মহেশখালী থেকে বিলুপ্তপ্রায় ১২টি মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার
কক্সবাজারে মহেশখালীতে 'পরিত্যক্ত বসত ঘর' থেকে পাচারের জন্য রাখে বিলুপ্তপ্রায় ১২ টি মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার করেছে বন বিভাগ।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) দুপুর ১টার দিকে উপজেলার শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়ায় এ অভিযান চালানো হয়। বনবিভাগের মহেশখালী রেঞ্জ কর্মকর্তা এস এম এনামুল হক এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তবে পাচারকাজে জড়িতরা পালিয়ে যাওয়ায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান তিনি।
উদ্ধার করা হনুমানগুলোর মধ্যে ৫টি বাচ্চা এবং ৭টি প্রাপ্ত বয়স্ক।
এনামুল হক বলেন, 'বৃহস্পতিবার দুপুরে মহেশখালীর শাপলাপুর ইউনিয়নের বারিয়াপাড়ায় এসময় শাপলাপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের পরিত্যক্ত বসত ঘরে বিলুপ্ত প্রজাতির কয়েকটি হনুমান পাচারের উদ্দ্যেশে মজুদ করার খবর পায় বনবিভাগের কর্মীরা। পরে বিষয়টি উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশকে অবহিত করে বনবিভাগের একটি দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে। এসময় তারা সন্দেহজনক বসত ঘরটি ঘিরে ফেললে উপস্থিতি টের পেয়ে পাচারকারিরা পালিয়ে যায়। এসময় পরিত্যক্ত ঘরে খাঁচায় বন্দি অবস্থায় বিভিন্ন বয়সী ১২ মুখপোড়া হনুমান পাওয়া যায়।'
তিনি আরও বলেন, 'ধারণা করা হচ্ছে মহেশখালীর প্রাকৃতিক বন থেকে পাচারকারিরা এসব হনুমান ফাঁদে পেলে শিকার করেছে।'
বনবিভাগের এ রেঞ্জ কর্মকর্তা বলেন, 'পরিত্যক্ত ঘরটির মালিক আমিনুল ইসলাম জানিয়েছেন যে তিনি পরিবার নিয়ে কক্সবাজার শহরে বসবাস করেন। ঘটনাস্থলের পরিত্যক্ত ঘরটির তিনি মালিক হলেও এখন ব্যবহার করেননা। পাচারকারিরা ঘরটিতে লোকজন না থাকা সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এসব হনুমান মজুদ করেছে।'
উদ্ধার করা হনুমানগুলো বিকালেই শাপলাপুর বনবিটের আওতাধীন প্রাকৃতিক বনে অবমুক্ত করা হয়েছে বলে জানান এস এম এনামুল হক।
বাংলাদেশ বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তা ও বন্যপ্রাণী গবেষক জোহরা মিলানের তথ্যমতে, দেশে তিন প্রজাতির হনুমানের দেখা মেলে, যার মধ্যে একটি হলো মুখপোড়া হনুমানের। বুনো পরিবেশে এদের গড় আয়ু ১৮-৩০ বছর। সাধারণত জুলাই- অক্টোবর বা কোনো-কোনো ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিল এদের প্রজননকাল।
স্ত্রী হনুমান ২০০ থেকে ২১২ দিন গর্ভধারণের পর সাধারণত ১/২টি বাচ্চা প্রসব করে। হনুমানের এই প্রজাতিটি গাছের কঁচিপাতা, শাকসবজি ও ফলমূল, ফুল খায়। তবে বসতবাড়ির কাছাকাছি বসবাস করায় মানুষের খাবারেও এরা অভ্যস্ত হয়ে পড়ছে।
বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ কর্মকর্তার তথ্যমতে বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন)-২০১২ অনুযায়ী হনুমানের এই প্রজাতিটি সংরক্ষিত। তাই এটি হত্যা বা এর কোনো ক্ষতি করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।
মহেশখালী উপজেলার সবচেয়ে বেশি পাহাড়ি অঞ্চল শাপলাপুর ও ছোট মহেশখালী। এসব পাহাড়ি এলাকায় এখনো বন্যপ্রাণীর বিচরণ হয়েছে। পাহাড় কাটা এবং বন্যপ্রাণী নিধনের কারণে পাহাড়ের জীববৈচিত্র্য এখন বিলুপ্ত প্রায়।