিবার (৩ আগস্ট) বেলা ১১টায় সরকারি ব্রজমোহন কলেজের মসজিদ গেট থেকে মিছিল শুরু করেন তারা।
মিছিল নিয়ে শহরের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল সংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা।
এতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ নগরীর প্রায় সব স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা যোগ দেন। একাত্মতা পোষণ করে স্থানীয় বাসিন্দা, শ্রমিকসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষও এতে অংশ নেন।
এদিকে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা। কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে তারা নগরীর আমতলার মোড় অবরোধ করেন।
দুপুর ১টার দিকে নথুল্লাবাদে জমায়েত হওয়া কয়েক হাজার আন্দোলনকর্মী মিছিল নিয়ে সিএন্ডবি রোড হয়ে আমতলার মোড় মেডিক্যালের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে যোগ দেন। এ সময় শেখ হাসিনা সরকারের পদত্যাগের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
শিক্ষার্থী নাজমুন নাহার বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসে যিনি মানুষ হত্যার অনুমতি দেন, তাকে আমরা ঘৃণা করি। তিনি এখন আমাদের আলোচনার জন্য ডেকেছেন। তিনি এখনো আমাদের সাথে তামাশা করছেন। আমরাইতো তার কাছে আলোচনার জন্য গিয়েছিলাম। তিনি যখন আলোচনার জন্য ডেকেছেন তখন সময় ফুরিয়ে গেছে। তার মত স্বৈরাচার আর আমরা দেখতে চাই না। কয়েকশ ছাত্র-জনতা হত্যার জবাব তাকেই দিতে হবে।'
আরেক শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে আছি। সরকার আমাদের আন্দোলন বিপথে নিতে তারাই সহিংসতার সূত্রপাত করেছে। আমাদের ভাই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত ঘরে ফিরব না। আমাদের কোটার দরকার নেই, প্রধানমন্ত্রীকে বলেন নিহত ভাইদের ফেরত দিতে।'
আন্দোলনে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সুজয় শুভ বলেন, 'আলোচনার টেবিলে ফেরার আর কোনো সুযোগ সরকার রাখেনি। এখন যা বলছেন এটিও সরকারের নাটক। আমরাতো সরকারের কাছেই দাবি তুলেছিলাম। অথচ আমরা দেখলাম তিনি তার সন্ত্রাসী বাহিনী ছাত্রলীগ, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের হত্যা আর নির্যাতন করেছে। আমরা প্রতিটি হত্যার বিচার চাই। যতদিন পর্যন্ত বিচার না পাবো ততদিন পর্যন্ত আমরা রাজপথ ছাড়ব না।'
এদিকে সকালে নথুল্লাবাদ, চৌমাথা, আমতলার মোড়সহ নগরীর বিভিন্ন স্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর টহল বাড়ানো হলেও শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক দখলে নিলে পুলিশ সদস্যদের সরে যেতে দেখা গেছে। বিকেল ৩টার দিকে শিক্ষার্থীরা সড়ক ছাড়েন।
পুলিশ সদস্যকে মারধর, গাড়ি ও পুলিশ বক্স ভাঙচুর
এর আগে বেলা সোয়া ২টার দিকে নগরীর চৌমাথা এলাকায় পুলিশ সদস্যদের বহনকারী একটি গাড়ি ও পুলিশ বক্সে হামলা ভাঙচুর এবং আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ানের (এপিবিএন) এক সদস্যকে মারধর করা হয়।
বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে বাধা দেইনি। তারপরও শিক্ষার্থীরা অযথা পুলিশের ওপর হামলা করেছে।
তবে আন্দোলনকারীদের দাবি- হামলার সাথে তারা জড়িত নন। তাদের অহিংস আন্দোলনকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে ক্ষমতাসীন দলের কর্মী-সমর্থকরাই ভাঙচুর চালিয়ে তাদের ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা করছে।