বিএনপি-জামায়াতের ২২০০ নেতা-কর্মীর জামিন
কোটা সংস্কার আন্দোলনে একাধিক নাশকতার মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপি-জামায়াতের দুই হাজার দুইশত নেতা-কর্মীর জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পৃথক বিচারকেরা পৃথক পৃথক আদেশে এই জামিন মঞ্জুর করেন।
ঢাকার সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখা থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতার অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে জামায়াতের এক আইনজীবী মো আরিফ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড (টিবিএস)-কে জানান, কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ শীর্ষ নেতাদের জামিন দিয়েছেন আদালত।
এদিকে, ৯ বছর ধরে ভারতে অবস্থানের পর বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ শিলং থেকে দেশে ফিরছেন। দেশে ফেরার জন্য তিনি ভ্রমণ অনুমোদন বা ট্রাভেল পাস পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার তাকে এ পাস দেওয়া হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমদ নিজেই গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানান।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আজ গুয়াহাটিতে বাংলাদেশের সহকারী হাইকমিশনারের অফিস থেকে ট্রাভেল পাসের বিষয়টি জানানো হয়েছে। ট্রাভেল পাসটি এখনও আমার হাতে এসে পৌঁছায়নি।'
সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে তার দেশে ফেরার পরিকল্পনা রয়েছে।
২০১৫ সালের ১০ মার্চ রাজধানীর উত্তরা থেকে সালাহউদ্দিন নিখোঁজ হন। ৬২ দিন পর ওই বছরের ১১ মে ভারতের মেঘালয়ের শিলংয়ে স্থানীয় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে।
ভারতের পুলিশের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়েছিল, সালাহউদ্দিন শিলংয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ঘোরাঘুরি করার সময় লোকজনের ফোন পেয়ে তাকে আটক করা হয়।
আজ (৬ আগস্ট) জামিনপ্রাপ্ত জামায়াত নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- জামায়াতের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য এবং গাজীপুর জেলা জামায়াতের সাবেক সেক্রেটারি ড. মো. সামিউল হক ফারুকী, শিবিরের সাবেক সভাপতি হাফেজ রাশেদুল ইসলামসহ বেশ কয়েকজন সিনিয়র নেতা।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, জামিনপ্রাপ্ত বিএনপি নেতাদের মধ্যে রয়েছেন- দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও নজরুল ইসলাম খান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী সায়েদুল আলম বাবুল, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক সাইফুল আলম নীরব, দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম মজনু, বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুর রহমান শিমুল, যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন এ্যানী, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।
এ ছাড়া বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির (বিজেপি) চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থও জামিন পেয়েছেন। আরও জামিন পেয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) তারেক রহমান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক আসিফ মাহতাব। এ ছাড়া জামিন পেয়েছেন গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর।
আদালত ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা যায়, আজ সকালেই সিদ্ধান্ত আসে রাজনৈতিক মামলায় যখনই জামিন আবেদন করা হবে, তখনই শুনানি হবে। এই সিদ্ধান্ত দেন ঢাকার জেলা জজ, মহানগর দায়রা জজ, চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।
এ খবর পাওয়ার পরে সকাল থেকে রাজনৈতিক মামলায় আটক আসামিদের জামিনের আবেদন করতে থাকেন আইনজীবীরা। সকাল থেকেই শুনানি শুরু হয়। তবে জামিন হবে সেই সিদ্ধান্তের কারণে আগে থেকেই জামিননামা প্রস্তুত করে নিয়ে যান আইনজীবীরা। জামিনের আদেশের পরপরই জামিননামা আদালতে দাখিল হয়। আবার বিশেষ ব্যবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে এসব জামিননামা কারাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের জামিন
বিএনপি নেতা ও মেসার্স ওয়ান স্পিনিং মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় জামিন দিয়েছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেনের আদালত এই আদেশ দেন।
দুদকের কোর্ট ইন্সপেক্টর আমির হোসেন জামিনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ৩০ জানুয়ারি যৌথ বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন গিয়াস উদ্দিন আল মামুন। এরপর থেকে তিনি কারাগারেই আছেন। তার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, মানি লন্ডারিং, কর ফাঁকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে ২০টিরও বেশি মামলা হয়।
গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের আইনজীবী হেলাল উদ্দিন জানান, সবগুলো মামলায় তিনি জামিন পেয়েছেন। যে মামলাগুলোর সাজা হয়েছিল, তার চেয়ে বেশি সময় ধরে জেলে আছেন।