আনসার–শিক্ষার্থী সংঘর্ষে সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহসহ অন্তত অর্ধ শতাধিক আহত
বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ সচিবালয়ের সামনে তাকে এবং আরও কয়েকজনকে আটকে রাখা হয়েছে বলে বার্তা পাঠানোর পর আজ রবিবার (২৫ আগস্ট) রাতে বাংলাদেশ আনসার ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় প্রথম আলোর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আসিফ হাওলাদারসহ অন্তত অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়েছে।
সর্বশেষ খবর অনুযায়ী, সচিবালয়ের রাস্তায় অন্তত ২০ হাজার শিক্ষার্থী জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করছেন। তারা 'হৈ হৈ রই রই, আনসাররা গেলি কই' বলে স্লোগান দেন। রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস, হাসনাত আব্দুল্লাহ সচিবালয় থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।
জানা যায়, সেনাবাহিনীর পাহারায় সচিবালয়ে আটকে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বের করা হয়।
এসময় শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে উপদেষ্টা নাহিদ বক্তব্য দেন।
তিনি বলেন, 'যারা দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করেছেন তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। যারা শিক্ষার্থীদের উপর আঘাত করেছে তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।'
আহত ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী আব্দুল কাদের টিবিএসকে বলেন, 'আমাদেরকে আচমকা এসে হামলা করে তারা।মারতে মারতে আমাকে মাটিতে ফেলে দেয়। মাটিতে ফেলে অন্তত ৫ মিনিট আমাকে বুট দিয়ে আঘাত করে কয়েকজন মিলে। তাদের হামলায় আমি আমার পেট, গলা, মাথা, নাকে অনেক চোট পাই।'
তিনি আরও বলেন, 'মারার পরেও আমার হুঁশ ছিল। তাদের একজন আমার পকেট থেকে আমার ওয়ালেটটা নিয়ে নেয়। আমার ওয়ালেটে দুইহাজারের বেশি টাকা, দুইটি ব্যাংকের এটিএম কার্ড ও আমার যবতীয় পরিচয়পত্র ছিল। এরপর কয়েকজন মিলে রিকশাতে করে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যায়।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী মনিরুল হাসান সাঈদ টিবিএসকে বলেন, 'সমন্বয়ক হাসনাত ও সারজিসকে আটকে রাখার খবর পেয়ে আমরা বিভিন্ন হলের শিক্ষার্থী সচিবালয়ের দিকে যাই। ততক্ষণে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। সেখানে গিয়ে আমরা দেখি একজন নারী আনসার আহত হয়ে পড়ে আছেন। তাকে নিরাপদে আনসারদের হাতে ফিরিয়ে দিতে আমরা কয়েকজন বন্ধু এগিয়ে যাই। তখন উপস্থিত আনসাররা আমাদের ওপর হামলা করে। আমাদের কয়েকজনকে আঘাত করে। তারপর কয়েকজন নারী আনসার তাদের বাধা দিলে আমরা ফিরে আসতে সক্ষম হই।'
শিক্ষার্থীরা অবস্থান নেওয়ার পর আনসার সদস্যরা পালিয়ে যান। জানা গেছে, সেখানে ১০ হাজারেরও বেশি আনসার সদস্য ছিলেন।
এদিন সন্ধ্যায় হাসনাত আবদুল্লাহ দাবি করেন, আনসারদের দাবি মেনে নিলেও সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আমিনুল হক সচিবালয়ের গেট অবরোধে উসকানি দিয়েছেন।
এক ফেসবুক পোস্টে হাসনাত শিক্ষার্থীদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে উপস্থিত হওয়ার আহ্বান জানান।
তিনি লেখেন, 'সকলে রাজুর কাছে আসুন। আনসারের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফেরানোর চেষ্টা চলছে। তাদের দাবি মেনে নেওয়া সত্ত্বেও আমাদের সবাইকে সচিবালয়ে আটকে রাখা হয়েছে।'
এই পোস্ট দেখে এবং সচিবালয়ে আনসারের একদল সদস্য বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, সমন্বয়ক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ অনেককে আটকে রেখেছেন— এমন খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে টিএসসির রাজু ভাস্কর্যে জড়ো হন শিক্ষার্থীরা। আনসার সদস্যদের প্রতিহত করতে তারা মিছিল নিয়ে সচিবালয় এলাকায় যান। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
আমাদের প্রতিনিধিদের তথ্যমতে, এসময় আনসার সদস্যরা কয়েকজন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারধর করে। সচিবালয়ের গেটটি সেসময় আনসার সদস্যদের দখলে ছিল। শিক্ষার্থীরা পিছু হটতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যে বিভিন্ন দিক থেকে আরও শিক্ষার্থী জড়ো হতে থাকে।
এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে আলোচনার পর আনসার সদস্যরা চলমান আন্দোলন স্থগিত করে কাজে ফিরতে সম্মত হন।
বৈষম্য বিরোধী আনসার সদস্যদের সমন্বয়ক নাসির মিয়ার নেতৃত্বে আনসার কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দল সচিবালয়ে উপদেষ্টার কাছে তাদের অভিযোগ জানাতে যান। এরপর উভয়পক্ষের বৈঠকের পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
চাকরি জাতীয়করণের দাবিতে দুদিন ধরে আন্দোলন করছেন আনসার সদস্যরা। তাদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে বৈষম্যের শিকার। তাদের আশ্বাস দেওয়ার পরও চাকরি জাতীয়করণ করা হয়নি। দাবি আদায়ের জন্য আজ রোববার দুপুর ১২টার পর সচিবালয়ের বিভিন্ন ফটকে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন আনসার সদস্যরা। তাদের অবস্থানের কারণে সচিবালয়ে কেউ ঢুকতে বা বের হতে পারছিলেন না।
তাদের চাকরি জাতীয়করণের দাবির বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা প্রতিনিধি দলকে আশ্বস্ত করেন যে বিষয়টি 'সুপারিশ কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।'