ইলিশ, যে মাছ বাংলাদেশ-ভারতের সম্পর্কের কথাও বলে!
পানিবণ্টন নিয়ে বিতর্কের জেরে বাংলাদেশ সরকার ২০১২ সাল থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। পরে অবশ্য প্রতিবেশী রাষ্ট্রটির সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতে ২০১৯ সাল থেকে পূজা উপলক্ষে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়। দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও এবার আর হচ্ছে না। সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে দেশের মানুষের চাহিদা না মিটিয়ে ইলিশ রপ্তানি নয়। তাই আগামী অক্টোবরে আসছে দুর্গাপূজায় বাংলাদেশের এই সুস্বাদু মাছটি পাচ্ছেন না পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরা।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ২০২২ সালে যখন ভারত সফর করেন, তখন সফরের প্রথম দিনই এই ইলিশ নিয়ে দুই দেশের আলোচনা হয়। আর কিছুদিন পরেই বাংলাদেশ থেকে কয়েক কার্গো ইলিশ পৌঁছে যায় ভারতে।
তবে গত আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দুই দেশের সম্পর্কে বেশ ভাটা পড়েছে বলা চলে। ভারত যেভাবে শেখ হাসিনার প্রতি দৃঢ় সমর্থন দেখিয়েছে এবং পালিয়ে যাওয়ার পর তাকে যেভাবে আশ্রয় দেওয়ার প্রস্তাব করেছে, তা বাংলাদেশিদের হতাশ করেছে।
এদিকে গত মাসে বাংলাদেশে বন্যার জন্য কিছু বাংলাদেশি উজানের বাধ থেকে পানি ছেড়ে দেওয়ার জন্য ভারতকে দায়ী করেন। যদিও এ অভিযোগ অস্বীকার করেছে ভারত।
এছাড়াও ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশের কাছে বিদ্যুৎ সরবরাহ বাবদ ৫০০ মিলিয়ন বা ৫০ কোটি ডলারের বেশি পাওনা ভারতের আদানি গ্রুপের। এ অর্থ দ্রুত পরিশোধে অন্তর্বর্তী সরকারকে তাগিদ দিয়েছে ভারতের আদানি গ্রুপ।
অন্যদিকে সম্প্রতি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার জানিয়েছেন যে দেশের মানুষের চাহিদা না মিটিয়ে ইলিশ মাছ রপ্তানি করা হবে না।
তিনি বিবিসিকে বলেছিলেন, 'ঢাকায় নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার এক মাস পর ইলিশ মাছ যেন বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে আরও সহজলভ্য হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য নতুন করে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রচুর মাছ বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে। এবার আমরা ইলিশ মাছ সীমান্ত পার হতে দেব না।'
তিনি এও বলেছিলেন, 'আগের সরকার দুর্গাপূজার সময় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিত। তারা এটাকে উপহার বলত। এবার আমাদের উপহার দেওয়ার প্রয়োজন আছে বলে আমি মনে করি না। কারণ ভারতে প্রচুর পরিমাণে রপ্তানি করার অনুমতি দেওয়া হলে আমাদের দেশের মানুষ ইলিশ খেতে পারবে না।'
কলকাতায় এক কেজির ভারতীয় ইলিশের বাজারমূল্য ইতিমধ্যে আড়াই হাজার রুপি (৩০ মার্কিন ডলার) ছুঁই ছুঁই। সে হিসেবে স্বাভাবিকের চেয়ে দাম বেড়েছে অন্তত ৩৫ শতাংশ। পূজার সামনে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ না পেলে এ দাম আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এসব মিলিয়ে শেখ হাসিনার আমলে শুরু হওয়া এই 'ইলিশ কূটনীতি' এবার নতুন চ্যালেঞ্জের মুখে।