রেকর্ডের মালা গেঁথে বীরল কীর্তিতে নাম তুললেন লিটন-মিরাজ
২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পর একটি দল কতোটা দূরে দৃষ্টি দিতে পারে? হয়তো ১০০ রানও তখন অনেক দূরের পথ। কিন্তু লিটন কুমার দাস ও মেহেদী হাসান মিরাজ অন্য গল্প লিখতে নেমেছিলেন। যেন ধ্বংসস্তূপ থেকে ফিনিক্স পাখি হয়ে উড়তে চেয়েছিলেন এ দুজন। তাদের জুটি ও নিজেদের ইনিংস শেষে সেটা মনে হতেই কারও কাছে। আর এতে যেসব কীর্তিতে বাংলাদেশের এই দুই ক্রিকেটারের নাম উঠেছে, সেখানে নেই আর কেউ।
হ্যাঁ, টেস্ট ক্রিকেটের দীর্ঘ ইতিহাসেই এমন কীর্তি গড়তে পারেননি কেউ, কখনও দেখা যায়নি এমন জুটিও। রাওয়ালপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টেস্টের প্রথম ইনিংসে লিটন ও মিরাজের কল্যাণেই বড় ব্যবধানে পিছিয়ে পড়তে হয়নি বাংলাদেশকে। স্বাগতিকদের ২৭৪ রানে অলআউট করা বাংলাদেশের ইনিংস থামেন ২৬২ রানে, ১২ রানের ব্যবধান। যা নিয়ে আফসোস থাকার কথা নয় সফরকারীদের।
পাকিস্তানের দুই পেসার খুররাম শাহজাদ ও মীর হামজার তোপে ২৬ রানেেই ৬ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। একে একে ফিরে যান জাকির হাসান, সাদমান ইসলাম অনিক, নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসানরা। খাদের কিনারে চলে যাওয়া দলের হাল ধরে সপ্তম উইকেটে ১৬৫ রানের জুটি গড়েন লিটন ও মিরাজ।
টেস্টে সপ্তম উইকেটে এটা বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি, টেস্টের ইতিহাসে এরচেয়ে বড় রানের জুটি আরও অনেক আছে। তবে অবস্থা বিবেচনায় লিটন-মিরাজের জুটিটাই সর্বোচ্চ এবং সেরা। ৫০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানোর পর ১৫০ বা এরচেয়ে বেশি রানের জুটি গড়েছেন বাংলাদেশের এই দুই ব্যাটসম্যান, যা টেস্টের ইতিহাসে আগে দ্বিতীয়টি নেই।
রেকর্ডগড়া এই জুটিতে মিরাজের অবদান ৭৮ রান। প্রথমবারের মতো টানা তিন ইনিংসে হাফ সেঞ্চুরি করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ১২৪ বলে ১২টি চার ও একটি ছক্কায় তার ইনিংসটি সাজান। এই ইনিংস দিয়ে বিরল এক রেকর্ডে নিজের নাম তোলেন মিরাজ। টেস্টের দীর্ঘ ইতিহাসে ৩০ রানের নিচে ৬ উইকেট হারানো দলের পক্ষে আটে নেমে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান এখন তিনি।
ধ্বংস্তূপে দাঁড়িয়ে টেস্ট ক্যারিয়ারের চতুর্থ সেঞ্চুরি তুলে নেওয়া লিটন ২২৮ বলে ১৩টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৩৮ রানের মহাকার্যকর ইনিংস খেলেন লিটন। দুই বছর দুই মাস ও ১৮ ইনিংস পর করা সেঞ্চুরিতে জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার ও ইমরুল কায়েসকে ছাড়িয়ে যান তিনি। দলকে বাঁচানো ইনিংসের সুবাদে লিটনের নাম ওঠে দারুণ এক কীর্তিতে।
টেস্টের ইতিহাসে দলের রান ৫০ এর নিচে থাকা অবস্থায় ছয়-সাতে নেমে তিনটি সেঞ্চুরি করা একমাত্র ব্যাটসম্যান তিনি। বাকি দুই ফরম্যাটে ইনিংস উদ্বোধন করলেও টেস্টে ছয়-সাত নম্বরে ব্যাটিং করেন বাংলাদেশের এই ব্যাটসম্যান। লিটনের আগের তিন সেঞ্চুরির একটি পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করে। বাকি দুটির একটি ছয় ও আরেকটি সাতে ব্যাটিং করে। ৪৩ টেস্টের ৭৪ ইনিংসে চারটি সেঞ্চুরি ও ১৭টি হাফ সেঞ্চুরিসহ ৩৬.৮৭ গড়ে ২ হাজার ৬৫৫ রানের মালিক লিটন।