আদানির সঙ্গে প্রশ্নবিদ্ধ চুক্তি যেভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে
ভারতেরই অন্য উৎস থেকে যে দামে বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ, তার প্রায় দ্বিগুণ দাম দিতে হচ্ছে আদানিকে। দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ের অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে এককভাবে এ ভারতীয় কোম্পানির দায় প্রায় ৮ শতাংশ, যার কারণে আদানির সঙ্গে সম্পাদিত বিদ্যুৎ চুক্তিটি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
ভারতে আদানি পাওয়ারের এই বিদ্যুৎকেন্দ্র ১,৬০০ মেগাওয়াট সক্ষমতার, যেখান থেকে রপ্তানি করা হয় বাংলাদেশে। এই কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ কেনার চুক্তির কারণেই সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের গ্রাহকদের আগের থেকে বিদ্যুতের জন্য চড়া দাম দিতে হচ্ছে।
আনুষ্ঠানিক তথ্যমতে, বাংলাদেশ ২০২৩ সালে আদানির থেকে প্রতি কিলোওয়াট ঘণ্টা (বা এক ইউনিট) বিদ্যুৎ ১৪ টাকা ২ পয়সায় কিনেছিল। ভারতের ইলেকট্রিসিটি এক্সচেঞ্জ মার্কেট থেকে ৭ টাকা ৮৩ পয়সা দরে আরো ১,১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনেছিল বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ ক্রয়ের প্রতিকূল চুক্তিগুলোর কারণেই বেড়েছে দাম
বাংলাদেশের মোট বিদ্যুৎ চাহিদার প্রায় দশ-ভাগের এক ভাগই সরবরাহ করছে আদানি। যার প্রভাব সহজেই দেখা যায় দেশের গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয়ে। যেখানে পাঁচ বছর আগেও প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের গড় ব্যয় ছিল ৫ টাকা ৯১ পয়সা, আর ২০২১-২২ সময়ে ছিল ৮ টাকা ৮৪ পয়সা– এখন সেটি বেড়ে হয়েছে ১১ টাকা ৩ পয়সা। তবে আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনাই এর একমাত্র কারণ নয়। বরং আরো কিছু প্রতিকূল বিদ্যুৎ চুক্তিও এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী।
বাংলাদেশে তাদের ব্যয়বহুল বিদ্যুৎ বিক্রি শুরুর পরে– এদেশে আদানি গ্রুপের রপ্তানি ঝুড়ির শীর্ষ আইটেমে পরিণত হয় বিদ্যুৎ। ভারতের বিদ্যুৎ রপ্তানি আয় বেড়ে ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়ায়, যার বেশিরভাগটাই গেছে আদানির পকেটে।
এই বাণিজ্যে আদানি আসার আগে, ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি বাংলাদেশের জন্য অনুকূল ছিল। ২০১০ সালে স্বাক্ষরিত একটি কাঠামো চুক্তির অধীনে, ২০১৩ সাল থেকে ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানি শুরু হয়। এরপর যতদিন না ডলারের দাম বেড়েছিল– ততদিন প্রতি ইউনিট ৬ টাকা ছিল ভারত থেকে কেনা বিদ্যুতের দাম।
২০১৭ সালে বিদ্যুৎ ক্রয়ে আদানি গ্রুপের সাথে বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তি করে বাংলাদেশ। জনসম্মুখে চুক্তির ধারাগুলো প্রকাশ ছাড়াই বাংলাদেশ ২০২৩ সাল থেকে আদানির বিদ্যুৎকেন্দ্রটি থেকে ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে। চলতি মাসের শুরুতে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের আগে পর্যন্ত আদানি প্ল্যান্টটি সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতো। কিন্তু, হাসিনার দেশ ছাড়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ভারত সরকার আদানি বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে ভারতের অভ্যন্তরীণ বাজারেও বিদ্যুৎ বিক্রি করার অনুমতি দেয়।
আদানি পাওয়ার প্রতি ইউনিট ১৪ টাকা দামে ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করে, যা বাংলাদেশের মোট ১৪ হাজার মেগাওয়াট উৎপাদনের সাথে যোগ হয়, যার জন্য প্রতি ইউনিটে গড়ে ৮ টাকা খরচ হয়।
