চট্টগ্রাম বন্দরে ডুবে থাকা শতবর্ষী জাহাজের খণ্ডবিশেষ উদ্ধার
কর্ণফুলী নদীর চট্টগ্রাম বন্দর চ্যানেলে একটি ডুবে যাওয়া জাহাজের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করেছে হিরামন স্যালভেজ লিমিটেড নামে একটি দেশীয় প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘ আট মাসের প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম বন্দরের ডাঙ্গারচর ঘাটের কাছা থেকে এই জাহাজটি উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধারকারী সংস্থা হিরামন স্যালভেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাহিদ হোসেন টিবিএসকে বলেন, "এটি ব্রিটিশ আমলে ডুবে যাওয়া জাহাজ হতে পারে। কারণ উদ্ধার হওয়া জাহাজে সেই সময়কার লোগো সমৃদ্ধ মুদ্রা এবং বিভিন্ন পণ্য রয়েছে। এছাড়া জাহাজটির ইঞ্জিন কয়লাচালিত। প্রায় দেড়শ বছর আগের জাহাজগুলো কয়লা চালিত ইঞ্জিন দিয়ে চলতো। তাই আমরা ধারণা করছি জাহাজটি দেড়শ বছরের কাছাকাছি সময়ে ডুবেছিল।"
তিনি আরো বলেন, "জাহাজটিতে ১৫০ বছরের পুরানো মুদ্রা পাওয়া গেছে। তাছাড়া, তামা-পিতল ও রুপার আসবাবপত্র যেমন- প্লেট, হাঁড়ি-পাতিল, গ্লাস, পানির পাত্র, চামচ, বিভিন্ন নকশা করা ব্যবহার্য শৌখিন জিনিসও পাওয়া গেছে। এর মধ্যে, মোমবাতির দানি, ফুলের টপ, আলমারির নকশা, হ্যারিকেন ও কুপি, হাতির দাঁত, দুরবিন সহ আরো অনেক জিনিস রয়েছে। এই সকল উদ্ধারকৃত জিনিস দেখলে ধারণা করা যায়, এই জাহাজটি ব্রিটিশ আমলের। ভারত উপমহাদেশে জাহাজটি বাণিজ্য করতে এসে কর্ণফুলীর এই স্থানে ডুবে যায়।
জাহাজটির উদ্ধার কাজে নিয়োজিত একজন সিনিয়র ডুবুরি মো. জহির বলেন, "এই জাহাজটি নদীর ৬০ ফুট গভীরে ছিল এবং বালি ও মাটি জমে, চর পড়ে গিয়েছিল। পরবর্তীতে আমরা ড্রেজিং করে জাহাজটি উন্মুক্ত করি এবং দক্ষ ডুবুরিদের মাধ্যমে জাহাজের মাঝখানে ওয়্যার সলিং করে কেটে দুই ভাগে বিভক্ত করি।"
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কর্তৃপক্ষ হিরামন স্যালভেজ লিমিটেডকে অজ্ঞাত ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের অনুমতি দেয় এবং সাধারণ ধ্বংসাবশেষ উদ্ধারের জন্য আল মাদাদ নামে একটি কোম্পানিকে অনুমেতি দেওয়া হয়। আল মাদাদ সেখানে আল আমানত নামে তাদের কাজ পরিচালনা করবে। সম্প্রতি কর্ণফুলীর তীর সংলগ্ন ধানগর চর এলাকা থেকে ওই পুরানো অজ্ঞাত ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করেছে হিরামন।
জাহাজ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জাহাজটি উদ্ধার হওয়ায় বন্দর চ্যানেলে জাহাজের চলাচল নিরাপদ হয়েছে। সেখানে পলি জমা কিংবা ডুবো চর সৃষ্টির আশঙ্কা আর থাকবে না।
বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক খায়রুল আলম সুজন বলেন, বন্দর চ্যানেল থেকে জাহাজ উদ্ধারের ফলে জাহাজ চলাচল নিরাপদসহ ড্রেজিং খরচ কমবে। জাহাজটি কত বছর আগে ডুবেছে তা নিশ্চিত করে বলা না গেলেও এটি অনেক বছর আগের তা নিশ্চিত করে বলা যায়। কারণ শতবছর আগে জাহাজগুলোর চলতো কয়লা দিয়ে চালিত ইঞ্জিনের মাধ্যমে।