বাংলাদেশে বিদ্যুৎ রপ্তানি থেকে ভারতের আয় ১০০ কোটি ডলার, যার বেশিরভাগই আদানির
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে এক বিলিয়ন বা ১০০ কোটি ডলার মূল্যের বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে ভারত। আর এই বিদ্যুতের বেশিরভাগই রপ্তানি করেছে আদানি শিল্পগোষ্ঠী। তাদের একটি কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে বিক্রির কথা থাকলেও সম্প্রতি সেটি ভারতেই বিক্রির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট ১১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য বা সেবা রপ্তানি করেছিল ভারত। এর মধ্যে শুধু বিদ্যুতের পরিমাণই ছিল ৯.৩ শতাংশ বা এক বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। দুই বছর আগে ভারত বিদ্যুৎ রপ্তানি করে বাংলাদেশ থেকে ৪৯৮ মিলিয়ন (প্রায় ৫০ কোটি) ডলার আয় করেছিল। যা দেশটির মোট রপ্তানির তিন শতাংশ।
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার পর সৃষ্ট অনিশ্চয়তার মধ্যে ঝুঁকি কমাতে সম্প্রতি দিল্লি তার বিদ্যুৎ রপ্তানির নীতিতে পরিবর্তন আনে।
ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যে অবস্থিত আদানির গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদনক্ষমতা এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট। যেখানে উৎপাদিত বিদ্যুতের পুরোটাই বাংলাদেশে রপ্তানির কথা ছিল।
কলকাতাভিত্তিক ইস্টার্ন রিজিওনাল পাওয়ার কমিটির (ইআরপিসি) তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ সালের এপ্রিল থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে বাংলাদেশে ১১ হাজার ৯৩৩.৮৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ রপ্তানি হয়েছে। যার ৬৩ শতাংশ বা ৭ হাজার ৫০৮ মিলিয়ন ইউনিট রপ্তানি করা হয়েছে আদানির গড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে।
শেখ হাসিনা পালিয়ে দিল্লি চলে যাওয়ার এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে গত ১২ আগস্ট ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় তাদের ২০১৮ সালের 'বিদ্যুৎ আমদানি/রপ্তানি নীতি' সংশোধন করল।
গত বৃহস্পতিবার অবশ্য আদানি পাওয়ারের পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আর বিদ্যুৎ রপ্তানি নীতিতে সম্প্রতি যে সংশোধনী আনা হলো, তা তাদের বিদ্যমান চুক্তিতে কোনো প্রভাব ফেলবে না।
বাংলাদেশে বর্তমানে ভারতের চারটি প্রতিষ্ঠান বিদ্যুৎ রপ্তানি করছে। এর মধ্যে দুটি হলো বিদ্যুৎ ব্যবসার প্রতিষ্ঠান: এনটিপিসি বিদ্যুৎ ব্যাপার নিগম লিমিটেড (এনভিভিএন) ও পিটিসি ইন্ডিয়া লিমিটেড। অন্য দুটি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র: সেম্বকর্প এনার্জি ইন্ডিয়া লিমিটেড ও আদানি পাওয়ার।
বাংলাদেশে রপ্তানির ৯০ শতাংশের বেশি আসে ঝাড়খণ্ডের গড্ডা জেলার মতিয়া গ্রামে অবস্থিত আদানির কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে। এই গড্ডা কেন্দ্রেই উৎপাদিত বিদ্যুতের শতভাগ কেনার চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে, গত বছরের এপ্রিল থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত মোট বাংলাদেশে ১১ হাজার ৯৩৩.৮৩ মিলিয়ন ইউনিট বিদ্যুৎ রপ্তানি করেছে ভারত। যার মূল্য ১.০৩ বিলিয়ন ডলার। সে হিসাবে এই সময়ে বাংলাদেশে ভারতের মোট ১১.০৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানিতে বিদ্যুতের অংশীদারত্ব ৯.৩ শতাংশ।
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ডিজেল। এ পণ্য থেকে রপ্তানি আয় ছিল ৮২৯.৫৯ মিলিয়ন ডলার, যা মোট রপ্তানি আয়ের ৭.৫ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে ছিল তুলা। এই সময়ে বাংলাদেশে ৫৯৫.৮১ মিলিয়ন ডলার মূল্যের তুলা রপ্তানি করেছে ভারত।
এর আগের অর্থবছরে অর্থাৎ ২০২২-২৩ সালে বাংলাদেশে ভারত ১২.২১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য বা সেবা রপ্তানি করেছিল। এর মধ্যে বিদ্যুৎ ছিল ১.০৭৫ বিলিয়ন ডলার মূল্যের বা মোট রপ্তানি আয়ের ৮.৮ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশে রপ্তানি করে তুলা থেকে ৪৯৫.৯৭ মিলিয়ন ডলার ও ডিজেল থেকে ৪২৩.০৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছিল ভারত।
এরও আগের অর্থবছরে অবশ্য বাংলাদেশে তুলা রপ্তানি করেই সবচেয়ে বেশি আয় করেছিল ভারত।
অনুবাদ: রেদওয়ানুল হক