শুধুমাত্র আদানি পাওয়ারের সাথে অসম আমদানি চুক্তির কারণে প্রতি ইউনিটের গড় দাম ৭ দশমিক ৬৯ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ টাকা ৬১ পয়সা হয়েছে।
এভাবে আদানির থেকে বিদ্যুৎ কেনার সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের বিদ্যুৎ শিল্পের সবাইকেই বিস্মিত করেছিল, কারণ বাংলাদেশের নিজস্ব বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্বৃত্ত সক্ষমতা রয়েছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১০ হাজার মেগাওয়াট সক্ষমতা কাজে লাগানো হচ্ছে না, বা অলস পড়ে আছে। বেশিরভাগক্ষেত্রেই কেবল মূল জ্বালানির অভাব যার প্রধান কারণ।
এ ছাড়া, ইউনিট প্রতি গড় বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ ৬.২৯ রুপি হওয়ায়, ভারতের আরও অনেক উৎস রয়েছে, যেখান থেকে বাংলাদেশ সস্তায় বিদ্যুৎ কিনতে পারত।
অপরিশোধিত বিলের বোঝা বাড়াচ্ছে দেশের দুর্দশা
বাংলাদেশের ডলার সংকট দীর্ঘদিন ধরে চলছে, এই প্রেক্ষাপটে আমদানি করা বিদ্যুতের অপরিশোধিত বিল নিয়ে উদ্বিগ্ন কর্মকর্তারা। কেবলমাত্র আদানির বিদ্যুতের জন্যই প্রতি মাসে ১০০ মিলিয়ন (১০ কোটি) ডলারের বিল যোগ হচ্ছে।
বিদ্যুৎখাতের কর্মকর্তারা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের ওপর চাপ কমাতে, আর এই বিশাল বোঝা লাঘবের জন্য আদানির সাথে বিদ্যুৎ চুক্তি পুনঃপর্যালোচনা করতে হবে। তারা বলেছেন, একই রকমের উৎসের চেয়ে আদানির বিদ্যুতের দাম অনেক বেশি। চুক্তিটি পুনঃপর্যালোচনা বা সংশোধন করা গেলে, এটা অর্ধেক করা সম্ভব। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-র কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে এমনটাই বলা হয় বার্তাসংস্থা ইউএনবির এক প্রতিবেদনে।
অস্বচ্ছ চুক্তি
গত বছরের এপ্রিলে ওই কেন্দ্রটি থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার আগেই আদানির কয়লার মূল্য নির্ধারণের পদ্ধতি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা। এমনকী তারা এই ক্রয় চুক্তি সংশোধনের অনুরোধও করেন।
২০২২ সালের ডিসেম্বরে এক চিঠিতে বিদ্যুৎ বিভাগ উল্লেখ করে যে, প্রতি টন কয়লার দাম ৪০০ ডলার ধরেছে আদানি, অথচ বাংলাদেশের পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি টনে তা ২৪৫ ডলারে কেনা হয়েছে।
কিন্তু, তাদের এসব উদ্বেগকে আমলেই নেওয়া হয়নি।
তখনকার বিদ্যুৎ,জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, 'বিদ্যুতের দাম পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্টে (পিপিএ) যা ছিল, সেটিই হবে। চুক্তিতে যা ছিল, সেটিই থাকবে। দাম ওঠানামা করবে আন্তর্জাতিক বাজারে কয়লার দামের ওপর।
অথচ ২০১৭ সালে ঢাকায় আদানির সাথে এই পিপিএ সই হয়, যখন ইতোমধ্যেই দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রকৃত সক্ষমতার থেকে স্থাপিত সক্ষমতা (ইনস্টলড ক্যাপাসিটি) অনেকটাই উচ্চ ছিল। ফলে এ চুক্তি সই হওয়ার সঙ্গেসঙ্গেই সেটি নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। এরপর যখন বাংলাদেশে আদানির বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়, ততোদিনে অর্থাৎ ২০২৩ সালের জুনে স্থাপিত সক্ষমতা বেড়ে পৌঁছেছিল ২৪ হাজার ৯১১ মেগাওয়াটে। তবে ওই অর্থবছরে সর্বোচ্চ (পিক) উৎপাদন হয়েছিল ১৫ হাজার ৬৪৮ মেগাওয়াট।
এই বাস্তবতায় বিশেষজ্ঞরা আবিষ্কার করেন যে, ভবিষ্যতের বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য সরকারের হিসাব– চাহিদার অবাস্তব প্রক্ষেপণের ভিত্তিতে করা হয়েছে। গবেষণা সংস্থা- সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) জানায়, ২০৪১ সালে বিদ্যুৎ চাহিদা ৫০ হাজার মেগাওয়াটে পৌঁছানোর সরকারের যে প্রক্ষেপণ– সেটি 'খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী', এবং তা করা হয়েছে চাহিদার অবাস্তব প্রবৃদ্ধির অনুমান করে, যা ২০২২ সালের জুনে জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিত মহাপরিকল্পনার খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
