কোনো এজেন্ডা নেই; কেউ কেউ সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে: হিন্দুদের ওপর হামলার ঘটনায় মির্জা ফখরুল
গত এক সপ্তাহে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে বেশ টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। চরম আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন। এদিকে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে এনডিটিভির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, দেশের প্রধান বিচারপতি ছাত্র আন্দোলনের পর পদত্যাগ করেছেন কেননা তিনি শেখ হাসিনার বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। বাংলাদেশের সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী দেশের বহু মানুষকে হত্যা করেছেন বলে দাবি করেন তিনি।
একইসাথে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী নির্বাচনে খালেদা জিয়া বিএনপিকে নেতৃত্ব দেবেন যদি তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন। এছাড়াও দলটি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক উন্নয়নে কাজ করবে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, "কিছু লোক পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের হিন্দুদের উপর হামলার চেষ্টা করছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি কোনো 'সিস্টেমেটিক এজেন্ডার' অংশ নয়।"
বিএনপির এই নেতা বিশ্বাস করেন যে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনী অগ্রসর রাজনৈতিক প্রক্রিয়াতে হস্তক্ষেপ করবে না। একইসাথে তিনি দাবি করেছেন যে, কোনও চরমপন্থী গ্রুপ বিক্ষোভে জড়িত ছিল না।
প্রধান বিচারপতির পদত্যাগের বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, "প্রধান বিচারপতি পূর্ববর্তী শাসনামলের একজন সহযোগী হিসেবে পরিচিত। ঐ সময়ে এদেশে বহু মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। নজিরবিহীন দুর্নীতি হয়েছে। তাই সেখান থেকে সবসময় তাকে অপসারণের দাবি ছিল। তিনি ঠিক অবাধ, ন্যায্য ও নিরপেক্ষ ছিলেন না। এ কারণেই দাবিটি খুব জোরালো ছিল।"
তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশের বিচার বিভাগ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি একটি প্রতিষ্ঠান হলেও গত শাসনামলের এটিকে সম্পূর্ণভাবে রাজনীতিকরণ করা হয়েছে।"
খালেদা জিয়া বর্তমানে জেল থেকে মুক্ত হয়েছেন। সেই হিসেবে তিনি নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবেন।
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া সম্পর্কে মহাসচিব বলেন, "তিনি খুব অসুস্থ, হাসপাতালে আছেন। তিনি নানামুখী রোগে ভুগছেন। এদেশে তার চিকিৎসা ঠিকঠাক চলছিল না। আমরা তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য বিচার বিভাগ ও সরকারের কাছে কয়েকবার অনুরোধ জানিয়েছিলাম। কিন্তু তা হয়নি। চিকিৎসকেরা বলছেন, তিনি এখন বিদেশে যাওয়ার উপযুক্ত নন। আমাদের তাকে দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ার আগে কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ থাকলে অবশ্যই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।"
মির্জা ফখরুল জানান, বিএনপি নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত রয়েছে। তবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নির্বাচন অনুষ্ঠিত করতে কিছু সময়ের প্রয়োজন হবে।
মহাসচিব বলেন, "পুরো নির্বাচনী ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে। এটি একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার অবস্থানে নেই। তাই নির্বাচন ব্যবস্থায়ও কিছু সংস্কার আনতে হবে।"
এদিকে শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি বলে দাবি করেছেন তারই ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। সেক্ষেত্রে মির্জা ফখ্রুল বলেন, "রাষ্ট্রপতি নিজেই রাজনৈতিক দল ও সেনাবাহিনীর উপস্থিতিতে বলেছেন, শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। কোন জবরদস্তি বা কিছু ছিল না। এটা ছিল একটা বিপ্লব। যখন লক্ষাধিক মানুষের মিছিল গণভবনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল, তখন তার নিরাপত্তা বাহিনী এবং সশস্ত্র বাহিনী তাকে বলেছিল তার কাছে দুটি বিকল্প রয়েছে। সেটা হচ্ছে, এখানে জনতার ঢলের মাঝে থাকুন কিংবা দেশ ছেড়ে চলে যান। শেষ মুহূর্তে, তিনি দেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেন।"
সংখ্যালঘুদের ওপর সিস্টেমিকভাবে হামলা হচ্ছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখ্রুল বলেন, "এটা মোটেও সত্য নয়। যখন আমাদের দেশে বা কোনো দেশে পরিবর্তন হয়, বিশেষ করে তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলিতে, কিছু লোক আছে যারা সুবিধা নেওয়ার চেষ্টা করে। দুর্ভাগ্যবশত বাংলাদেশে প্রতিটি বিপ্লবের সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতারা ভুক্তভোগী হন। তারা মুসলমান বা হিন্দু যা-ই হোক না কেন। কিছু বিক্ষিপ্ত আক্রমণ (সংখ্যালঘুদের উপর) হতে পারে। তবে এটি মোটেও রাজনৈতিক বা সিস্টেমিক এজেন্ডা ছিল না।" একইসাথে দেশে বেশ ভালো সাম্প্রদায়িক সম্প্রিতি আছে বলে তিনি দাবি করেন।
মহাসচিবকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, শেখ হাসিনার সমর্থকদের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে তার সরকারের ঘনিষ্ঠ সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্মূল করা হবে কি-না। তখন মির্জা ফখরুল জানান, জাতিসংঘকে একটি তদন্ত করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
মহাসচিব বলেন, "যদি কেউ মানবাধিকার লঙ্ঘন, বিরোধীদের পরিকল্পিতভাবে হত্যা বা জোরপূর্বক গুম করার জন্য দোষী সাব্যস্ত হয়, স্বাভাবিকভাবেই তাদের মামলা তদন্ত করা হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
মির্জা ফখরুল আশা করেন, রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনীর কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। তিনি বলেন, "সেনাবাহিনীর প্রতি জনগণের এমন আস্থা আছে যে, তারাই দেশের ত্রাণকর্তা। তাই আমি মনে করি না তারা এমন কিছু করবে যা মানুষের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যাবে।"
শেখ হাসিনার শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চরমপন্থী কোনো গোষ্ঠীর জড়িত থাকার বিষয়টি নাকচ করে দেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, "জামায়াত কোনো চরমপন্থী রাজনৈতিক দল নয়। তবে বাংলাদেশে অন্যান্য চরমপন্থী গোষ্ঠী ছিল। আমি মনে করি না যে, তাদের অস্তিত্ব এখনো আছে। চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলি কোনভাবেই (বিক্ষোভের সাথে) জড়িত নয়। মোটেই নয়। এটি সম্পূর্ণভাবে ছাত্রদের (নেতৃত্বাধীন) এবং তাদের বেশিরভাগই বেশ প্রগতিশীল। আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ কেউ অসাধারণ মেধাবী। আমি নিশ্চিত ও বিশ্বাস করি যে, এই বিপ্লব অবশ্যই সফল হবে।"
অনুবাদ: মোঃ রাফিজ খান