খুলনার রাজপথে আন্দোলনকারীরা: বন্ধ দূর পাল্লার বাস, আতঙ্ক জনমনে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে খুলনায় অসহযোগ আন্দোলন পালনের জন্য নগরীর শিববাড়ি মোড়ে জড়ো হতে শুরু করেছে আন্দোলনকারীরা। আজ (রোববার) সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে তারা ধীরে ধীরে নগরীর শীববাড়ি মোড়ে অবস্থান নেওয়া শুরু করে।
বেলা ১১ টা পর্যন্ত মাত্র আধাঘন্টায় প্রায় ২ হাজার শিক্ষার্থীর সেখানে উপস্থিতি হয়। এছাড়া খন্ড খন্ড ভাবে শিক্ষার্থীরা যোগ হচ্ছিল।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, শিববাড়ি মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করার পরিকল্পনাও রয়েছে। ওই মিছিলটি পরিস্থিতি বিবেচনায় সোনাডাঙ্গা বাস স্টান্ড হয়ে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যেতে পারে। তবে পুলিশের বাধা ও অন্যান্য পরিস্থিতির বিবেচনায় তাদের সিদ্ধান্তও পরিবর্তন হতে পরে।
শীববাড়ী মোড়ের আশেপাশে পুলিশেরও অবস্থান দেখা গেছে। এই প্রসঙ্গে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) উপ কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, "মানুষের জান ও মালের নিরাপত্তার জন্য পুলিশ মাঠে রয়েছে।"
দূরপাল্লার বাস বন্ধ
খুলনার সোনাডাঙ্গা বাস স্ট্যান্ড ঘুরে দেখা গেছে, সেখান থেকে দূর পাল্লার কোন বাস ছেড়ে যায় নি। ওই স্ট্যান্ড থেকে ১৮ টি রুটে বাস চলাচল করে।
খুলনা জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন সোনা বলেন, "স্বল্প দূরত্বের রূটগুলিতে সকাল থেকে বাস চলাচল করছে। বিশেষ করে খুলনা থেকে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পিরোজপুরের দিকে বাসগুলি চলছে। তবে যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়ার দিকে বাস চলছে না। এছাড়া ঢাকা-খুলনার গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় যে কোন সময়ে যে কোন রূটে বাস বন্ধ বা চালু হতে পারে।"
মাঠে থাকার ঘোষণা আ.লীগ ও বিএনপির
খুলনা মহানগর ও জেলা বিএনপি দুপুর আড়াইটায় কেডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সংহতি সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে।
খুলনা মহানগর বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান মিলটন বলেন, "বিএনপি সংহতি সমাবেশ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই ভাবে নেতাকর্মীদের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।"
অন্যদিকে নগরীর ৭টি স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল (শনিবার) সন্ধ্যায় দলীয় কার্যালয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তাদের বিক্ষোভ সমাবেশের স্থানগুলি হল, বড় খালপাড় আল আমিন জামে মসজিদ চত্ত্বর, সাতরাস্তার মোড়, নতুনবাজার মোড়, মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয় চত্ত্বরে, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে, খলিল চেম্বার মোড় ও বানরগাতী খালাশীর চাতাল। স্থানীয় ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারা ওই সব পৃথক সমাবেশ করার নির্দেশনা পেয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, "বিএনপি ও নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াত শিবির ছাত্রদের আন্দোলনের উপর ভর করে দেশে হত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। তারা গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে সুপরিকল্পিতভাবে অগ্নিসন্ত্রাস ও নাশকতা করছে। এসব প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা মাঠে থাকবে।"
জনমনে আতঙ্ক
বেলা ১১ টার দিকে খুলনা শহরের একাধিক স্থান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, অধিকংশ দোকানপাঠ বন্ধ রয়েছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে কোন যানবহন নেই। মানুষের চলাচলও অতি নগন্ন।
কথা হয় পথচারী আশরাফুলের সাথে। তিনি বলেন, "বাসায় বাজার নেই। তাই বের হয়েছি। দ্রুত চলে যাব। বাইরের পরিস্থিতি সুবিধার মনে হচ্ছে না।"
সোনাডাঙ্গা বাস স্টান্ডে লিয়াকত মোল্লা নামের এক ব্যক্তি বলেন, "আমি সাতক্ষীরা যাব। খুবই রিক্স নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছি। বাস পেয়েছি, তবে পথে কি হবে জানি না।"