দেশে সেসময় বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণাধীন বা পরিকল্পিত ছিল। বাংলাদেশের গ্যাসের মজুদ হ্রাস পাওয়ার সাথে সাথে সরকার কয়লাভিত্তিক এবং জ্বালানি তেলচালিত বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর দিকে ঝুঁকছিল, যার ফলে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয়ও বেশি হয়। এবং ভর্তুকি ও ক্যাপাসিটি চার্জ বাবদ খরচও বেড়ে যায়।
গত বছরের এপ্রিলে আদানির প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হওয়ার সময়, সরকারের নগদ টাকা এবং ডলার দুইয়েরই সংকট চলছিল। এই অবস্থায়, সরকারের ওপর স্থানীয় বিদ্যুৎ ও গ্যাস উৎপাদকদের বকেয়া বিলের বোঝা ক্রমেই বাড়ছিল। সময়ের সাথে সাথে সংকট আরও বেড়ে যায়, এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদনকারীদের কাছে বিপিডিবি-র বকেয়া প্রায় ৩৩ হাজার ১০৯ কোটি টাকায় পৌঁছায়। এর মধ্যে আদানিসহ ভারতীয় আমদানি উৎসগুলোর পাওনা ৫ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা।
এমতাবস্থায়, গত ২৯ মে প্রায় ৭০০ মিলিয়ন (৭০ কোটি) ডলারের বকেয়া বিদ্যুৎ বিল দ্রুত পরিশোধের জন্য তখনকার অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সাথে দেখা করে তাঁকে অনুরোধ করেন আদানি গ্রুপের পরিচালক প্রনব আদানি।
উচ্চ পর্যায়ে আদানি গ্রুপের ঘনিষ্ঠতা
গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, আবারো আলোচনায় আসে আদানি পাওয়ারের চুক্তি।
এক সপ্তাহের মধ্যে শুধুমাত্র রপ্তানির জন্য তৈরি করা বিদ্যুৎকেন্দ্রটিকে স্থানীয় বাজারেও বিক্রির অনুমতি দেয় ভারতের বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়। তবে রপ্তানি বাজারে বিল বকেয়া থাকলেই তা করা যাবে।
বর্তমানে ভারতের শুধুমাত্র রপ্তানির জন্য নির্দিষ্ট একমাত্র বিদ্যুৎকেন্দ্র এটি, ফলে নিজ দেশের সরকারের এই বিদ্যুৎ রপ্তানি বিধিমালা পরিবর্তনেরও একমাত্র সুবিধাভোগী হলো আদানি পাওয়ারের কেন্দ্রটি।
তবে এই পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে তাঁদের সরবরাহ প্রভাবিত হবে না বলে জানিয়েছে আদানি শিল্পগোষ্ঠী।
গত ১৪ আগস্ট তারা জানায়, 'চাহিদা অনুসারে বাংলাদেশকে বিদ্যুৎ সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে আদানি পাওয়ার। গতকাল বাংলাদেশকে ৭৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়েছে, এবং দেশটির চাহিদা অনুযায়ী আজকে ৭৬৯ মেগাওয়াট সরবরাহ করা হয়েছে।'
আদানি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা গৌতম আদানি গত এক দশকে তার বিস্ময়কর উত্থানের মধ্যে দিয়ে কর্পোরেট দুনিয়ায় তাক লাগিয়েছেন। কিছু সময়ের জন্য জেফ বেজোসকে পেছনে ফেলে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনীর স্থানও অধিকার করেছিলেন।
২০২২ সালে প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিজ চেষ্টায় ধনকুবের বনে যাওয়া এই বিলিয়নেয়ারের উত্থান— ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত, ২০১৫ সালে তার বাংলাদেশ সফরের সময় মোদিই গোড্ডা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন।
মোদির ঢাকা সফরের দুই বছর পরেই এই চুক্তি হয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিটটি চালু হয় গত বছরের এপ্রিলে, এবং দ্বিতীয় ইউনিট চালু হয় একই বছরের জুনে। আনুষ্ঠানিকভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি হস্তান্তরের জন্য গত বছরের জুলাইয়ে ঢাকাতেও এসেছিলেন গৌতম আদানি।
