আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে আড়িপাতার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপের আহ্বান
নাগরিকদের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে ফোন এবং ডিজিটাল যোগাযোগে আড়িপাতার মাধ্যমে যে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা।
তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে ভবিষ্যতে এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে, আড়িপাতার মাধ্যমে চুরি করা ব্যক্তিগত তথ্য পুনরুদ্ধার করে ধ্বংস করার জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশেষজ্ঞ ও মানবাধিকার কর্মীরা আজ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বিএসিসি কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত এক সংলাপে তাদের মতামত প্রকাশ করেন।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিশেষজ্ঞ এবং মানবাধিকার কর্মীরা অনুষ্ঠানে বলেন, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি) এবং টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর (ডট) মনিটরিংয়ের আড়ালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এগুলোকে ওয়েবসাইট এবং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম হ্যাক করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তারা এসব প্রতিষ্ঠানকে আরও জনবান্ধব করার জন্য অবিলম্বে সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, "ফোনে আড়িপাতা কর্তৃত্ববাদী নিয়ন্ত্রণ ও ক্ষমতা বজায় রাখার একটি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল। পূর্ববর্তী সরকারের আমলে কোনো রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানই নিরপেক্ষ ছিল না।"
ব্যারিস্টার সারা হোসেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীবিদ্বেষী ও সাম্প্রদায়িক পোস্ট অপসারণের দাবি জানান।
অনলাইনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশি সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের খান অভিযোগ করেন যে, পূর্ববর্তী সরকার শুধু হানি ট্র্যাপেই যুক্ত ছিল না বরং বিভিন্ন ব্যক্তির ফেসবুক অ্যাকাউন্টও ম্যানিপুলেট করেছে এবং সংবেদনশীল তথ্য বিদেশে পাচার করেছে।
তিনি আরো বলেন, "আমাদের সঙ্গে যা ঘটেছে তা সত্যিই নিন্দনীয়। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা চলে যাওয়ার পর গণভবন থেকে কয়েকটি সিডি উদ্ধার করা হয়েছিল। এই সিডিগুলোর বিষয়বস্তু এতটাই ক্ষতিকর যে, প্রকাশিত হলে অনেক রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যেতে পারে। এই সিডিগুলো শেখ হাসিনার কাছে ছিল। সেগুলো ধ্বংস করা উচিত।"
অনুষ্ঠানের সঞ্চালক ফাহিম মাশরুর বলেন, "এ ধরনের পরিস্থিতিতে আইনি পদক্ষেপের সুযোগ থাকলেও, কোনো ভুক্তভোগীকে সেই সুযোগ নিতে দেখা যায়নি। এ বিষয়ে কীভাবে সমাধান খুঁজে বের করা যায় তা আমাদের বিবেচনা করতে হবে।"
আলোচনায় রাজনৈতিক বিশ্লেষক জাহেদ উর রহমান, সাংবাদিক গোলাম মুর্তজা, আশরাফ কায়সার, জাকারিয়া সোয়াপান এবং রাজনীতিবিদ জুনায়েদ সাকিসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।