তৈরি পোশাক কারখানা খুলছে আজ
আজ বুধবার (৭ আগস্ট) থেকে আবারও চালু হচ্ছে দেশের তৈরি পোশাক কারখানাগুলো।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে মারাত্মক সহিংসতার মধ্যে তিনদিন বন্ধ থাকার পর আবারও চালু হচ্ছে সব কলকারখানা।
একইসঙ্গে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বর্তমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কারখানা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি এ কে আজাদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধি দল শিল্প-কারখানা পুনরায় চালু করার ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সহযোগিতা কামনা করেন।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) বৈঠক শেষে এ কে আজাদ বলেন, "আগামীকাল (বুধবার) কলকারখানা খুলবে। আমরা আমাদের শিল্পের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্রপতিকে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানিয়েছি।"
বাংলাদেশ টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সভাপতি তপন চৌধুরী ও মেরিন চৌধুরীও প্রতিনিধিদলের সদস্য হিসেবে ছিলেন।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকার ওয়েস্টিনে এক জরুরি বৈঠকে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়।
বিজিএমইএ তার সকল সদস্য ও ক্রেতাদের কাছে এ সংক্রান্ত একটি বার্তাও পাঠিয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে– 'আমরা আগামীকাল সমস্ত কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।'
এছাড়া, বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনও (বিকেএমইএ) একই সিদ্ধান্ত নিয়ে তার সদস্য কারখানাগুলোতে বার্তা পাঠিয়েছে।
যদিও এই অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় ২০০ বিকেএমইএ সদস্য কারখানা এবং বাংলাদেশ গার্মেন্ট এক্সেসরিজ এবং প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ) এর প্রায় ৬০০ কারখানা মঙ্গলবার থেকেই পুনরায় উৎপাদন শুরু করেছে।
এদিকে, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের সাথে আলাপকালে ক্রেতারা কারখানা চালুর সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানালেও পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সাথে সাথে ধীরেসুস্থে শুরু করার পরামর্শ দিয়েছেন। তারা মনে করছেন এতে সবাই উপকৃত হবেন।
বৈঠক শেষে বিজিএমইএর সহ-সভাপতি আবদুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, "আমরা আগামীকাল (বুধবার) থেকে কারখানার উৎপাদন আবার শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
বিজিএমইএর পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন জানান, তারা শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে এবং অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের জন্য সহযোগিতা চেতে সব অংশীজনের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা করছেন।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রতিটি কারখানাকে অবশ্যই তাদের শ্রমিকদের বেতন এই সপ্তাহেই দেওয়া শুরু করতে হবে।
বিজিএমইএর পরিচালক আবরার হোসেন সায়েম বলেন, "আমরা আগামীকাল থেকে বিজিএমইএ-তে নিয়মিত অফিস টাইম শুরু করব এবং পরিস্থিতি বিশ্লেষণের জন্য আমরা প্রতিদিন বৈঠক করব।"
টিবিএস-এর সঙ্গে আলাপকালে বিকেএমইএর সহ-সভাপতি ফজলি শামীম এহসান জানান, তাদের প্রায় ২০০ সদস্য কারখানা ক্রেতাদের দেওয়া অর্ডারগুলো সময়ের মধ্যে ডেলিভারি দিতে ইতোমধ্যেই উৎপাদন শুরু করেছে।
তিনি বলেন, "বেশ কিছু কারখানার মালিক আজ আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছেন, দায়িত্বের সাথে উৎপাদন চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন তারা। নিরাপত্তা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আমরা আগামীকাল সমস্ত কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।"
তিনি উল্লেখ করেন, বিকেএমইএ-তে প্রায় ৮০০ নিটওয়্যার কারখানা রয়েছে।
এদিকে বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, "কোনো কার্যকর প্রশাসন এবং পুলিশ নিরাপত্তা সেবা দিতে প্রস্তুত না থাকায়, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত আমরা কারখানা খোলার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত নেইনি।"
খোকন আরও উল্লেখ করেন, কোনো মিলার যদি নিজের সিদ্ধান্তে তার কারখানা খুলতে চায়, তবে সে খুলতে পারে।
বিজিএমইএ বৈঠকে হান্নান গ্রুপের চেয়ারম্যান এবিএম শামসুদ্দিন বলেন, কারখানা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সর্বোত্তম উপায় হলো স্বাবলম্বী হওয়া।
তিনি আরো বলেন, "আমরা যদি একযোগে সব কারখানা খুলতে পারি, তাহলে আমাদের শিল্পাঞ্চলে কেউ অশান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না।"
তিনি আরও উল্লেখ করেন, মঙ্গলবার সকালে গাজীপুরের বোর্ড বাজার এলাকায় কয়েকটি কারখানা আবারও উৎপাদন শুরু করার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু পরে কিছু শ্রমিকের আপত্তির কারণে বন্ধ করতে হয়। কারণ বিজিএমইএর আগের ঘোষণায় বলা হয়েছিল, মঙ্গলবার কারখানা বন্ধ থাকবে।