বাংলাদেশের তখনকার প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাতের পর তার ছবি নিজের 'এক্স' হ্যান্ডেলে পোস্ট করে তিনি লিখেছিলেন, 'ফুল লোড চালু হওয়া ও হস্তান্তরের বিষয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ এবং তাকে ১,৬০০ মেগাওয়াটের গোড্ডা সুপার ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্ল্যান্ট হস্তান্তর করতে পেরে সম্মানিত বোধ করছি।'
চুক্তি পর্যালোচনা ও সংশোধনের আহ্বান
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম তামিম বলেন, আদানির সাথে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তিটি খতিয়ে দেখতে হবে। 'চুক্তিতে কী আছে আমি জানি না। যদি এখানে কোনো অসম শর্ত বা ন্যায্যতার অভাব থাকে– তাহলে এটি নিঃসন্দেহে পুনঃমূল্যায়ন ও সংশোধন করতে হবে।'
তিনি বলেন, চুক্তিটি একপেশে বা কেবল একপক্ষই লাভবান হচ্ছে এমন প্রতীয়মান হলে, এবং পায়রা, মাতারবাড়ী ও রামপালের মতো একই ধরনের বিদ্যুৎকেন্দ্রের চেয়ে তাদের বিদ্যুতের দাম বেশি হলে– সেটা গ্রহণযোগ্য হবে না।
বুয়েটের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ প্রকৌশলের অধ্যাপক ম তামিম। ২০০৭-০৮ সালে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধানের জ্বালানি বিষয়ক বিশেষ সহকারীও ছিলেন। তিনি জানান, সাধারণত এ ধরনের ক্রয়চুক্তিতে চুক্তিভঙ্গের ক্ষেত্রে কোনো পক্ষের আপত্তি বা প্রত্যাহারের বিষয় আসলে– সেটি নিয়ে পুনরায় আলোচনার ক্লজ বা অনুচ্ছেদ থাকে।
'এটা নির্ভর করে কী ধরনের চুক্তি তার ওপর। এ ধরনের চুক্তি ভারসাম্যপূর্ণ হওয়াটা প্রত্যাশিত, যেখানে বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেওয়ার পাশাপাশি সকল পক্ষের জন্য তা উইন-উইন সিচুয়েশন নিশ্চিত করা হয়'- তিনি যোগ করেন।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ এর সহসভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের সহ-সভাপতি এম শামসুল আলম বলেন, 'চুক্তিটি অবশ্যই পর্যালোচনা করতে হবে– কারণ এটি অযাচিত এবং জাতীয় স্বার্থকে ক্ষুণ্ণ— করে কেবল বিনিয়োগকারীদের পক্ষে ছিল। এমনকি এটি সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা যেতে পারে। সরকার যদি তা না করে, তাহলে আদানির সাথে করা বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিলের জন্য মানুষ আদালতে যেতে পারে' – নাইকো ও আরও কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এধরনের আইনি পদক্ষেপের উদাহরণ টেনে বলেন তিনি।
এই জ্বালানি বিশ্লেষক বলেন, অন্য কারো কোনো ধরনের দরপ্রদানের সুযোগ না থাকায়, এখানে বিনিয়োগকারীরা তাদের সর্বোচ্চ সুবিধা নিয়েছে এবং চুক্তিটি একবারেই তাদের অনুকূলে সই করা হয়েছে। তাই বিদ্যুৎ কেনার দাম বাড়লে– একমাত্র ক্রেতা পিডিবি সেই বোঝা গ্রাহকদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে। ফলে তাদেরকে বিদ্যুতের জন্য চড়া দাম দিতে হচ্ছে। 'এখানে (আগের) সরকারকেই মনে হচ্ছে, মুনাফার ব্যবস্থাকারী হিসেবে।'
বিদ্যুৎ ও জ্বালানীর দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইন, ২০১০ দরপত্র আহ্বান করা ছাড়াই সব ধরনের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রকল্পের চুক্তি সই করার অনুমোদন দেয়। এরমধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদন থেকে শুরু করে গ্যাসের অনুসন্ধান, এবং কয়লাসহ অন্যান্য জ্বালানি আমদানির মতো বিষয় আছে। ২০২১ সালে পাঁচ বছর মেয়াদ বাড়িয়ে এটিকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত কার্যকর রাখা হয়েছে।